Thursday, October 30, 2025
HomeScrollAajke | SIR লাগু হতেই আ*ত্ম*হ*ত্যা শুরু বাংলায়, এর শেষ কোথায়?
Aajke

Aajke | SIR লাগু হতেই আ*ত্ম*হ*ত্যা শুরু বাংলায়, এর শেষ কোথায়?

সাধারণত ভোটের আগে বছর দু'য়েক ধরে SIR হয়ে থাকে, কিন্তু এবার এত তাড়াহুড়ো কেন?

‘একটি গাছ একটি প্রাণ’- এই কথাটা তো আমরা জানি। কিন্তু নির্বাচনের আগে এসআইআর বা ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন নিয়ে ঘটনা যেদিকে গড়াচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে এই কথা বলতে না হয় যে, ‘একটি ভোট একটি প্রাণ’। হ্যাঁ, এসআইআর নিয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গে। এরকমটাই অভিযোগ তৃণমূলের। হ্যাঁ, আত্মহত্যা করছে মানুষ এবং মনে রাখার মতো বিষয় এই যে, তাঁরা কিন্তু বয়স্ক। তার মানে, এসআইআর বৃদ্ধ ও প্রৌঢ়দের কাছে নিরাপত্তাহীনতার প্রতীক হয়ে দেখা দিচ্ছে। কতজন মারা যাচ্ছে, এটা কোনও কথাই নয়। একটি মানুষের মৃত্যুর গুরুত্বও কিন্তু অপরিসীম। তার দায় নির্বাচন কমিশন কি নেবে? তৃণমূল কংগ্রেস এভাবেই আক্রমণ শানাচ্ছে নির্বাচন কমিশনের দিকে। কিন্তু এসআইআর নিয়ে গণ্ডগোল তো আজকে শুরু হয়নি। তৃণমূলের ডেরেক ও ব্রায়েন বলেছেন, বিহারে মহড়া চালানোর পর এবার পশ্চিমবঙ্গে লাগু হল এসআইআর। পশ্চিমবঙ্গের কথায় আসছি। আগে বিহারের ঘটনাটা একটু দেখা যাক।

ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনে বিহারে বাদ গিয়েছেন ৪৭ লক্ষ মানুষ। ভোটার সংখ্যা কমেছে প্রায় ছয় শতাংশ। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট ৪ নভেম্বর শুনানি করবে। মানে, ভোটের দু’দিন আগে। সেই শুনানি কি আদেও বিহার ভোটে কোনও প্রভাব ফেলতে পারবে? এখন কথা হল, এই যে ৪৭ লক্ষ লোক বাদ গিয়েছে, তাঁরা কেন বাদ গিয়েছে, তার কোনও স্পষ্ট কারণ কিন্তু নির্বাচন কমিশন এখনও পর্যন্ত জানায়নি। কমিশন বারবার করে ফর্ম সিক্স-এর কথা বলছে। কিন্তু বিহারে ফর্ম সিক্স দিয়ে কতজন নতুন ভোটারের নাম তালিকায় উঠেছে, তাও কিছু জানা যাচ্ছে না। এও জানা যাচ্ছে না, নথি না থাকার কারণে কারা বাদ পড়েছে। কিন্তু যেটা জানা যাচ্ছে, সেটা ভারতের গণতন্ত্রের জন্য হয়তো খুব ভালো নয়।

বিহারে গত তিনটি নির্বাচনই কাদের মতামত সরকার গড়ে দিয়েছিল? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মহিলা ভোটাররা। এটা বলতে কেউ দ্বিধা করছেন না যে, ২০২০ সালে নীতীশ কুমারকে প্রধানত মহিলা ভোটই বাঁচিয়েছিল। গত দু’দশকের বিহারে নারীকেন্দ্রিক নীতির সাফল্য কিন্তু প্রমাণিত। এক, মুখ্যমন্ত্রীর সাইকেল প্রকল্প। দুই, স্থানীয় সংস্থায় পঞ্চাশ শতাংশ আসন সংরক্ষণ, যার ফলে মহিলাদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বেড়েছে এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ মদ নিষেধাজ্ঞা। মহিলাদের বহুদিনের প্রতিবাদ আর দাবি সফল হয়েছে এই সরকারি কানুনে।

কিন্তু বিহারের এসআইআরে এবার ধাক্কা খেয়েছেন মহিলা ভোটাররা। জানুয়ারি ২০২৫ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত যে পরিমাণ ভোটার ছাঁটা হয়েছে, তার মধ্যে ৫৯.৬০ শতাংশই নারী। কিন্তু কেন? মহিলা ভোটাররা বাদ পড়ার একটা কারণ তাঁদের নথিপত্র সংক্রান্ত দুর্বলতা। বার্থ সার্টিফিকেট, স্কুল সার্টিফিকেট, ম্যারেজ সার্টিফিকেট – এসব মহিলাদের কাছে সবসময় থাকে না। এছাড়াও বিহারে বিয়ের পর মহিলারা গ্রাম পরিবর্তন করেন, পদবী পরিবর্তন করেন, এমনকি নামের বানানও বদলে যায়। যে কারণে অটোমেটিক ডুপ্লিকেশন অ্যালগরিদম ভুল ভাবে একতরফা মেয়েদের ডুপ্লিকেট হিসেবে চিহ্নিত করে। কিছু করার নেই। এসআইআর সাফসুতরো করাকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে, ভোটাধিকারকে নিশ্চিত করাকে নয়। এছাড়াও অনলাইনে নিজের নাম যাচাই করা বা অভিযোগ জানাতে ক’জনই বা পারেন? কিন্তু এর ফলে কী হয়েছে? বিহারে গত তিন দশকের মহিলা ভোটারদের ট্রেন্ডকে দাবিয়ে ফের মাথা তুলছে সেই পুরুষতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য, যারা ভোটের মার্জিন নিয়ন্ত্রণ করায় বিশ্বাসী। এর ফলে ধাক্কা খাচ্ছে কে? ভারতের গণতন্ত্র।

আরও পড়ুন: Aajke | শুভেন্দুর সংখ্যালঘু প্রেম, বিষ মাখানো হাত, দিচ্ছে সওগাত?

বোঝা যাচ্ছে, এসআইআর ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ডিএমকে কেন এই উদ্যোগকে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছে। কেরল সিপিএম বলছে, কমিশন গণতান্ত্রিক নিয়মের প্রতি অবজ্ঞা দেখাচ্ছে। আর কংগ্রেস তো কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে লাগাতার প্রশ্ন তুলেই যাচ্ছে। বিরোধীদের দাবি, এসআইআর আসলে ভোটারের নাম বাতিল ও শাসকদলের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসাধনের হাতিয়ার।

রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসাধন সে তো যে কোনও দলেরই প্রাথমিক অ্যাজেন্ডা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কীভাবে? পশ্চিমবঙ্গে আমরা দেখেছি, বঙ্গ বিজেপির মনুষ্যত্বহীন হিংস্র চেহারা। শুভেন্দু তো আগেই চেঁচাচ্ছিলেন এবার শমীকও তাঁর সাথে গলা মিলিয়ে বলছেন, এক কোটি বাদ যাবে। এক কোটি সংখ্যাটার মানে বিজেপি নেতারা জানেন? তাঁরা জানেন, পশ্চিমবঙ্গে ঠিক কতজন মানুষ শহরের সুবিধাভোগী শ্রেণির মধ্যে পড়েন না? পশ্চিমবঙ্গের গরিব, নিরক্ষর মানুষ এসআইআর-এর নামে কীভাবে মুখ কালো করে ঘুরছে, তার খবর রাখেন বিজেপি নেতারা? আরে নিজেদের ভোট ব্যাঙ্কের দিকে তাকান। যে মতুয়া আর নমশূদ্র ভোট আপনাদের হাতের মুঠোয় বলে ভাবছেন, সেই মতুয়াদের অস্তিত্বই তো নড়বড় করে দিয়েছে এসআইআর। হ্যাঁ, এরকমটাই মনে করছে তাঁরা। আরে আপনাদেরই গেরুয়া পতাকাধারী মতুয়া নেতারা কী বলছেন? অসীম সরকার তো বলেইছেন, দরকারে দলকেও দেখে নেওয়া হবে। আর এসবের পর পশ্চিমবঙ্গে যখন এসআইআর লাগু হল, তখন কী দেখা যাচ্ছে? সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যা করছে মানুষ। শেষ জবানিতে লিখে যাচ্ছে, ‘আমার মৃত্যুর জন্য এসআইআর দায়ী’। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই যখন এই আত্মহত্যার কথা বলছেন, তখন মেনেই নিতে পারি প্রশাসনিক প্রধানের এই বক্তব্য যাবতীয় তদন্তের ফলাফল। এখানে প্রশ্ন একটাই, এসআইআর সাধারণত হয়ে থাকে ভোটের আগে বছর দু’য়েক ধরে। এ তো কমিশনের রুটিন কাজ। কিন্তু এবার এতো তাড়াহুড়ো কেন? ভয় দেখিয়ে ক্ষমতা দখল করতে চাইছে বিজেপি?

এই তাড়াহুড়োর ফলেই কি আত্মহত্যা করলেন উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটির প্রদীপ কর? সুইসাইড নোটে তিনি তো সরাসরি লিখে গিয়েছেন এসআইআর-এর নাম। আর আজ বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন কোচবিহারের বৃদ্ধ খায়রুল শেখ। বঙ্গ বিজেপি এই ঘটনা নিয়ে কিছু কি বলবে? নাকি মানুষের বাঁচা মরায় তাদের কিছুই এসে যায় না? গদি পেলেই হল।

Read More

Latest News