Wednesday, September 3, 2025
HomeScrollAajke | সৈন্যবাহিনীর হাতে বাঁশ, কারা ধরাল? কারা এর পিছনে?

Aajke | সৈন্যবাহিনীর হাতে বাঁশ, কারা ধরাল? কারা এর পিছনে?

এটা তাঁদেরকে অপমান করা নয়? দেশের জওয়ানদের এই অপমান করার অধিকার দিল কে?

আমাদের ফেকুবাবুর মতো পেট চেপে মিলিটারি আউটফিট গায়ে চড়ানো আর্মি, নেভি, এয়ারফোর্স নয়, সত্যিকারের জওয়ানদের আমরা দেখেছি যুদ্ধে যেতে, মৃত্যুর সঙ্গে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নিজের ডিউটি পালন করতে। কেউ নেই তো একাই একটা অস্ত্র হাতে রুখে দিয়েছেন শত্রুকে এমন বীরত্বের কথা আমরা বহু বহু শুনেছি। কারগিল যুদ্ধের সময়ে তার কিছু কিছু আমাদের অনেকে দেখেছেন। কিন্তু শুধু যুদ্ধ তো নয়, যুদ্ধের বাইরেও জওয়ানদের দেখেছি ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগে, বন্যায় সারি দিয়ে আক্রান্ত মানুষদের বের করে আনতে, ধস সরিয়ে রাস্তা সাফ করতে, ইন ফ্যাক্ট যাঁরা লাদাখ গিয়েছেন তাঁরা জানেন, সামান্যতম অসুবিধে হলে ওখানে ওই আর্মি ক্যাম্প থেকে সাহায্য চলে আসে মুহূর্তের মধ্যে। সুনামির সময়ে এই জওয়ানদের দেখেছি দিনরাত নাওয়া খাওয়া ছেড়ে বিপন্ন মানুষকে উদ্ধার করে নিয়ে আসতে, ওই জওয়ানদের এক মেক-শিফট ক্যাম্পেই জন্ম নিয়েছিল এক শিশু। ওই সুনামিতে গলা জলে আটকে পড়া এক প্রেগন্যান্ট মহিলাকে উদ্ধার করে আনার পরে তিনি ওই ক্যাম্পে জন্ম দিয়েছিলেন এক কন্যাসন্তানের, সেই সুনামি আজ ২১ বছরের যুবতী, কিন্তু সে জানে ওই জওয়ানরা না থাকলে তার পৃথিবীর আলো দেখাই সম্ভব ছিল না। আজ সেই জওয়ানদের আমরা দেখলাম কলকাতায় মেয়ো রোডে, প্যান্ডেলের বাঁশ খুলছেন তাঁরা। হ্যাঁ তাঁদের ট্রেনিংয়ের সময়েই শেখানো হয়, প্রশ্ন না করেই নির্দেশ পালন করতে, হ্যাঁ আর্মি নেভি, এয়ারফোর্সের এটাই রেওয়াজ। তো তাঁদের সাতসকালে মনে হল আর তাঁরা মেয়ো রোডের মুখে এসে প্যান্ডেল খুলতে বসলেন তা তো নয়, তাঁরা নির্দেশ পেয়েছিলেন, এসেছিলেন। সেটাই বিষয় আজকে, সৈন্যবাহিনীর হাতে বাঁশ, কারা ধরাল? কারা এর পিছনে?

দেশজুড়ে বাংলাতে কথা বললেই বাংলাদেশি বলে পেটানোর, জেল হাজতে পোরার, বস্তি ভেঙে উজাড় করার এক আধটা নয়, বহু ঘটনা সামনে আসছে। কিন্তু এটাও সত্যি মাননীয় পবিত্র সরকারের সঙ্গে আমি ১০০ শতাংশ একমত যে ভিন রাজ্যে বাংলা বলা ডাক্তার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, যাঁরা পবিত্রবাবুর ছাত্র, পরিচিত, মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়েদের গায়ে এখনও হাত পড়ছে না, হয়তো তাঁরা বাংলাতে কথাই বলেন না, ইউ নো কান্ট ফাইন্ড দ্য অ্যাপ্রোপ্রিয়েট বেঙ্গলি ওয়ার্ড, সেইরকম আর কী। কিন্তু অবশ্যই হাত পড়ছে গরিব নিম্নমধ্যবিত্ত প্রবাসী বাঙালি বা পরিযায়ী শ্রমিকদের গায়ে।

এখন আগুনের আঁচ যতক্ষণ পবিত্রবাবু বা সেইসব সুশীল দেড়েল কবি লেখক বা লেখিকাদের গায়ে না পড়ছে ততক্ষণ তাঁদের প্রতিবাদ তো আমরা দেখতে পাব না কিন্তু বহু মানুষ এই বর্বর নোংরা অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, রাজ্য সরকারে থাকার সুবাদে তৃণমূল দল এই বিরোধিতাকে বিজেপি বিরোধী এক প্রচারের মাত্রা দিয়েছে, যা খুব স্বাভাবিক। আর সেই প্রচারের অঙ্গ হিসেবেই মেয়ো রোডে গান্ধীমূর্তির তলায় প্যান্ডেল খাটিয়ে তাঁদের প্রচার অভিযান চলছিল। শুনলাম এর জন্য তাঁরা পারমিশন ইত্যাদি নিয়েছিলেন, ওই আর্মির কাছ থেকে যারা নাকি ওই এলাকার মালিক। কেন? কেউ জানে না। ওই এলাকাতে গাড়ি দুর্ঘটনা হলে কে আসবেন? সেনাবাহিনীর জওয়ান না পুলিশ? যাঁরা আহত তাঁদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে সরকারি হাসপাতাল না কমান্ড হসপিটাল? ওই এলাকাতে রাতে ধর্ষণ বা খুন হলে কার দায়? রাজ্য সরকারের না আর্মির? ওই এলাকার রাস্তাঘাট রক্ষণাবেক্ষণ সাফ সাফাই কারা করেন? আর্মি না বাংলার সরকার? তাহলে? ভাত দেওয়ার মুরোদ নেই কিল মারার গোঁসাই? রাজ্য রাজধানীর ফুসফুস এই ময়দান এলাকার মালিক হল স্বরাষ্ট্র দফতর? অমিত শাহ? তাঁর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে তবে তাঁর বিরোধিতায় সমাবেশ করা যাবে? এসব প্রশ্ন তো আছেই। কিন্তু তারপরেও বলা হচ্ছে যে প্রয়োজনীয় অনুমতি ছিল। ওদিকে আর্মির ঠিকেদার বিজেপির বঙ্গ নেতারা বলছেন ছিল না। তো এর সহজ মীমাংসা তো হতেই পারত, আর্মি কর্তারা রাজ্যপালকে চিঠি দিতে পারতেন, তিনি তো বসেই রয়েছেন হাতে কাঠি নিয়ে। স্বরাষ্ট্র দফতর থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়াই যেত। স্বরাষ্ট্র দফতর আদালতে যেতেই পারত, সেখানেও তো তাদের মতো করেই ন্যায়বিচার পেতেই পারত। এসব না করে সেনাবাহিনীর জওয়ানদের পাঠানো হল বাঁশ খুলতে? এটা তাঁদেরকে অপমান করা নয়? দেশের জওয়ানদের এই অপমান করার অধিকার দিল কে? কারা সেই উজবুক যারা দেশের জওয়ানদের রাজনৈতিক ইচ্ছাপূরণের কাজে লাগাচ্ছে? আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেষ করেছিলাম যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জওয়ানদের এক রাজনৈতিক প্রচার সমাবেশের প্যান্ডেলের বাঁশ খোলানোর কাজ দিল কারা? এটা কি আদতে সেনাবাহিনীকেই অপমান করা নয়? সেনাবাহিনীর জওয়ানদের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির কাজে লাগানোটা কি অসাংবিধানিক নয়? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।

আমরা বার বার দেখেছি রাজ্য রাজধানীর এই ফুসফুস, এই ময়দানকে নিয়ে এই নোংরা রাজনীতির খেলা। অনুমতির নামে আসলে এক ধরনের নিয়ন্ত্রণের রাজনীতি, জাতির জনক যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন সেই পবিত্র ভূমিতে আমার অহিংস প্রতিবাদের অধিকার আছে, আর এ নিয়ে এখনই সরব হওয়া উচিত। রাজ্য চলবে নির্বাচিত সরকারের নির্দেশে, মধ্যে ক’টা পাওয়ার সেন্টার তৈরি করে এই নোংরা খেলা বন্ধ হোক। তৃণমূল দলের কাছে যদি অনুমতি না থাকে তাহলে তার জন্য আইন আছে আদালত আছে, পুলিশ আছে, কোর্টের রায় আছে, কিন্তু সেই রাজনৈতিক বিরোধিতায় জওয়ানদের টেনে নামানোটা এক বর্বর ইতিহাস হয়ে থেকে যাবে, আমরা তা ভুলব না, ভুলতে দেবও না।

Read More

Latest News