কুঁজোর উপুড় হয়ে শোবার শখ হলে তা নিয়ে আলোচনাও হবে বৈকি। ২০২১-এ এই শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, ‘কত পাবো জানি না, কিন্তু সংখ্যাটা ২০০-র উপরেই হবে’। মানে সত্যিই তো উনি তো টিঁয়া পাখি নিয়ে ফুটপাথে বসা জ্যোতিষী নন, শান্তিকুঞ্জের বড় খোকা, তাই ২০৯ হবে, না ২০৭, নাকি ২৩১ – উনি ঠিক জানতেন না। কিন্তু এটা জানতেন যে, বিজেপি আসন সংখ্যা ২০০ পার করবেই। কী হয়েছিল? ৭৭। মমতা ব্যানার্জীর কল্যাণে তা এখন সম্ভবত ৬৫ থেকে ৬৬-তে ঠেকেছে। তো এবারে তিনি, মানে ওই কাঁথির খোকাবাবু হাঁক দিয়েছেন, ‘বাংলার গর্জন, মমতার বিসর্জন’। আমরা তো বিসর্জন বলতে ওই বাবুঘাটে দুগগা ঠাকুরের বিসর্জনের কথাই জানি। কিন্তু সমস্যা হল, বিসর্জনের পরে আবার সেই দুর্গা নতুন কলেবরে আরও সুন্দর হয়ে হাজির হল বাঙালির পাড়ায় পাড়ায়। আর এখনও পর্যন্ত এবারেও সেই বিসর্জনের কোনও লক্ষণ বাংলার মানুষ দেখতে পাচ্ছেন না। তাতে অবশ্য ‘টাচমি নট’ খোকাবাবুর বয়েই গিয়েছে, স্বপ্ন দেখতে বসে পোলাওতে কি কেউ কম ঘি দেয়? তো সেই কুঁজোর উপুড় হয়ে শোবার স্বপ্ন নিয়েও আলোচনা হওয়া উচিত। সেই উচ্চ হ্যালুশিনেশনের প্রভাবেই যদি ধরেও নিই যে, শান্তি কুঞ্জের মূর্তিমান অশান্তি হয়ে গেলেন আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, তাহলে কী হবে? অক্টোবরে দুগগাপুজোর সময়ে, মানে মোদিজির ওই নবরাত্রির সময়ে কলকাতায় আরসালান থেকে সাবির, সিরাজ থেকে নিউ আলিয়া বন্ধ থাকবে? দুগগাপুজোয় বাঙালি লাল লাল মাংসের ঝোল খাবে না? সেটাই বিষয় আজকে, শুভেন্দু ক্ষমতায় এলে দুর্গাপুজোয় বিরিয়ানি বাদ?
হ্যাঁ, যদির কথা নদীর ধারে না পাঠিয়ে ধরেই নিলাম যে, শুভেন্দু অধিকারী উঠে পড়েছেন নবান্নের তের তলায়। তাহলে কী কী হবে? সামান্যতম বিরোধীতায় বুলডোজার পাঠানো হবে বিরোধী প্রতিবাদী মানুষজনের বাড়িতে? কারণ এখন সেটাই তো যে কোনও রাজ্যের দস্তুর। এক দরিদ্র প্যাটিস বেচনেওয়ালাকে মারধর করেছে যে জানোয়ারেরা, তাদের বাড়ির দরজায় তো বুলডোজার যায়নি, ইললিগাল কনস্ট্রাকশনের নাম করে তাদের বাড়ি তো ভাঙা হয়নি, আইনের ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা জামিন পেয়েছে। শুভেন্দুবাবু মুখ্যমন্ত্রী হলে কি গ্রেপ্তার হবে না? বিজেপি শাসিত রাজ্যের নিয়, মেনেই বুলডোজার চলবে? ফুটপাথে সমস্ত খাবারের দোকানের নামের তলায় তত বড় করেই কি লিখতে হবে দোকান মালিকের নাম, যাতে তারা হিন্দু না মুসলমান না খ্রিস্টান বোঝা যায়? কারণ সেটাই তো আপাতত দস্তুর। শুভেন্দুবাবুরা ক্ষমতায় এলেই কি নবরাত্রি, কালীপুজো থুক্কুড়ি দেওয়ালি বা দোল নয় হোলিতে নিরামিষ হয়ে উঠতে হবে সারা কলকাতাকে? আরসালান থেকে সাব্বির সব বন্ধ থাকবে সে ক’দিন। বন্ধ থাকবে পার্ক সার্কাস বা আলিমুদ্দিনের পাশের মাংসের দোকানগুলো? বন্ধ থাকবে রহমানিয়া বা হাজি মিট শপ? এগুলো তো জানতে হবে।
আরও পড়ুন: Aajke | হাজির ভোটপাখিরা, আদি-নব্য-তৎকাল, বঙ্গ বিজেপির হাতে রইল পেনসিল
আমরা কেউ স্বপ্নেও কি ভেবেছিলাম যে এই বাংলাতে কয়েকজন বাঙালি বীরপুঙ্গব একজন চিকেন প্যাটিসওয়ালাকে ঘিরে ধরে মারবে, তাঁর প্যাটিসের বাক্স ভেঙে দেবে। ভাবিনি, কিন্তু হল তো। কখন হল? যখন বিজেপি রাজ্যে ৬৫ থেকে ৬৭টা বিধায়ক নিয়ে ডিস্ট্যান্ট সেকেন্ড। তাহলে যখন ক্ষমতায় আসবে তখন কী হবে? ভাবতে পেরেছিলেন বাঙালি মায়ের পেটের কলঙ্ক ঐ তিন কুলাঙ্গারকে প্রাইম টাইমে গ্লোরিফাই করা হবে, বীরের সম্বর্ধনা দেওয়া হবে এই বাংলাতেই? যে সাংবাদিক বা অ্যাঙ্কর সেই কাজ করলেন, তিনি ক’দিন আগেই লাল ঝান্ডা ধরে ঘুরতেন, ভাবতেও পেরেছিলেন গণপিটুনিতে অভিযুক্তদের জামিন দেওয়ার জন্য আদালতে উপচে পড়বে উকিলের দল? তাঁরাও নাকি বাঙালি! হ্যাঁ, এগুলো সবই হয়েছে যখন বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতা তো দুরস্থান ক্ষমতার ধারে কাছেও নেই। এই এরাই যখন ক্ষমতায় আসবেন তখন কী হবে? এই বাংলাতে ২৮ থেকে ২৯ থেকে ৩০ শতাংশ মুসলমান, এটা বিহার নয়, ইউপি নয়, মহারাষ্ট্রও নয়, সেখানে কোথাও ১২, কোথাও ১৪, কোথাও ১০ শতাংশ মুসলমান আছেন। তাহলে কি আমরা এক গৃহযুদ্ধের দিকে রওনা দিচ্ছি আমরা? বাংলার একজন মণীষীর নাম করুন তো যিনি নিরামিষাসি ছিলেন? একজনের! পারবেন না। হিন্দু ধর্মের কথা বললে ভারতে হিন্দু ধর্মের সর্বশ্রেষ্ঠ আইকন বেলুড় মঠে আমিষ খাওয়া চালু করেছিলেন, নিজে এক দিনের বেশি নিরামিষ খেয়ে থাকতে পারতেন না, সেই বাংলায় চিকেন প্যাটিস বিক্রি মানা? আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, এক চিকেন প্যাটিস বিক্রেতাকে মেরে শুভেন্দু অধিকারীর দল বাংলার মানুষকে কী বোঝাতে চাইল? এরা ক্ষমতায় আসলে বাঙালির মাছ-মাংস খাওয়া কি বন্ধ হবে?
সাতমণ তেলও পুড়বে না, রাধাও নাচবে না। ২৬-এর আগে অলৌকিক কিছু ঘটে না গেলে দিদিমণির কামব্যাক নিয়ে কারও কোনও দ্বিমত নেই। হ্যাঁ, শুভেন্দুরও নেই। এখন যা যা বলছেন, সেগুলো হল নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য। এই ২৬-এর নির্বাচনে হেরে গেলে ওনাকে ওই বিজেপি দলও আর পুছবে না, বিজেপি খুব সোজা সাপটা খেলার দল, ক্ষমতা চাই মানে চাই, আর যদি দিতে পারো তাহলে ভালো, না হলে দলে ১৪ থেকে ১৫ থেকে ১৬ নম্বর নেতা হয়ে থেকে যাও। হ্যাঁ, ওনারা নতুন উদ্যমে আবার নিশ্চিত মাঠে নামবেন, কিন্তু সেই মাঠের ক্যাপ্টেন বদলে যাবে। শুভেন্দু অধিকারী ২০২৬-এ হেরে গেলে তাঁর ক্যাপ্টেনশিপ হারাবেন, এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
দেখুন ভিডিও:







