ওয়েবডেস্ক- বিহার বিধানসভা নির্বাচনের (Bihar Assemble Election) আগে SIR ঘিরে বিতর্ক ক্রমশই তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। নির্বাচন কমিশন (Election Commission) ও রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে প্রবল চাপানউতোর তৈরি হয়েছে। আজ বিহার এসআইআর মামলা শুনানি ছিল সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court)। বিহারের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়া ৩.৬৬ লক্ষ ভোটারের তথ্য জমা দিতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট।
এদিন আদালতে সওয়াল জবাব চলাকালীন বিচারপতি সূর্যকান্ত (Justice Suryakant) নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্ন করেন, যাদের নাম বাদ দেওয়া হবে তাদের নাম সেই অঞ্চলের নির্বাচন কমিশনের অফিসের বোর্ডে প্রকাশিত করা হবে, কিন্তু সেটা কেন করা হয়নি?
আইনজীবী মনু সিংভি বলেন, প্রায় ৬০ লক্ষের উপরে নাম বাদ গেছে, কারুর নাম ওই নির্বাচন কমিশনের অফিসের বোর্ডে উল্লেখিত নেই।
আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেন, ৪৭ লক্ষ মোট বাদ দেওয়া হয়েছে। বিহারের জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে কত আবেদন জমা পড়েছে কত আবেদন বাতিল করা হয়েছে এবং কি অবজেকশন ভিত্তিতে বাতিল করা হয়েছে? যাদের নাম বাতিল করা হয়েছে তাদের কোন বিস্তারিত বিবরণের উল্লেখ নেই। জাতীয় নির্বাচন কমিশন খসড়া তালিকাও রয়েছে। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা রয়েছে। সুতরাং দুটিকে ট্যালি করলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে, কাদের নাম রয়েছে বা কাদের নেই।
আরও পড়ুন- দু’দফায় বিধানসভা ভোট হবে বিহারে, ফলঘোষণা কবে? জানাল নির্বাচন কমিশন
বিচারপতি সূর্যকান্তের প্রশ্ন যাদের নাম বাদ গেছে তারা কি কেউ আবেদন জানিয়েছে? জাতীয় নির্বাচন কমিশন এখনও পর্যন্ত কেউ আবেদন করেনি। তবে নমিনেশন জমা দেওয়ার ১০ দিন আগে পর্যন্ত সুযোগ থাকছে। ইতিমধ্যে দু দফায় ভোটের সময়সীমা ঘোষণা করা হয়েছে।
বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী (Justice Jaymalya Bagchi) বলেন, আমরা চাইছি প্রতিটি নাগরিকের যেন গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করার স্বাধীনতা থাকে। সে বিষয়ে যাতে সে বঞ্চিত না হয় সেটাই আদালতের কাছে বিশেষ বিচার্য বিষয়। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী বলেন, যাদের নাম বাদ গেছে তাদের জেলা নির্বাচনী অফিসে বোর্ডে তাদের নাম থাকা উচিত।
প্রশান্ত ভূষণ বলেন, যারা আবেদন করছে, যাদের নাম বাদ যাচ্ছে, কেন বাদ যাচ্ছে তার কোন ডাটাই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত করা হচ্ছে না।
একজন নাগরিক আদালতে চেঁচিয়ে অভিযোগ করেন, আমার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে আমার ভাইয়ের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। আমি আবেদন জানিয়েছি কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি।
মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন (Election Commission) জানিয়েছে যে স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (SIR) নিয়ে বিহারের ভোটারদের কাছ থেকে কোনও অভিযোগ তারা পায়নি। তবে SIR-এর বিরুদ্ধে আবেদনকারীদের উপর আক্রমণের ঘটনায় কেবল দিল্লির মানুষই উদ্বিগ্ন। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা জানানো হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কোনও ভোটারদের অভিযোগ নেই, বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই নিয়ে আক্রমণ শানাচ্ছে।
এদিন সওয়াল-জবাব চলাকালীন বিচারপতি সূর্যকান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, এমন কিছু মানুষ আছে যারা ভারতে অননুমোদিতভাবে বসবাস করবে, তারা সামনে আসতে চাইবে না, তাদের প্রকাশ করা হবে। আমাদের অন্তত এমন লোকদের একটি তালিকা দেওয়া হোক যারা আসলে প্রভাবিত হয়েছে। বিচারপতি বাগচী বলেন, মনে হচ্ছে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা থেকে ৬৫ লক্ষ ভোটার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। আমরা বলেছি যে যেই মৃত বা স্থানান্তরিত হোক না কেন, সে ঠিক আছে, কিন্তু যদি কাউকে বাদ দেওয়া হয়, তাহলে অনুগ্রহ করে নিয়ম ২১ এবং SOP (“স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর) অনুসরণ করে সেটা করা হোক।
বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী বলেন, আমরা আরও বলেছি যে যাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, তাদের তথ্য আপনার নির্বাচনী অফিসে জমা দিন। চূড়ান্ত তালিকাটি সংখ্যার মূল্যায়ন বলে মনে হচ্ছে, সাধারণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে যে অ্যাড-অনগুলির পরিচয় কী? এটি কি মুছে ফেলা নাম নাকি নতুন নাম?
উত্তরে কমিশনের আইনজীবী জানান, সবই নতুন ভোটার।
শুনানির চলাকালীন বিচারপতি সূর্যকান্ত আবেদনকারীদের পক্ষে উপস্থিত আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। জবাবে আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ ৬৫ জনের একটি তালিকা দেন। তিনি বলেন যে তারা হলফনামা দাখিল করতে পারেন।
প্রশান্ত ভূষণ আরও বলেন, চূড়ান্ত ভোটার তালিকা থেকে মুসলিম ও মহিলাদের নাম অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বাদ দেওয়া হচ্ছে।
বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেন, বিহারে SIR সম্পর্কিত কিছু অভিযোগ রয়েছে, তাই আদালত এই কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেছে। তবে অন্যান্য রাজ্যে SIR পরিচালনা করা নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার।
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক পরিচালিত ভোটার তালিকার SIR-এর আগে গত মঙ্গলবার প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় বিহারে মোট ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৪৭ লক্ষ কমে ৭.৪২ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। তবে, ১ আগস্ট প্রকাশিত খসড়া তালিকায় ৭.২৪ কোটি ভোটারের নাম থাকা সত্ত্বেও চূড়ান্ত সংখ্যাটি ১৭.৮৭ লক্ষ বৃদ্ধি পেয়েছে। খসড়া তালিকায় ২১.৫৩ লক্ষ নতুন ভোটার যুক্ত হলেও, সেখান থেকে ৩.৬৬ লক্ষ নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, যার ফলে ১৭.৮৭ লক্ষ নতুন ভোটার তালিকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
দেখুন আরও খবর-