ওয়েব ডেস্ক: কাস্টডি মামলা বিচারাধীন থাকাকালীন শিশুসন্তানকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়া মহিলার ঘটনায় ভারতকে (India) আইনত সাহায্য করতে বাধ্য রাশিয়া (Russia), মন্তব্য করল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। ভারতীয় স্বামীর সঙ্গে সন্তানের অধিকার নিয়ে মামলা সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় সেই ব্যক্তির রাশিয়ান স্ত্রী শিশুকে নিয়ে পলাতক। প্রাথমিকভাবে সাহায্য না মিললেও ভারতের বিদেশ মন্ত্রককে নতুন করে রুশ কর্তৃপক্ষকে এই প্রসঙ্গে সাহায্য করার জন্য আবেদন করার নির্দেশ দিল দেশের শীর্ষ আদালত।
প্রাসঙ্গিক এফআইআর ও সম্পর্কিত তথ্যাদি সংযুক্ত করে রাশিয়ান ফেডারেশনের দূতাবাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রককে আবেদন করার নির্দেশ। একইসঙ্গে রাশিয়ায় ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে কূটনৈতিক স্তরে ওই মহিলা ও শিশুসন্তানের খোঁজখবর করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবীকে অনুরোধ আদালতের।
ভারত সরকার এবং রুশ ফেডারেশনের মধ্যে যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি রয়েছে, সেই মতো ফৌজদারি তদন্তের স্বার্থে ওই মহিলা ও শিশুসন্তানের হদিশ করা রুশ সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে বলে অভিমত আদালতের। কারণ সেই চুক্তিতেই বলা আছে, আইনগত ব্যাপারে দুই পক্ষই একে অপরকে যতদূর সম্ভব সহযোগিতা করবে। বিশেষত তদন্তের ক্ষেত্রে। রায়ে উল্লেখ বিচারপতি সূর্য কান্ত (Justice Surya Kant) ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর (Justice Joymalya Bagchi)।
আরও পড়ুন: রেখা গুপ্তার নিরাপত্তার দায়িত্ব থেকে সরানো হল সিআরপিএফ-কে!
শিশুটির অধিকার চেয়ে আদালতে মামলা করেন ওই রুশ মহিলাই। এই প্রেক্ষাপটে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ঐশ্বর্য ভাটি আদালতকে জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক রুশ দূতাবাসে এই প্রসঙ্গে সাহায্যের আবেদন করেছিল। কিন্তু তারা জানায়, কোনও ব্যক্তি বিশেষের ব্যাপারে তথ্য দিতে গেলে সেই ব্যক্তির অনুমতি প্রয়োজন। যদিও ওই মহিলার হদিশ মিলছে না। তিনি আরও জানান, ওই মহিলার বিরুদ্ধে অপহরণ, মূল্যবান তথ্যের জালিয়াতি, ডিজিটাল ও ইলেকট্রনিক রেকর্ডের জালিয়াতি, এবং ফৌজদারি চক্রান্তের অভিযোগে এফআইআর হয়েছে। ১১ অগাস্ট তাঁর বিরুদ্ধে ব্লু কর্নার নোটিস জারি হয়েছে। কর্তব্যে গাফিলতির দায়ে দিল্লি পুলিশের (Delhi Police) এক এএসআই-এর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছে।
বিচারপতি সূর্য কান্তের মন্তব্য, মস্কোয় অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস কেন তার দায়িত্ব পালন করছে না? তাদের পক্ষেই এই ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার এবং হদিশ করার ভালো সুযোগ রয়েছে
উল্লেখ্য, ভিক্টোরিয়া বসু এই বিতর্ক শুরু হওয়ার পর দিল্লির রুশ দূতাবাস থেকে গোপনে ৮ জুলাই বিহারে এবং সেখান থেকে নেপালে পালান। সেখান থেকে বিমানে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি হয়ে ১৬ জুলাই পৌঁছন রাশিয়া। যদিও শিশুটির ভারতীয় পাসপোর্ট আদালতে জমা রয়েছে। অর্থাৎ, শিশুটি এই মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় আদালতের হেফাজতে থাকার কথা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানায়, দিল্লি পুলিশের ব্যর্থতার জন্যই ওই মহিলা শিশুটিকে নিয়ে পালাতে সক্ষম হয়েছে। এই ব্যাপারে রুশ দূতাবাসেরও সহযোগিতা থাকতে পারে।
প্রসঙ্গত, ওই মহিলার প্রকৃত পরিচয় নিয়ে সন্দেহের পরিবেশ তৈরি হওয়ার পরেই এই মামলা। আদালতের নির্দেশে সপ্তাহে তিনদিন মায়ের কাছে ও বাকি চার দিন বাবার কাছে শিশুটি থাকবে বলে আদালত নির্দেশ দেয়। কিন্তু ২২ মে ওই ব্যক্তি আদালতকে জানান, ৭ জুলাই থেকে স্ত্রীর খোঁজ মিলছে না, ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না। শিশুটিকে মেডিক্যাল চেকআপের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়নি। স্কুলেও পাঠানো হয়নি। প্রাথমিক তদন্তে দেখা যায়, ৪ জুলাই দিল্লির রুশ দূতাবাসের পিছনের দরজা দিয়ে ওই মহিলা শিশুটিকে নিয়ে ঢুকছেন। সঙ্গে এক রুশ ডিপ্লোম্যাট ছিলেন। যার সঙ্গে মহিলাটির বিশেষ সম্পর্ক আছে বলে মনে করা হচ্ছে। আর ১৭ জুলাই আদালতকে জানানো হয়, ওই মহিলা এবং শিশুটি উধাও।
দেখুন অন্য খবর: