নয়া দিল্লি: বিজেপির (Bjp) প্রাক্তন কেন্দ্রীয়-মন্ত্রী, অশীতিপর সাংবাদিক এবং লেখক অরুণ শৌরি তাঁর সাম্প্রতিক বই “দ্য নিউ আইকন, সাভারকর অ্যান্ড দ্য ফ্যাক্টস”-এ লিখেছেন, বিনায়ক দামোদর সাভারকার তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এমন অসংখ্য দাবি করেছেন যা মিথ্যা। কী কী মিথ্যা রয়েছে বইটিতে?
মিথ্যা-১
বিনায়ক দামোদর সাভারকর তখনও হিন্দুত্ববাদী নেতা হননি, একজন বিপ্লবী। ১৯০৯ সালে নাসিকের জেলাশাসক জ্যাকসনকে বিপ্লবীরা যে পিস্তল দিয়ে হত্যা করেছিল সেই পিস্তল গোপনে ভারতে পাঠিয়েছিলেন সাভারকর। সেই অভিযোগেই ১৯১০ সালে ২৪ বছরের আইনের ছাত্র সাভারকরকে একটি স্টিমারে করে লন্ডন থেকে গ্রেপ্তার করে ভারতে আনা হচ্ছিল। স্টিমার যখন ফ্রান্সের মার্সেই বন্দরে পৌঁছলে স্টিমার থেকে সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন সাভারকর। সাভারকার তাঁর ছদ্মনামে লেখা আত্মজীবনীতে লিখেছেন এবং পরে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন অটলবিহারী বাজপেয়ী সংসদে বলেছেন, ভারতের স্বাধীনতার জন্য সাভারকর জাহাজ থেকে উত্তাল সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়েছিলেন, অথৈ জলরাশি, অনন্ত সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে তিনি সাঁতার কেটে চলেছিলেন, কোনও কূল- কিনারা দেখা যাচ্ছিল না, তাঁর মনে তখন একটাই সংকল্প, দেশ স্বাধীন করতে হবে। শৌরির দাবি, বাজপেয়ীর এই বিবরণের কোনও সত্যতা নেই। সেই সময়ের সরকারি নথি উল্লেখ করে শৌরি দেখিয়েছেন, কোনও অথৈ জলরাশি নয়, স্টিমার থেকে সেই সময় পারের দূরত্ব ছিল মাত্র দশ থেকে বারো ফুট।
আরও পড়ুন: স্বাস্থ্যবিমায় কি কমবে জিএসটি! এপ্রিলেই গ্রুপ অফ মিনিস্টার্সের বৈঠক
মিথ্যা ২
গান্ধী হত্যার দায়ে নাথুরাম গডসের সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সাভারকরও। পরে প্রমাণের অভাবে সাভারকর মুক্তি পান। শৌরি লিখছেন, সাভারকর আদালতে জবানবন্দিতে বলেছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনা হয়েছে এমন একজনকে হত্যার অভিযোগ, যাঁর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতো। ১৯০৮ সালে লন্ডনের ইন্ডিয়া হাউসে তিনি গান্ধীর সঙ্গে থেকেছেন, কাজ করেছেন বন্ধুর মতো। শৌরির দাবি, ১৯০৮-এ গান্ধী ইংল্যান্ডেই যাননি।
গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসের সঙ্গে তাঁর কোনও রকম সম্পর্ক ছিল না, সাভারকরের আদালতে করা এই দাবিও সম্পূর্ণ অসত্য বলে প্রমাণ করেছেন শৌরি।
মিথ্যা ৩
১৯৫২ সালের মে মাসে পুণে শহরে এক সভায় সাভারকর বলেন, তাঁর পরামর্শেই নেতাজি সুভাষ গোপনে ভারত ছেড়ে জার্মানি পৌঁছেছিলেন। তিনিই সুভাষের জন্য তৈরি করে দিয়েছিলেন পরিকল্পনা। আই এন এ তৈরির পরামর্শও তিনিই দিয়েছিলেন নেতাজিকে।
শৌরি লিখেছেন, সুভাষ তাঁর “দ্য ইন্ডিয়ান স্ট্রাগল” বইয়ে জিন্না এবং সাভারকরের বৈঠক সম্পর্কে লিখেছেন, “যুদ্ধ পরিস্থিতির সুযোগ কী ভাবে নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে আমি বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। দেখলাম জিন্নার তখন একমাত্র ভাবনা কী করে ভারত ভেঙে পাকিস্তান-এর পরিকল্পনা সফল করা যায়! আর সাভারকরের সঙ্গে কথা বলে মনে হল, তিনি আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে মোটেই ওয়াকিবহাল নন।“ নেতাজি লিখেছেন, দুই নেতার সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল মুসলিম লিগ এবং হিন্দু মহাসভার কাছ থেকে ভারতের স্বাধীনতার জন্য আমাদের কিছুই পাওয়ার নেই।
দেখুন আরও খবর: