- হাওড়া: আনন্দময়ী মায়ের আগমনের জন্য সারাবছর ভক্তি ভরে অপেক্ষায় থাকে সকলে। রথযাত্রা থেকেই শুরু হয়ে যায় তোড়জোড় । আর ক্রমে ক্রমে যতই সময় এগিয়ে আসে মন প্রাণ উল্লাসে মেটে ওঠে। বিশ্বজুড়ে শরতের আগমনের তারতম্য থাকলেও হৃদয়জুড়ে বাজতে থাকে, “আশ্বিনের শারদ প্রাতে বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জির”। জেলার বিভিন্নপ্রান্তে প্রাচীন পুজোর মাহাত্ম্য কিছুটা কমলেও এখনও বেশকিছু জায়গায় একটুও কমেনি জৌলুস। সেই প্রাচীন কথা শুনলে আজও যেন ভালো হয়ে ওঠে মন। সেরকমই হাওড়ার প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের প্রাচীন বালি চৈতল পাড়া বুড়িমার পুজো। পুরনো ঐতিহ্য রীতিনীতি মেনে সমান তালে আজও ধুমধাম করে পুজো হয়ে আসছে সেখানে।
কথিত আছে, নদিয়া জেলার চৈতন্য বংশীয় পন্ডিত রামভদ্র ন্যায়লঙ্কার জমিদারী পাট্টা পেয়ে বালি গ্রামে বসবাস করতে শুরু করেছিলেন। তখন তিনি এখানে আটটি চালা তৈরি করেন। প্রথমে ঘট পুজো দিয়ে শুরু হয়েছিল এই দুর্গা পুজোর। এরপর তাঁর নাতি মূর্তি দিয়ে পুজো শুরু করেন।আটচালা থেকে পুজোর শুরু বলে আটচালা বাড়ির পুজো বলে পরিচিত এই দুর্গা পুজো। তবে প্রাচীনত্বের কারনে মা দুর্গা বুড়িমা নামে খ্যাতি লাভ করে। জানা গিয়েছে, আগে বাড়ির ঠাকুর দালানে এই পুজো হত। এরপর, ১৯৮৩ সালে নতুন মন্দির তৈরি হয়। বংশক্রমে এই পুজো হয়ে আসছিল।তবে এই বাড়ির শেষ বংশধর হরিনারায়ন ভট্টাচার্য নিঃসন্তান ছিলেন। পুজোর অনেক খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছিল না। সেকারনে তিনি পাড়ায় কয়েকজন বিশিষ্ট মানুষের হাতে এই পুজোর দায়িত্ব তুলে দেন। যার ফলে, জমিদার বাড়ির পুজো সার্বজনীন পুজোয় পরিণত হয়। নাম হয় বালি চৈতল পাড়া আটচালা বুড়িমা শারদোৎসব সমিতি।
আরও পড়ুন: তিনটি নয়া রুটে মেট্রোর উদ্বোধন করবেন মোদি, সাধারণ মানুষ যাত্রা শুরু কবে?
পুরনো ঐতিহ্য রীতিনীতি মেনে সমান তালে পুজো চালিয়ে আসছে বালি চৈতল পাড়া আটচালা বুড়িমা শারদোৎসব কমিটি। বিন্দুমাত্র কমেনি জৌলুষ। জানা গিয়েছে, এই পুজো হয় দশদিন। প্রতিপদ থেকে দশমী পর্যন্ত। প্ৰথমা থেকে পঞ্চমী পর্যন্ত চন্ডীপুজো হয়। ষষ্ঠীতে দেবীর বোধন। এই পুজোর পুরোহিত, ঢাকি, প্রতিমা শিল্পী, আচার্য্য সবাই বংশানুক্রমে তাঁদের কাজ করে যাচ্ছেন। চন্ডীপাঠের পুজোর পুঁথি দুশো বছরের পুরনো, এখনও সেটা তালপাতার উপর লেখা। বলিদানের খাড়াটি মোঘল আমলের। শুরুতে মোশ বলি,পরে ছাগ বলি হতো।তবে বর্তমানে ফল বলি হয়।বিসর্জন দেখতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসেন।দুটি বাঁশে কাঁধ দিয়ে গঙ্গার ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয় প্রতিমা।সেখান থেকে জোড়া নৌকায় নিয়ে গিয়ে মাঝ গঙ্গায় প্রতিমা নিরঞ্জন হয়।
দেখুন খবর: