আসানসোল: শতাধিক বছরের পুরনো নেপালি দুর্গাপুজোয় (Nepali Durga Puja) এখনও উন্মাদনা দেখা যায় শিল্পশহর বার্ণপুরে। আসানসোলের শিল্পতালুক ইসকো কারখানার কারণে নানা জাতি নানা ধর্মের মানুষের বসবাস এই শহরে।অনেকেই রুজি রুটির টানে একদা সুদূর নেপাল থেকে বেশ কিছু পরিবার এসেছিলেন এই বার্নপুর শিল্প তালুকে। সেই নেপালি বাসিন্দারাই একশো বছর আগে শুরু করেছিলেন দুর্গাপুজো। একেবারে নেপালি আচার রীতিনীতি মেনে, নেপালি মন্ত্র উচ্চারণে মাধ্যমে পূজিত হন মা দুর্গা।
1870 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বার্নপুরে বেঙ্গল আয়রন ওয়ার্কস । পরবর্তীকালে যা স্যার বীরেন মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে 1918 সালে ইসকো কারখানা নামে শিল্প উদ্যোগ তৈরি হয়, এর ফলে বার্নপুরে (Burnpur) ইস্পাত কারখানার গৌরবোজ্জ্বল দিন শুরু হয় । 1970 সালে ইসকো কারখানার রাষ্ট্রায়ত্তকরণ হয় এবং পরবর্তীকালে যা সেইলের অন্তর্ভুক্ত হয় । বর্তমানে 35 হাজার কোটি টাকা দিয়ে ইসকো কারখানার সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণের কাজ শুরু হয়েছে ।
আরও পড়ুন: এক দিনের আয়ে শুরু, এখনও চলছে বাঁকুড়ার মুখার্জী বাড়ির দুর্গাপুজো
এই বার্নপুর শহরে কর্মসূত্রে নেপাল থেকে এক সময় প্রচুর মানুষজন এসেছিলেন । কেউ কেউ এসেছিলেন কারখানায় চাকরি করতে, কেউ বা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে, কেউ আবার রাত পাহারার কাজ করতে । শতাধিক বছর আগে বার্নপুরে তাঁদের নিয়ে গড়ে উঠেছিল নেপালি ধাওড়া । আর সেই নেপালি ধাওড়াতেই ইসকোর প্রবেশপথের সামনে শুরু হয় নেপালিদের প্রথম দুর্গাপুজো । একটা সময়ে একেবারে নেপালি কমিউনিটি থেকেই এই দুর্গাপুজো পরিচালিত হত । মন্দিরের পরিচালন কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, শতাধিক বছর আগে নেপালিদের এই দুর্গাপুজো শুরু হয় বার্নপুর শহরে । তখন নেপাল থেকে আগত মানুষদের নিয়ে গড়ে উঠেছিল নেপালি ধাওড়া । একেবারে নেপালি রীতিনীতিতে এই দুর্গাপুজো পালিত হয় ।
দুর্গাপুজোয় যেমন সকালে দোলা ও ঘট আনতে যায় কিন্তু এই নেপালি দুর্গাপুজোতে ঘট আনা হয় বিকেলে। পাশাপাশি মহাষ্টমীতে কাল রাত্রি হিসেবে পালন করে নেপালি ধর্মের মানুষজন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক নেপালি পরিবার এই শহর ছেড়ে চলে গেলেও অনেকে অবসরের পর এই শহরে রয়ে গিয়েছেন ।কিন্তু নেপালি দুর্গাপুজো আজও একশো বছর ধরে নেপালী দুর্গা পুজো করে আসছে নেপালি ধর্মাবলম্বী মানুষজন। কিন্তু আজ কেবল তারাই নন অন্য ভাষার মানুষজন আসেন এই পুজোয়।তারাও শ্রদ্ধার সঙ্গে দুর্গাপুজো পুজো দেওয়ার পাশাপাশি আনন্দে মেতে উঠেন। তবে এখনও বহু নেপালি পরিবার রয়েছেন যারা বাইরে চলে গিয়েছেন, তারা কিন্তু এই দুর্গা পুজোর টানে বার্নপুরে ফিরে আসেন। মন্দিরের পুরোহিত এখনও নেপালি, বেশ কিছু নেপালি পরিবার পুজো কমিটির সদস্য। তবে তাদের দাবি মন্দিরের নাম নেপালি দুর্গা মন্দির হলেও এখন এই মন্দির এখন সব জাতি বর্ণের মানুষের দুর্গা মন্দির হয়ে উঠেছে।
অন্য খবর দেখুন