ওয়েবডেস্ক- বিতর্কিত প্রফেসর (Controversial professor) প্রার্থীকে নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় রামকৃষ্ণ মিশনকে নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট (Kolkata High Court) । রামকৃষ্ণ মিশন (Ramakrishna Mission) সম্পর্কে অনলাইনে বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীকে প্রফেসর হিসেবে নিয়োগ মিশনের কলেজ কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করতে পারে না। অভিমত সহ ইংরেজির সহকারী প্রফেসর হিসেবে প্রার্থীকে নিয়োগের নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের।
সমাজমাধ্যমে যেহেতু তিনি অন্যরকম দৃষ্টিভঙ্গি বা মতাদর্শের উল্লেখ করেছেন, যা তাঁর নিজস্ব বিশ্বাস, তা যদি মিশনের আদর্শের পরিপন্থীও হয়, তাহলেও কলেজের গভর্নিং বডি তাঁকে নিয়োগ না করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
কলেজ নিজেকে সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলেও দাবি করতে পারে না। এমনকি তাদের স্পেশাল স্ট্যাটাস বা বিশেষ মর্যাদার দাবিও গ্রহণযোগ্য নয়। রামকৃষ্ণ মিশনের আদর্শ অথবা যিনি বিপরীত ধর্মী কোন আদর্শপন্থী নন, এক মাত্র তেমন প্রার্থীকেই সুপারিশ করা উচিত বলে কলেজ সার্ভিস কমিশনের প্রতি তারা শর্ত আরোপ করতে পারে না। অভিমত বিচারপতির।
রাজ্য কলেজ সার্ভিস কমিশনের সুপারিশ করা প্রার্থীকে কলেজ কর্তৃপক্ষ আইনত প্রত্যাখ্যান করতে এবং তাঁকে নিয়োগপত্র দিতে অস্বীকার করতে পারেন কি? এই প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতেই মামলা।
আরও পড়ুন- বাদ অযোগ্যরা, একধাক্কায় কমে গেল SSC-র আবেদনকারীর সংখ্যা
ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর প্রার্থী ২০০৭ সালে নেট-জেআরএফ উত্তীর্ণ এবং ২০১৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রাপ্ত। ২০২০ সালে কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তিনি সফলভাবে ইন্টারভিউ উত্তীর্ণ। এরপর মেধাভিত্তিক কাউন্সেলিং-এ উত্তীর্ণ হয়ে তিনি নরেন্দ্রপুরের রামকৃষ্ণ মিশন আবাসিক কলেজ (স্বশাসিত)কে পছন্দের কলেজ হিসেবে বেছে নেন। সেই মতো জারি কমিশনের সুপারিশ মত প্রার্থীকে নিয়োগ করতে অস্বীকার করে কলেজ। তার জেরে মামলা।
এই কলেজ স্বশাসিত। রামকৃষ্ণ মিশনের শাখা কেন্দ্র। ওয়েস্ট বেঙ্গল সোসাইটিজ রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট অনুযায়ী এটি এক সোসাইটি।
কলেজের পরিচালন কর্তৃপক্ষ ওই সুপারিশ পেয়ে জানতে পারে, সমাজ মাধ্যমে এই ব্যক্তির আপত্তিকর বহু পোস্ট রয়েছে। অন্য ধর্ম এবং আদর্শ সম্পর্কে তাঁর ঘৃণা এবং অবমাননাকর দৃষ্টিভঙ্গী স্পষ্ট।
রামকৃষ্ণ মিশন সম্পর্কেও তিনি বহু একপেশে এবং অবমাননাকর মন্তব্য সেখানে করেছেন। ফলে এমন ব্যক্তির নিয়োগের ফলে কলেজের পরিবেশ দীর্ঘস্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশেষত প্রতিষ্ঠানের নীতি লঙ্ঘনের সম্ভাবনা প্রবল মনে করায় গভর্নিং বডি কমিশনের সুপারিশ গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। হলফনামা দিয়ে জানায় কলেজ কর্তৃপক্ষ।
প্রাসঙ্গিক ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর দেওয়ার ফলে অন্য কোন কলেজে নিয়োগ পাওয়ার অধিকার এখন আমার নেই। ফলে এক নিরালম্ব পরিস্থিতিতে আমি দাঁড়িয়ে আছি। বস্তুত চাকরি পাওয়ার সুযোগ থেকে আমাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। ধর্মনিরপেক্ষ এই দেশে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ধর্মনিরপেক্ষ নীতি নিয়ে চলবে বলেই মনে করা হয়। ফলে ওই কলেজ সংবিধান অনুযায়ী কোন বাড়তি সুরক্ষা পেতে পারে না। কোন নির্দিষ্ট আদর্শ প্রচার করার অধিকার তাদের নেই বা সেই আদর্শ মেনে চলার জন্য কাউকে তারা বাধ্য করতে পারে না। দাবি মামলাকারী প্রার্থীর।
সংবিধান অনুযায়ী ওই কলেজ নিজেকে সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠান বলে দাবি করতে পারে না। তারা রাজ্য সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য পায়। তাই তাদের সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত কলেজ হিসেবে গণ্য করতে হবে।
মামলাকারীর সমাজমাধ্যমে যেসব মন্তব্যের উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলি যেহেতু মামলায় পেশ করা হয়নি, তাই আদালত কোন অভিমত দেবে না। প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোন দিক থেকে কোন অভিযোগ নেই। এই বিরোধ কেবলমাত্র মূল্যবোধ ভিত্তিক। প্রার্থীর কিছু মন্তব্যের জন্য মিশনের আদর্শ জলাঞ্জলি যাবে বলে মনে করাটা অমূলক। অভিমতসহ প্রার্থীকে নিয়োগের নির্দেশ।
দেখুন আরও খবর-