Thursday, November 27, 2025
HomeScrollস্মৃতির বালুকাবেলায়...
Dementia

স্মৃতির বালুকাবেলায়…

ডিমেনশিয়া শুধু ভুলে যাওয়া নয়, চিরদিন মনে রাখার কথাও বলে

Written By
প্রীতম বিশ্বাস

প্রীতম বিশ্বাস, কলকাতা: স্মৃতি বিস্মৃতির মাঝখানের রাস্তাটা ঠিক কী রকম? তা কি স্পষ্টতা আর অস্পষ্টতার ধোঁয়াশায় ঘেরা? অথবা নানা অনুভব,নানা মুহূর্তে গাছের পাতায় ভোরের শিশিরের মত একবার এখানে একবার ওখানে গড়িয়ে যায়?

ডিমেনশিয়া (Dementia)। এই শব্দটা শুনলেই আমরা যেন দেখতে পাই একজন মানুষ ওইরকমই এক রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছেন। ধীরে ধীরে স্মৃতি লোপ পাওয়ার এই অসুখ মানুষ ও তার পরিবারের লোককে এক বিপন্ন বিস্ময়ের সামনে এনে দাঁড় করায়। তেমনই এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন চেরিল স্ট ওনজে। গার্ডিয়ান পত্রিকার এক সাক্ষাৎকারে ডিমেনশিয়া আক্রান্ত তার মায়ের কথা বলেছেন চেরিল। তার সঙ্গে তার মায়ের সম্পর্কে ডিমেনশিয়া যেন একটা যতি চিহ্নের কাজ করেছে। তারা পরস্পরকে যেমন ছুঁয়েছিলেন আবার তেমনি নিজেদের মানসিক সম্পর্কে দূরত্ব যেন বেড়ে যাচ্ছিল সময়ের সাথে সাথে।

আরও পড়ুন: এসিডিটির সমস্যা! ওষুধেও না সারলে গোলমাল অন্য জায়গায়, কিসের লক্ষণ?

চেরিল তাঁর বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। এক গাড়ি দুর্ঘটনায় তিনি বাবাকে হারান। মায়ের বয়স তখন ৪৭। চেরিলের মা কাজ করতেন বিশ্ববিদ্যালয়ে, পাশপাশি ছিলেন শিল্পী। ছবি আঁকতেন, খোদাই করতেন। তাঁর মনের নানা ভাব, নানা গল্প ফুটে উঠত ক্যানভাসে । একটা সময় তিনি ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হলেন। ঘরের নানা জিনিস ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখতেন, ফুলের বাগান তছনছ করতেন। আর তার সঙ্গেই যেন অগোছাল হয়ে পড়ছিল চেরিলের জীবন। আস্তে আস্তে ক্লান্তি গ্রাস করতে থাকল। এমনকি মায়ের ছবি তোলাও বন্ধ করে দেন চেরিল।

কিন্তু না, তাঁর এক বন্ধুর পরামর্শেই তিনি আবার তাঁর মায়ের ছবি তুলতে শুরু করেন। আর ক্যামেরার এক ক্লিকের ছোঁয়ায় চেরিলের মা যেন বিস্মৃতির হাতছানির বাইরে পা রাখেন। তিনি জানলার দিকে মুখ করলেন, চুল ঠিক করে নিলেন, এবং বললেন ” আমরা তাহলে আর কি কি করব?” চেরিলের নিজের কথায় সেই মুহূর্তটা যেন সবকিছু পাল্টে দিল।

এবার শুরু হল মা মেয়ের এক অন্য জীবন। একসঙ্গে বাইরে যাওয়া, ছবি তোলা, মধ্যাহ্নের সূর্যকে সাক্ষী রেখে পোষা কুকুর, যার নাম স্কিপার, তার সঙ্গে নানা খুনসুটিতে মেতে ওঠা। সেই দিনগুলো ভালো ছিল, আলো ছিল ছড়িয়ে। ডিমেনশিয়ার বিষন্নতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যেন একটু একটু করে রসদ জমা হচ্ছিল।

তবে অসুখ তো তার থাবা গুটিয়ে নেয় না, বিশেষ করে যে অসুখ বাসা বাঁধে মনের গোপন ঘরে। চেরিল জানিয়েছেন যে তাঁর মা মাঝে মাঝে মৃত্যুচিন্তায় পীড়িত হতেন। এমন কোনও জায়গায় নিয়ে যেতে বলতেন যেখানে মৃত্যু রয়েছে । মৃত্যু যেন কোনো বেড়ানোর জায়গা। এ যেন এক আধিভৌতিক পরিক্রমা। এসবের মধ্যেই চেরিলের মা নাচতেন, গাইতেন, মজে যেতেন ডলি পার্টনের গানে। মা মেয়ে কেউ ভাবতেও পারতেন না যে মৃত্যু এসে দাঁড়ি টেনে দেবে তাঁদের মাঝখানে।

চেরিল নানা দুঃখ ও ভালবাসার মুহূর্তগুলো ফ্রেমবন্দি করে রাখতেন। কখনও মায়ের একলা চেয়ে থাকা, কখনও বাগানে হোস পাইপ নিয়ে মায়ের স্কিপারের সঙ্গে জলকেলির।

একদিন রাতে চেরিল দেখতে পান তাঁর মা ঘরের মধ্যে নগ্ন অবস্থায় হাঁটছেন, সোফাগুলো ছড়ানো ঘরের মাঝখানে এদিক ওদিক, সেগুলো যেন এক একটা মাইল ফলকের মতো পড়ে রয়েছে।

বছর পাঁচ আগে চেরিল তাঁর মাকে হারিয়েছেন। চেরিল অনুভব করতে শুরু করেন তাঁর মধ্যে ক্ষমতা ছিল যত্ন করার, ভালবাসার, রোগের বিরুদ্ধে অসম লড়াইতে নানা বাধার প্রাচীর অতিক্রম করার।

ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত তাঁর মায়ের নানা ছবি এরপর তিনি শেয়ার করতে শুরু করেন। চেরিল চান এই ছবিগুলো এক সার্বিক অভিজ্ঞতা হিসেবে যেন সকলে দেখেন। কঠিন সময়েও কারোর পাশে থাকার এক জীবন্ত দলিল হিসেবে ছবিগুলো মানুষকে অনুপ্রাণিত করুক।

দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত চেরিলের সাক্ষাৎকার পড়ে মনে হয়, ডিমেনশিয়া শুধু ভুলে যাওয়া নয়,তা যেন চিরদিন মনে রাখার কথাও বলে।

দেখুন আরও খবর: 

Read More

Latest News