কলকাতা: চলতি বছরের একেবারে শেষের দোরগোড়ায় পৌঁচ্ছে গিয়েছি। চলতি বছরে একাধিক তারা খসে পড়েছে। তাঁদের চলার পথ, কাজ, চিন্তা অনুপ্রাণিত করেছে। না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন কিংবদন্তীরা। স্মৃতিটুকুই রয়ে গেল। কাদের হারালাম এক ঝলকে
উস্তাদ রাশিদ খান- চলতি বছরের শুরুতে বিষাদ গ্রাস করেছিল। ৯ জানুয়ারি মাত্র ৫৫ বছর বয়সে মৃত্যু হয় তাঁর। এক নিঃশ্বাসে যিনি গেয়ে যেতে পারতেন সুদীর্ঘ লাইন। বাঙালি না হয়ে বাংলাকে ভালোবেসে আপন করে নিয়ে ছিলেন। কলকাতার বুকেই থামে উস্তাদ রাশিদ খানের সুরেলা সফর। তাঁর কণ্ঠের মাধুর্য মুগ্ধ করেছিল গোটা দেশকে। পেয়েছেন পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার।
শ্রীলা মজুমদার: এই বর্ষীয়ান অভিনেত্রীও ভুগছিলেন ক্যানসারে। ৬৫ বছর বয়সে লড়াই শেষ হয়। ২৭ জানুয়ারি মৃত্যু হয় শ্রীলা মজুমদারের (Sreela Majumdar)। ১৯৮০ সালে মৃণাল সেন পরিচালিত পরশুরাম ছবির মাধ্যমেই চলচ্চিত্র জগতে তাঁর হাতেখড়ি। বাংলা সিনেমার পাশাপাশি হিন্দি ছবিতেও নিজের অভিনয় দক্ষতায় সকলকে মুগ্ধ করেছিলেন শ্রীলা মজুমদার।
ইদ্রিশ আলি- একাধিক রোগে ভুগছিলেন এই প্রবীণ রাজনীতিক। অনেকদিনই কাজকর্ম করতে অপারগ ছিলেন। বাড়ি থেকেও বেরোতে পারতেন না। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হন ভগবানগোলার তৃণমূল বিধায়ক ইদ্রিশ আলি। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।
পঙ্কজ উদাস: দীর্ঘ অসুস্থতার পর ৭২ বছর বয়সে প্রয়াত হন গজল শিল্পী পঙ্কজ উদাস। শেষ সময়ে মুম্বইয়ে ছিলেন তিনি। তাঁর সুরে যাদুতে মুগ্ধ শ্রোতারা। হিন্দি সিনেমা এবং ইন্ডি-পপের জগতে তাঁর অবদান ভোলার নয়। লাইভ অনুষ্ঠান হোক বা অ্যালবাম কিংবা ছবির গান, আশি ও নব্বইয়ের দশকে দর্শককে মুগ্ধ করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন : বর্ষ শেষের রাতে রাজ্যজুড়ে জনজোয়ার
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য– দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। ফুসফুসের সমস্যা বা COPD-তে ভুগছিলেন। এবছর ৮ অগাস্ট প্রয়াত হন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। পশ্চিমবঙ্গের ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট শাসনের দ্বিতীয় এবং শেষ মুখ্যমন্ত্রী। বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। ২০০১-২০১১, টানা ১১ বছর মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
সীতারাম ইয়েচুরি: বামফ্রন্ট নেতা বার্ধক্য জনিত রোগে ভুগছিলেন, ফুসফুসের সমস্যাও ছিল। ১২ সেপ্টেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৭২ বছর বয়সে।
রতন টাটা: ভারতের অন্যতম বিশিষ্ট শিল্পপতি রতন টাটা। অক্টোবরে মুম্বইয়ের এক বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর মতো এমন মানবদরদি মানুষকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ হয় গোটা দেশ। টাটা গোষ্ঠীকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারিগর ছিলেন রতন টাটা।
মনোজ মিত্র: দীর্ঘদিন নানা শারীরিক সমস্যা ভোগার পর মৃত্যু হয় বর্ষীয়ান অভিনেতা, নাট্যব্যক্তিত্ব মনোজ মিত্রর। কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তপন সিংহের ছবি ‘বাঞ্চারামের বাগান’-এ তাঁর অভিনয় চিরদিনের জন্য জায়গা করে রেখেছে বাঙালির হৃদয়ে।
উস্তাদ জাকির হুসেন: ৭৩ বছর বয়সে ইডিওপ্যাথিক পালমোনারি ফাইব্রোসিসে আক্রান্ত হয়ে সান ফ্রান্সিসকোর এক বেসরকারি হাসপাতালে প্রয়াত হন উস্তাদ। তাঁকে নিয়ে বলতে গেলে শব্দ কম পড়ে যেতে পারে। বছরের শেষে নক্ষত্র পতনে শোকস্তব্ধ হয় সংগীত জগত। তাঁর চলে যাওয়া শুধু ভারতীয় সঙ্গীত জগতেই নয়, বিশ্বের সকল শ্রোতাদের জন্য এক অপূরণীয় শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। জাকির হুসেন সঙ্গীতের জগতে তাঁর অসাধারণ অবদান রেখে গিয়েছেন। অসাধারণ প্রতিভার কারণে পদ্মভূষণ এবং পদ্মশ্রী এবং সংগীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন এই কিংবদন্তি শিল্পী। জাকির হুসেন এই বছর ৩টি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন।
ডঃ মনমোহন সিং: ২৬ ডিসেম্বর দিল্লির এইমসে প্রয়াত হন দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। হার্টের সমস্যা তাঁর। শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় শনিবার। ২০০৪ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মনমোহন সিং। চলতি বছরের শুরুতে রাজ্যসভার সাংসদ পদের মেয়াদ শেষে রাজনৈতিক পথচলায় ইতি টানেন তিনি। টানা ৩৩ বছর রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন।
অন্য খবর দেখুন