Saturday, August 23, 2025
HomeScrollAajke | ভারতের রণবীর এলাহাবাদিয়া এবং বাংলাদেশের পিনাকী ভট্টাচার্য

Aajke | ভারতের রণবীর এলাহাবাদিয়া এবং বাংলাদেশের পিনাকী ভট্টাচার্য

সেই কবে থকেই আমরা শুনে আসছি সব পাখি মাছ খায়, কিন্তু দোষ হয় মাছরাঙার। স্ট্যান্ড আপ কমেডির নামে বেশ ক’ বছর ধরে যা চলছিল তাকে বিশুদ্ধ গালিগালাজ বা অত্যন্ত নিচুমানের ভাঁড়ামো বললেও কম বলা হয়। কিন্তু তার এক দর্শক আছে, এ রাজ্য, এ দেশ বা এ বিশ্বের সর্বত্র এমন ভাঁড়েরা আছেন, তাঁদের কারও নাম মীর, কারও নাম মাক্সি আমিনি, কারও নাম মহীপ সিং, কারও নাম রণবীর এলাহাবাদিয়া। সেই তাঁরাই যখন রাজনীতির আঙিনায় এসে যান তখন তাঁরাই কেউ রমেশ বিধুরি, কেউ হুমায়ুন কবীর কেউ বা পিনাকী ভট্টাচার্য। প্রথম জনেদের নির্দিষ্ট দর্শক আছে, তারাই শোনে। খুব ভাইরাল হয়েছে বলেই ওই রণবীর এলাহাবাদিয়া কী বলেছেন তা শোনার চেষ্টা করেছেন অনেকে, যা বলেছেন তা এর আগে বহু নাটক নভেল, বহু আলোচনায় বহুবার এসেছে, নতুন কিছুই নয়। কিন্তু কথায় বলে না ইন-আপ্রোপ্রিয়েট টাইমিং, ঠিক সময়ে ঠিক জায়গাতে একটা কথা না বলে বেসময়ে, বে-জায়গাতে তা বললে তা নিয়ে নাড়াচাড়া হয়, তাই হচ্ছে। কিন্তু হলফ করে বলতে পারি, যাঁরা উৎসাহবশেও ওই এখনকার স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ানদের ক’টা অনুষ্ঠানও শুনেছেন তাঁরা জানেন যে রণবীর এলাহাবাদিয়া সে তুলনায় তুচ্ছ। এক মহীপ সিং আছেন, যিনি মঞ্চে এসেই ভুরু নাচিয়ে যে কাউকে অনায়াসে জিজ্ঞেস করেন, মা ক্যায়সি হ্যায়? সব্বাই প্রবল হাসে, উনি যা বলতে চাইছেন সেটা বুঝেও, যাকে বলা হচ্ছে তিনিও হাসেন। এটাই নাকি কমেডি। কিন্তু রণবীর এলাহাবাদিয়া এ দেশে এবং বাংলাদেশে পিনাকী ভট্টাচার্য এখন সেই নোংরা কথাগুলো বলার জন্য খুব জনপ্রিয়, ফেমাস। সেটাই বিষয় আজকে, রণবীর এলাহাবাদিয়া এবং পিনাকী ভট্টাচার্য।

আমি দু’জনের নাম নিয়েছি মানে আলোচনাটা দু’জনের নয়, এঁরা দু’জনে দুই জগতের মানুষ। না ভারত বাংলাদেশের কথাও নয়। এঁদের একজন ওই পডকাস্ট, স্ট্যান্ড আপ কমেডি ইত্যাদি, অন্যজন পিওর রাজনীতির। মিলটা কোথায়? অনাবশ্যক গালিগালাজ, অনাবশ্যক কটু কথা বলে মঞ্চের আলো শুষে নেওয়ার চেষ্টা। দুটোর মধ্যে তফাতটা হল একটা শোনার জন্য কিছু মানুষ যায়, টিকিট কেটেই যায়, যে কোনও কারণেই হোক তারা মজা পায় সে সব শুনে। মনস্তাত্ত্বিকরা বলেন, আসলে এ হল এক ধরনের গভীর ডিপ্রেশন কাটানোর চেষ্টায় আরও গভীর ডিপ্রেশনের শিকার হওয়া।

আরও পড়ুন: Aajke | বাংলায় মোদি–শাহ, আরএসএস–বিজেপির ঠাঁই নেই

অন্যটা হল রাজনৈতিক ঘৃণা, আমাদের দেশে ঘৃণা ছড়ানোর তো পাকাপোক্ত যন্ত্রই আছে। ‘সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অফ অর্গানাইজড হেট’-এর এক প্রজেক্ট ‘ইন্ডিয়া হেট ল্যাব’-এর সাম্প্রতিক রিপোর্টে বলা হচ্ছে, ২০২৪ সালে ভারতের সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ভাষণের ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে দেখা গেছে। ১০ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে ১,১৬৫টা ঘৃণা ভাষণের ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে, যা ২০২৩ সালের ৬৬৮টা ঘটনার তুলনায় ৭৪.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিরও হিংসাত্মক বক্তব্য প্রচারে ভূমিকা আছে। ১,১৬৫টা ঘটনার মধ্যে ৯৯৫টা, অর্থাৎ ৮৫ শতাংশের বেশি ঘটনা প্রথমে ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম এবং এক্স প্রভৃতি প্ল্যাটফর্মগুলিতে শেয়ার বা লাইভস্ট্রিম করা হয়েছে। আর সেই প্রেক্ষিতেই আমাদের দেশের বিজেপি নেতা রমেশ বিধুরি, স্বাধ্বী ঋতাম্ভরা, যতি নরসিংহানন্দ ইত্যাদিরা আছেন, বাংলাদেশের পিনাকী ভট্টাচার্যকে সেই তালিকাতেও রাখা যায়। এমন নয় যে পিনাকী মিথ্যে বলছেন, এমনও নয় যে উনি যা বলছেন তা বলার পেছনে যুক্তি নেই, কিন্তু উনি যা বলছেন, তা বলতে গিয়ে যে কদর্য ভাষার ব্যবহার করছেন, তা কি রুচিসম্মত? কঠিনতম ভাষায় ইন্দিরা গান্ধীর সমালোচনা করেছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী, সিরাজ শিকদার তাঁর লেখায় তীব্র সমালোচনা করেছেন মুজিববাদের, চার্চিল সমালোচনা করেছেন হিটলারের, নেলসন ম্যান্ডেলা সমালোচনা করেছেন বর্ণবৈষম্যের। কারও কি অমন কুশব্দ, অপশব্দ ব্যবহারের দরকার পড়েছিল? আমার মনে হয় ওই রণবীর এলাহাবাদিয়া বা স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ানদের নোংরা কথাগুলো তবু কোথাও একটা সীমাবদ্ধ থাকে, দেশ বিদেশের রাজনীতিবিদদের নোংরা কথাগুলো কিন্তু ছড়ায় সর্বত্র। আমরা আমদের দর্শকদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কারও সমালোচনা করা জন্য, কারও বিরোধিতা করার জন্য, মজা করা জন্য, হাসা বা হাসানোর জন্য গালিগালাজ করা, কুকথা, কুশব্দ ব্যবহার করার কি আদৌ কোনও দরকার আছে? শুনুন তাঁরা কী বলছেন।

পিনাকী ভট্টাচার্য বা রণবীর এলাহাবাদিয়া, দুই মানুষ দুই দুনিয়ার, দুই দেশের, কিন্তু দু’জনের জন্য এবং আমাদের দর্শকদের জন্য একটা কথা বলি, জাভেদ আখতারকে দিন দুই আগেই এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি বলেছেন, যে খাবার এমনিতেই স্বাদু, খেতে ভালো, তাতে বেশি ঝালমশলা দিতে লাগে না। খাবারের গুণে, রান্নার গুণে তা মানুষের ভালো লাগে, মুখে লেগে থাকে। কিন্তু খাবারের স্বাদ ভালো না হলে, রান্না করতে না জানলে তাতে অনাবশ্যক ঝালমশলা দেওয়া হয়। ঠিক তেমন যদি আপনার কাছে যুক্তি আর ভাষা থাকে তাহলে আপনার কথা আপনি এমনিতেই বলতে পারবেন, মানুষ বুঝে নেবে। কিন্তু যদি সেই যুক্তি বা ভাষা না থাকে? তাহলে ওই গালাগালি আর অপশব্দের আশ্রয় নিতেই হয়। প্রমাণ হল, আমি এতক্ষণ যা বললাম তাতে একটাও অপশব্দ ব্যবহার করতে হয়নি, কিন্তু এটা পড়ে সেই তাঁদের যদি গায়ে লাগে, আর তাঁদের কাছে যদি যুক্তি আর শব্দ না থাকে তাহলে তাঁরা গালিগালাজ করবেন, সেটাই স্বাভাবিক।

Read More

Latest News