ওয়েব ডেস্ক: কখনও কখনও হারিয়ে যেতে মন চায়। অনেকে পাহাড়ে, সমুদ্রে, জঙ্গলে হারিয়ে যাওয়ার জন্য বছরভর হাপিত্যেশ করে থাকেন। কার কারও হয়তো মনে হয় সব ছেড়ে ছুটে পালাই কোনও অজানায়। এই ব্যস্ত, কৃত্রিম জীবনের হাঁসফাঁস থেকে যদি মেলে ক্ষণিকের স্বস্তি। বইপ্রেমীরা (Book Lovers) খোঁজেন বইমেলা। মেলা বইয়ের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া সে একরকম আনন্দের। আবার নতুন বই উল্টেপাল্টে দেখতে দেখতে হারিয়ে যাওয়া সে আরেকমরকম। এই মন হারানো বইমেলায় এবার দুর্দান্ত ওপেনিং হলেও মধুরেণ সমাপয়েৎ হল না। বহতা নদীর সৌন্দর্য নিয়ে ২৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছিল ৪৮তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা (48th Kolkata International Book Fair)। ডিজিটাল যুগে, অডিও বুকের আমলেও ছাপার বইয়ের দিকে স্রোতের মতো ছুটে এসেছিলেন বইপ্রেমীরা। শুরু থেকেই। রবিবার, সরস্বতীপুজো, বইমেলাকে এবার একসঙ্গে পেয়েছিলেন পাঠকরা। কিন্তু শেষ রবিবার, মেলার সমাপ্তির দিনে তাতে ভাটা পড়ল। আরজি কর হাসপাতালে তরুণী ডাক্তার ধর্ষণ, খুনের ঘটনায় আচমকাই বইমেলা চত্বরে বিক্ষোভে চাঞ্চল্য ছড়াল। একদল আন্দোলনকারী আরজি কর (R G Kar Medical College and Hospital) কাণ্ডে ন্যায়বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বইমেলায়। লিটল ম্যাগাজিনের স্টলের সামনে বিক্ষোভ হয়। তাতে যোগ দেন আরও অনেকে। ধর্ষণ সংস্কৃতি নিপাত যাক, প্রীতিলতার এই মাটিতে ধর্ষকদের ঠাঁই নাই, আরজি কর কাণ্ডের সমস্ত অপরাধীর শাস্তি চাই সহ স্লোগান লেখা পোস্টার নিয়ে বিক্ষোভ হয়। উই ওয়ান্ট জাস্টিস স্লোগান ওঠে। এক বিক্ষোভকারী বলেন, আজ ওই তরুণী ডাক্তারের জন্মদিন। বিভিন্ন জায়গায় নানা কর্মসূচি চলছে। আমরাও মিছিল করেছি। শ্যামবাজার থেকে আমরা বইমেলায় এলাম। বইমেলা তো বাকস্বাধীনতার জায়গা। তাও পুলিশ বাধা দিচ্ছে। আমি রাত দখল ঐক্য মঞ্চ থেকে এসেছি। সেরকম বিভিন্ন মঞ্চ থেকে অনেকেই এসেছেন। এক বিক্ষোভাকারী বলেন, আমার চাইছি, বাবা-মা যেন ন্যায় বিচার পান। উল্লেখ্য, নিম্ন আদালতের রায়ে আরজি কর কাণ্ডে ধৃত সঞ্জয় রায়ের আমৃত্যু কারাদণ্ড হয়েছে। আরও কড়া শাস্তির দাবিতে হাইকোর্টে মামলা বিচারাধীন।
এদিকে ধ্রুপদী বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিক বইমেলার শেষ দিনে এদিন জনপ্লাবন দেখা যায়। সল্টলেক সেন্ট্রাল পার্কে এবার বইমেলা সামগ্রিকভাবেই ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। বই বিক্রি ও ভিড় অন্যবারের রেকর্ডকে ছাপিয়ে গিয়েছে। যদিও এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা পর্যন্ত এই বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: খেলা নিয়ে সিনেমার মেলা, নন্দনে হবে প্রদর্শনী, জানুন নির্ঘন্ট
প্রতিবারই বইমেলা মেলা বইয়ের সম্ভার নিয়ে হাজির হয়। কত অভিনব ঘটনা ঘটে। এবারও তার অন্যথা হয়নি। যেমন স্বল্পমূল্যে কোনও স্টলে পুরনো বই মিলেছে। কোথাও দেড়শো বছরের পুরনো দুষ্প্রাপ্য বইয়ের দেখা মিলেছে। ছোট্ট স্টলে অনেক টাকার বইয়ের ভুবনের খোঁজও পেয়েছেন বই পিপাসুরা। লিটল ম্যাগাজিনগুলো গবেষণাধর্মী, ঐতিহাসিক বিভিন্ন বিষয়ের ডালি নিয়ে হাজির হয়েছিল। যেভাবে তাঁরা ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রচেষ্টা করেন। এছাড়া প্রতিবারের মতো এবারও কলকাতা সাহিত্য উৎসব আলাদা মাত্রা নেয়। বইমেলায় রাজনৈতিক নেতাদের বিরোধী শিবিরের স্টলে ঘোরা, সেলিব্রিটির বই উদ্বোধনের মতো দৃশ্য নতুন রং যোগ করেছে। কোথাও চলমান সংবাদপত্র, কোথাও কবিতার কোলাজ নিয়ে ভ্যান গাড়ির মন ভালো করা ছবির দেখা মিলেছে আনাচেকানাচে। প্রকাশনীর স্টলে বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রকাশিত প্রতিবেদনের অংশ দিয়ে দেওয়াল চিত্রের মতো ছবিও নজর কেড়েছে। একজন বিক্রেতা বলছিলেন, তাঁর স্টলে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে বেদসমগ্র। বইমেলায় এসে হারিয়ে গিয়েছেন এমনও দেখা গিয়েছে। আবার তাঁদের আয়োজক পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড ও পুলিশ খুঁজে দিয়েছে।
দেখুন অন্য খবর: