ওয়েব ডেস্ক: ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে অবস্থিত বসিরহাটের (Basirhat) পানিতর গ্রাম শুধু ইতিহাস বা ভৌগোলিক কারণে নয়, সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Bibhutibhushan Bandyopadhyay) স্মৃতিতেও সমৃদ্ধ। গ্রামটির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ইছামতি নদী। এই গ্রামেই বিভূতিভূষণের স্ত্রী গৌরীদেবীর জন্ম। তিনি ছিলেন বসিরহাটের মোক্তার কালীভূষণ মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে। তাঁর বাড়ির দুর্গাপুজো (Durga Puja) ‘ধুনির ঘরের পুজো’ (Dhunir Ghorer Pujo) নামে খ্যাত, যা বহুদিন ধরে দুই বাংলার মানুষের মিলনস্থলে পরিণত হয়েছে।
আজ জমিদারি নেই, তবে ঐতিহ্যের আলো এখনও অটুট। গ্রামের মানুষ মিলিতভাবে এই পুজোর আয়োজন করেন। ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ উৎসবে যোগ দেন। বিশেষত অষ্টমী ও নবমীর দিনে গ্রামের কোনও বাড়িতে আলাদা করে হাঁড়ি চড়ে না। সবাই একত্রে মহাভোজে অংশ নেন। স্থানীয়রা এই উৎসবকে ‘ভজরাম’ বলে ডাকেন।
আরও পড়ুন: ভিনরাজ্যে বাঙালি বিদ্বেষ, পুজোর রোজগার নিয়ে শঙ্কায় মহিলা ঢাকিরা
বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের আদি বাড়ি ছিল পানিতরে। বিভূতিভূষণের ঠাকুরদা তারিণীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন কবিরাজ। তাঁর ছেলে মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় ছোটবেলায় বসিরহাট ছেড়ে বনগাঁর কাছে চাঁদপাড়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তবে পৈতৃক ভিটের দেখভালের জন্য তাঁকে প্রায়ই পানিতরে আসতে হত। ছোট থেকেই বাবার সঙ্গে যাতায়াত করতেন বিভূতিভূষণ। বসিরহাটের মোক্তার কালীভূষণ মুখোপাধ্যায়ের কন্যা গৌরীদেবীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় ও পরবর্তীকালে বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের এক বছর পরেই কলেরায় গৌরীদেবীর মৃত্যু হয়। স্ত্রীর মৃত্যুর শোক ভুলতে কিছুদিন প্রায় সন্ন্যাসীর মতো জীবনযাপন করেন বিভূতিভূষণ। পরে তিনি পানিতর গ্রামে বসবাস শুরু করেন এবং এখানেই রচনা করেন ‘পথের পাঁচালী’, ‘ইচ্ছামতী’সহ বহু উপন্যাস। তাঁরই উদ্যোগে মুখোপাধ্যায় বাড়িতে পুজোর সূচনা হয়।
আজও এই গ্রাম ঐতিহ্য, সম্প্রীতি আর সাহিত্যিক স্মৃতির কেন্দ্র হিসেবে দুই বাংলার মানুষের হৃদয়ে এক অনন্য স্থান ধরে রেখেছে। ধুনির ঘরের পুজো শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি মানবিকতা, ভালোবাসা এবং ঐক্যের এক জীবন্ত উদাহরণ।
দেখুন আরও খবর: