বাঁকুড়া: সালটা ১৯৪০। ভারত তখনও ব্রিটিশদের শাসনে (British Rule) জর্জরিত। পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করার লক্ষ্যে দেশজুড়ে আন্দোলন করছেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু (Netaji Subhas Chandra Bose)। সেই সময় বাংলার লালমাটির জেলা বাঁকুড়ায় (Bankura) ফরওয়ার্ড ব্লকের (Forward Block) সাংগঠনিক কাজে এসেছিলেন তিনি। তাঁর এই সফরের স্মৃতি আজও বয়ে বেড়াচ্ছে বাঁকুড়ার দেশুড়িয়া গ্রামের কর্মকার পরিবার। নেতাজির স্মৃতিচিহ্ন (Netaji’s Memory) হিসেবে আজও রয়েছে একটি কাঠের চেয়ার। বাঁকুড়ার এই কর্মকার বাড়ির ঠাকুরঘরে নেতাজির স্পর্শপ্রাপ্ত সেই চেয়ার এখনও পূজিত হয়।
জানা যায়, ১৯৪০ সালের এপ্রিল মাসে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বাঁকুড়ায় আসেন। কয়েক দিন সেখানে থেকে তিনি বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রয়োজনীয় বিষয়ে আলোচনা করেন। ২৮ এপ্রিল, গঙ্গাজলঘাঁটিতে একটি বিশাল জনসভার আয়োজন করা হয়। সভাস্থলে ছিল মানুষের ঢল। সভার মঞ্চে নেতাজির বসার জন্য খনি অঞ্চল থেকে একটি সোফা আনা হয়েছিল। কিন্তু নেতাজি সেই সোফায় না বসে সাধারণ নেতাদের পাশে একটি কাঠের চেয়ারে বসেন।
আরও পড়ুন: ২৩শে জানুয়ারি নেতাজি জয়ন্তী, কেন এই দিনের নাম ‘পরাক্রম দিবস’
এই কাঠের চেয়ারটি ছিল দেশুড়িয়া গ্রামের চিকিৎসক রামরূপ কর্মকারের দোকানের। সভা শেষ হওয়ার পর, রামরূপ কর্মকার নিজে সেই চেয়ারটি মাথায় করে বাড়ি নিয়ে যান। সেই থেকে চেয়ারটি সযত্নে রাখা হয় কর্মকার পরিবারের ঠাকুরঘরে। নেতাজির বাঁকুড়ায় আসার ঘটনাটি আজ ইতিহাস। তবে সেই ইতিহাসকে জীবন্ত রেখেছে কর্মকার পরিবার। তাঁদের কাছে এই চেয়ার শুধু একটি বসার আসন নয়, এটি নেতাজির স্মৃতি। সুভাষচন্দ্র বসুর ছোঁয়া পেয়েছে বলে এই কাঠের চেয়ারটি কর্মকার পরিবারের কাছে ঈশ্বরতুল্য।
রামরূপ কর্মকারের মৃত্যুর পরও তাঁর পরিবার আজও এই চেয়ারটি ঠাকুরঘরে রেখে পূজা করেন। কোনও শুভ কাজের আগে এই চেয়ার দর্শন করা পরিবারের এক গুরুত্বপূর্ণ রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন সকালে ঠাকুরঘরে অন্যান্য দেব-দেবীর সঙ্গে এই চেয়ারকেও প্রণাম করা হয়। পরিবারের সদস্যদের মতে, এটি তাঁদের কাছে আশীর্বাদের প্রতীক।
দেখুন আরও খবর: