Saturday, December 20, 2025
HomeScrollFourth Pillar | ২০২৬-এ মতুয়া অঞ্চলে বিজেপি গোহারান হারবে
Fourth Pillar

Fourth Pillar | ২০২৬-এ মতুয়া অঞ্চলে বিজেপি গোহারান হারবে

২০০২ সালের তালিকায় নাম নেই, কমিশনের নির্ধারিত ১২টি নথি নেই, এমন মতুয়ার সংখ্যা প্রচুর

Written By
অনিকেত চট্টোপাধ্যায়

বিজেপি বিধায়ক সুব্রত বৃহস্পতিবার বনগাঁ শহরে দলের জেলা দফতরে বলেছেন, ‘‘এটা নিয়ে দ্বিধা বা দ্বন্দ্ব নেই যে, মতুয়াদের নাম খসড়া ভোটার তালিকায় সংশয়ের তালিকায় আছে। খসড়া তালিকায় ‘নো ম্যাপিং’-এর মধ্যে প্রচুর মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষের নাম আছে। যাঁদের মধ্যে ২০০২ সালের তালিকায় নাম নেই, এমন মতুয়ার সংখ্যাও প্রচুর। তাঁদের কাছে কমিশনের নির্ধারিত ১২টি নথিও নেই।’’ কী অসাধারণ স্বীকারোক্তি তাই না! ওদিকে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর এক সময়ে বলেছিলেন, ভোটার তালিকার এসআইআর-এর ফলে যদি কোনও মতুয়ার নাম বাদ যায়, তাহলে এক-দু’বার ভোট দিতে না পারলেও পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। মানে কত সহজে কথাটা বলে দেওয়া যায় যে, এক-দু’বার ভোট দেবেন না, এই তো? তবে এ কথায় দুশ্চিন্তা দূর হয়নি মতুয়াদের। বরং সুপ্রিম কোর্ট যেভাবে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে, নাগরিকত্ব না পেলে ভোটার তালিকায় কারও নাম তোলা যাবে না, তাতে দুশ্চিন্তা বেড়েছে। দীর্ঘকাল ধরে মতুয়ারা বামপন্থীদের ভোট ব্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত ছিল। পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস মতুয়াদের মন জয় করতে পেরেছিল। বড়মা বীণাপাণি দেবীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তৃণমূল সরকার মতুয়াদের উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু নাগরিকত্বের প্রশ্নে তৃণমূলের অবস্থান ছিল কিছুটা ঘোলাটে। তৃণমূলের দাবি ছিল, যাঁরা ভোট দিচ্ছেন বা যাঁদের আধার কার্ড আছে, তাঁরা সকলেই নাগরিক। কিন্তু সেই সময়েই সিএএ বিল আসছে, আর মতুয়াদের একাংশ মনে করত, তাঁদের নাগরিকত্ব আইনিভাবে সুনিশ্চিত নয়। এই সুযোগটাকেই কাজে লাগিয়েছিল বিজেপি। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে নরেন্দ্র মোদি ঠাকুরনগরে এসে মতুয়াদের সামনে সিএএ-র প্রস্তাব পেশ করেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, পাকিস্তান, বাংলাদেশ বা আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দু শরণার্থীদের নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এই ‘নিঃশর্ত’ শব্দটাই ছিল মতুয়াদের কাছে এক পরম প্রাপ্তি। তাঁরা মনে করেছিলেন, দীর্ঘদিনের শরণার্থীর তকমা এবার ঘুচবে। ফলে বনগাঁ এবং রানাঘাটের মতো লোকসভা আসনগুলোতে বিজেপি অভাবনীয় জয় পায়। শান্তনু ঠাকুরের মতো তরুণ নেতাকে সামনে রেখে বিজেপি মতুয়াদের ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও এই ট্রেন্ড বজায় ছিল। সিএএ-র আশা দেখিয়ে বিজেপি মতুয়া প্রধান বিধানসভা আসনগুলোতে তৃণমূলকে রীতিমতো কোণঠাসা করে ফেলেছিল। কিন্তু ২০১৯-এ আইন পাস হওয়ার পরেও নিয়মাবলী তৈরি করতে দীর্ঘ সময় নেওয়া এবং ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে বিধি কার্যকর করা নিয়ে মানুষের মধ্যে একটা সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করেছিল।

আজ ২০২৫ সালে এসে মতুয়াদের সামনে এক নতুন বিপদ হাজির হয়েছে – ‘এসআইআর’ বা স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন। নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা স্বচ্ছ করার নামে এই বিশেষ প্রক্রিয়া শুরু করতেই মূল উদ্দেশ্য বেরিয়ে এসেছে। আসল কথা হল ২০০২ সালের পর থেকে ভোটার তালিকায় যারা অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, তাঁদের নাম যাচাই করা। অর্থাৎ, প্রতিটা ভোটারকে প্রমাণ করতে হবে যে, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তাঁর বা তাঁর বাবা-মায়ের নাম ছিল। এই ম্যাপিং প্রক্রিয়া বা সংযোগ স্থাপন করতে গিয়েই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে লক্ষ লক্ষ মতুয়া মানুষের। তথ্য বলছে, পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে মতুয়া অধ্যুষিত বনগাঁ ও রানাঘাট এলাকাতেই ‘নন-ম্যাপড’ বা ম্যাপিংবিহীন ভোটারের সংখ্যা সবথেকে বেশি। এই ম্যাপিংবিহীন ভোটার মানে হল তাঁরা, যাঁরা ২০০২ সালের নথির সাথে নিজেদের বর্তমান ভোটার কার্ডের কোনও লিংক খুঁজে পাচ্ছেন না। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষের কোনো ম্যাপিং নেই। এই বিপদের আঁচ পেয়ে বিজেপির অন্দরেও এখন অস্থিরতা, হলচল। বিজেপির মতুয়া নেতা, গাইঘাটার বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর সরাসরি স্বীকার করে নিয়েছেন যে, এই প্রক্রিয়ার ফলে বহু মতুয়া ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ যেতে পারে। তাঁর এই স্বীকারোক্তি মতুয়া সমাজে এক দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। যে বিজেপি নাগরিকত্ব দেওয়ার গ্যারান্টি দিয়েছিল, তাঁদেরই নেতার মুখ থেকে এখন ভোটাধিকার হারানোর কথা শুনতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এবারে শান্তনু ঠাকুর ইত্যাদিরা বলছেন নির্বাচন কমিশন তো ভোটার তালিকায় নাম বজায় রাখার জন্য ১১টা বিশেষ নথির এক তালিকা প্রকাশ করেছে। এই নথিগুলোর যেকোনও একটার মাধ্যমে নাগরিকত্ব বা দীর্ঘ বসবাসের প্রমাণ দিতে হবে। এই ১১টা নথির তালিকায় রয়েছে – (১) সরকারি পরিচয়পত্র বা পেনশন পেমেন্ট অর্ডার, (২) ১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগের কোনও সরকারি বা ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসের নথি, (৩) বৈধ জন্ম শংসাপত্র, (৪) পাসপোর্ট, (৫) ম্যাট্রিকুলেশন বা শিক্ষাগত শংসাপত্র, (৬) স্থায়ী বসবাসের প্রমাণপত্র, (৭) বন অধিকার শংসাপত্র, (৮) ওবিসি/এসসি/এসটি শংসাপত্র, (৯) এনআরসি-র তথ্য (যেখানে আছে), (১০) পারিবারিক রেজিস্টার এবং (১১) জমি বা বাড়ি বরাদ্দের নথি। কিন্তু সমস্যাটা হল, মতুয়াদের মতো এক উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীর সিংহভাগ মানুষের কাছে এই নথিগুলোর একটাও নেই। যারা ১৯৭১ সালের পর ও ২০০৪ সালের আগে এ দেশে এসেছেন, তাঁদের কাছে ১৯৮৭ সালের আগের কোনও ভারতীয় নথি থাকা অসম্ভব। অনেকেরই জন্ম হয়েছে বাংলাদেশে, ফলে তাঁদের কাছে জন্ম শংসাপত্র নেই। আবার যাঁরা পশ্চিমবঙ্গে জন্মের দাবি করেন, তাঁদেরও অনেকেরই দারিদ্র্য বা অসচেতনতার কারণে জন্ম নথি নেই। জমিহীন বা গরিব এই মানুষগুলোর কাছে পাসপোর্ট বা পেনশন পেমেন্ট অর্ডারের কথা ভাবাই যায় না। সবথেকে বড় বিষয় হল, নির্বাচন কমিশন আধার কার্ডকে নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে মানতে অস্বীকার করেছে। ফলে যে আধার কার্ড দেখিয়ে মতুয়ারা ভাবতেন তাঁরা সুরক্ষিত, সেই সুরক্ষাকবচ আজ ছিঁড়ে পড়েছে। বিএলও বা বুথ লেভেল অফিসাররা যখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই নথিগুলো চাইছেন, তখন মতুয়ারা খালি হাতে দাঁড়িয়ে থাকছেন। এর ফলে কয়েক লক্ষ মানুষের নাম খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়ার মুখে দাঁড়িয়েছে এবং এক অদ্ভুত যুক্তি দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর বা অন্যান্য বিজেপি নেতারা। তাঁরা বলছেন যে, যদি এসআইআর-এর কারণে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ যায়, তবে চিন্তার কিছু নেই। যারা বাদ পড়বেন, তাঁরা সিএএ-তে নাগরিকত্বের আবেদন করে পুনরায় ভোটার তালিকায় ফিরতে পারবেন।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | বিজেপিকে গিলে খেয়েছে দুই গুজরাতি – নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ

কিন্তু এই যুক্তির আড়ালেও এক ভয়াবহ ফাঁদ রয়েছে যা মতুয়ারা এখন বুঝতে শুরু করেছেন। সিএএ বা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের মাধ্যমে আবেদন করার অর্থ হল নিজের মুখেই স্বীকার করা যে, সেই মানুষটা বর্তমান ভারতের নাগরিক নন, আর তার উপরে তিনি একজন বিদেশি অনুপ্রবেশকারী। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, একজন ভোটার যিনি বছরের পর বছর এ দেশে ভোট দিয়ে আসছেন, তিনি যদি আজ সিএএ পোর্টালে গিয়ে আবেদন করেন, তবে তাঁকে হলফনামা দিয়ে বলতে হবে যে তিনি আগে বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন এবং ধর্মীয় নিগ্রহের কারণে এ দেশে এসেছেন। এই আবেদন করার সাথে সাথেই তাঁর বর্তমান ভোটাধিকার এবং নাগরিক সুবিধা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যাবেই। মানে, যাকে আজ বিজেপি ‘গাজর’ হিসেবে দেখাচ্ছে, তা আদতে এক দীর্ঘ আইনি জটিলতার শুরু। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই পয়েন্টটাকেই হাতিয়ার করেছেন। তিনি সাফ জানিয়েছেন, সিএএ-র মাধ্যমে নাগরিকত্বের আবেদন করলে সাধারণ মানুষ নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনবেন। আর ঠিক সেই সময়ে সুব্রত ঠাকুরের স্বীকারোক্তি যেন এই বিপন্নতার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে। তিনি যখন বলেন যে, মতুয়া ভোটারদের নাম বাদ যাবে, তখন তিনি পরোক্ষভাবে বিজেপির ব্যর্থতাকেই মেনে নিচ্ছেন। বিজেপি ভেবেছিল সিএএ কার্ড খেলে তারা সীমান্ত জেলাগুলোতে চিরস্থায়ী আধিপত্য কায়েম করবে, কিন্তু নির্বাচন কমিশনের এই কড়া এসআইআর প্রক্রিয়া সেই পরিকল্পনাকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। ২০২৫ সালের এই বিশেষ ভোটার তালিকা সংশোধনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করা হচ্ছে। এই এআই-এর কাজ হল ভোটারদের দেওয়া তথ্যের মধ্যে অসঙ্গতি খুঁজে বের করা। দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় প্রায় ১ কোটি ৩৬ লক্ষ ভোটারের তথ্যে নানা সমস্যা রয়েছে। মতুয়া অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে এই সমস্যা আরও গভীর। কারণ এখানে অসংখ্য মানুষের নাম ‘নন-ম্যাপড’ ক্যাটাগরিতে পড়ে গিয়েছে। এই মানুষগুলো ২০০২ সালের তালিকার সাথে নিজেদের যোগসূত্র দেখাতে পারেননি। গাইঘাটা, বনগাঁ উত্তর, বনগাঁ দক্ষিণ, স্বরূপনগর, কল্যাণী এবং হরিণঘাটার মতো আসনগুলোতে ভোটারদের এক বিশাল অংশ আজ শুনানির নোটিশ পাওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছেন। নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট বলছে, প্রায় ৮৫ লক্ষ ভোটারের বাবার নাম ভোটার তালিকায় ভুল রয়েছে বা মিসম্যাচ করছে। এই ভুল সংশোধন করতে গেলেও নথির প্রয়োজন, যা মতুয়াদের কাছে নেই। ফলে এক অদৃশ্য দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে কয়েক লক্ষ মানুষের।  মতুয়াদের এই বিপন্নতার সুযোগ নিয়ে ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলেও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক সংঘাত। একদিকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর ও বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর বিজেপির হয়ে সাফাই গাইছেন, অন্যদিকে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর পাল্টা আক্রমণ শানাচ্ছেন। ঠাকুরবাড়ির এই ফাটল সাধারণ মতুয়া ভক্তদের আরও বিভ্রান্ত করে তুলেছে। ঠাকুরনগরের কামনাসাগরে স্নান করতে আসা পুণ্যার্থীদের মনে আজ এক রাশ সংশয়। তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, “আমরা যদি নাগরিক নাই হব, তবে আমাদের পূর্বপুরুষরা কীভাবে এ দেশে মারা গেলেন? তাঁদের শ্মশান সার্টিফিকেট বা ডেথ সার্টিফিকেট এর কি কোনও মূল্য নেই? আরেকটা কেলেঙ্কারি হল বিজেপি পরিচালিত ‘সিএএ ক্যাম্প’গুলোতে ১০০ টাকার বিনিময়ে ‘মতুয়া মহাসংঘ এলিজিবিলিটি কার্ড’ বিলি করা হয়েছে। শান্তনু ঠাকুরের দাবি, এই কার্ডটা নাগরিকত্বের আবেদনের জন্য এক সহায়ক নথি, কিন্তু এখন সবাই জেনে ফেলেছেন যে, এই কার্ডের কোনও আইনি বৈধতা নেই। এটা কেবল একটি ধর্মীয় সংগঠনের পরিচয়পত্র। নির্বাচন কমিশন বা ভারত সরকার এই কার্ড দেখে কাউকেই নাগরিকত্ব দেবে না। ফলে সাধারণ মানুষ বলছেন, টাকা নিয়ে তাঁদের এক ভুয়ো প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে। এবং শেষমেষ বিজেপির অন্যতম মতুয়া মুখ হিসেবে পরিচিত সুব্রত ঠাকুর যখন স্বীকার করে নেন যে, নাম বাদ যাবে তখন তা তাঁর দলের জন্য এক বিশাল রাজনৈতিক ঝুঁকি হয়ে দাঁড়ায়। বনগাঁ এবং রানাঘাট লোকসভা এলাকায় বিজেপির যে শক্ত ঘাঁটি তৈরি হয়েছিল, তা এই এক স্বীকারোক্তিতেই নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।

২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনে মতুয়ারা যদি বিজেপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন, তবে বিজেপির ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে। সীমান্ত এলাকার ভোটাররা এখন বুঝতে পারছেন যে, বিজেপি তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা আসলে এক ভোটের বৈতরণী পার হওয়ার কৌশল ছিল মাত্র। ইতিমধ্যেই নদিয়ার কল্যাণী এবং উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় বিজেপির সিএএ ক্যাম্পগুলোতে বিক্ষোভ দেখা দিচ্ছে। সাধারণ মতুয়ারা এখন দলমত নির্বিশেষে নিজেদের নথিপত্র জোগাড় করতে মরিয়া। কিন্তু ১১টা নথির যে পাহাড় প্রমাণ বাধা নির্বাচন কমিশন তৈরি করেছে, তা পার হওয়া তাঁদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। বিএলও-রা যখন নাম কাটার কথা বলছেন, তখন রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিশ্রুতির কোনও দামই থাকছে না সাধারণ মানুষের কাছে। আর ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়া মানে তো কেবল ভোট দেওয়ার অধিকার হারানো নয়, বরং একজন মানুষের রাষ্ট্রীয় পরিচয় মুছে যাওয়া। মতুয়ারা আজ যে পরিস্থিতির মুখোমুখি, তা আক্ষরিক অর্থেই এক মানবিক বিপর্যয়। যারা কয়েক দশক ধরে এই মাটিতে চাষবাস করেছেন, ছেলেমেয়েকে মানুষ করেছেন, আজ তাঁদেরই প্রমাণ করতে হচ্ছে যে, তাঁরা এই মাটির যোগ্য সন্তান। হ্যাঁ, ২০২৬-এর নির্বাচনে এর প্রভাব এড়াতে পারবে না বিজেপি দল এটা নিশ্চিত, কিন্তু এই লক্ষ মানুষের বেনাগরিক হয়ে পড়াটাও তারচেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

Read More

Latest News