Friday, October 24, 2025
HomeScrollAajke | লন্ডনের ষড়যন্ত্রে বিজেপি সিপিএম হাত মিলিয়েছে

Aajke | লন্ডনের ষড়যন্ত্রে বিজেপি সিপিএম হাত মিলিয়েছে

অক্সফোর্ডে কেলগ কলেজে একটা ষড়যন্ত্রের কথা আগেই খানিক জানা গিয়েছিল, খানিকটা অনুমান আর কিছু তথ্যের ভিত্তিতেই মুখ্যমন্ত্রীকেও এই খবর দেওয়া হয়েছিল আর সেই জন্যেই তিনিও খানিক প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু খামোখা এটাকে ষড়যন্ত্র বলছি কেন? মানে একজন রাষ্ট্রনেতা, রাজনৈতিক নেতা যাবেন, বিরোধীরা বিক্ষোভ দেখাবে এটা তো খুব স্বাভাবিক। হ্যাঁ স্বাভাবিক, মমতা এয়ারপোর্টে নামলেন, কিছু লোকজন কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন, মমতা অক্সফোর্ডে ঢুকছেন, কিছু ছাত্রছাত্রী সেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ দেখালেন। এগুলো স্বাভাবিক। ধরুন সেই ৬৪ তে বিপ্লবের এক নায়ক নিউ ইয়র্কে যাচ্ছেন ইউনাইটেড নেশনসের সভায় ভাষণ দিতে। তাঁর হোটেলের বাইরে খুনি চে ফিরে যাও গোছের প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছিল, এন আর সি, সি এ এ র পরে নরেন্দ্র মোদিকে বিদেশে সম্মিলিত বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মী সমর্থকরা এইভাবেই বিক্ষোভ দেখান। নানান দেশের রাজনৈতিক নেতা, রাষ্ট্রপ্রধানকে এই বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে, নতুন কিছু নয়। কিন্তু এখানে ব্যাপারটা আলাদা। তিনি একটা সেমিনারে যাবেন, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে কেলগ কলেজে সেই সেমিনার হবে, আলোচনা সভায় তিনি বলবেন, বলবেন কেলগ কলেজের প্রেসিডেন্ট জোনাথন মিসি, তিন বছর আগে যিনি ছিলেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিরেক্টর ফর কন্টিনিউইং এডুকেশন, তারপরে তাঁকে প্রশ্ন করবেন লর্ড করণ বিলিমোরিয়া এবং সেটাই ছিল অনুষ্ঠান সূচি। না এই আলোচনাতে পাবলিকের প্রশ্নোত্তরের কোনও সুযোগ ছিল না। কিন্তু এই সফরকে ঘিরে সেই তখন থেকেই এক ষড়যন্ত্র শুরু হয়, প্রথমে বলা হতে থাকে যে এরকম কোনও আমন্ত্রণ পত্র নেই, সেসব যখন মিথ্যে প্রমাণিত হল তখন বলা হতে থাকল এসব পয়সা ঢেলে এক মদ ব্যবসায়ীকে সুযোগ করিয়ে দিয়ে করানো হচ্ছে। জানা গেক করণ বিলিমোরিয়া তাঁর বিয়ারের কোম্পানি বহু বছর আগেই বিক্রি করে দিয়েছেন। এরপর সভায় মমতা ব্যানার্জির বক্তৃতা চলাকালীন দেখা গ্যালো কিছু লোকজন পোস্টার বের করে প্রতিবাদ জানানো শুরু করলেন, তারপর তাঁরা মিলিতভাবে চিৎকার শুরু করলেন, উদ্দেশ্য সভা বানচাল করা, এবং এখন জানা যাচ্ছে এই বিক্ষোভ এস এফ আই এবং বিজেপির এক যৌথ উদ্যোগ ছিল। এবং তা এখন সবটাই প্রমাণ সমেত আমাদের সামনে। সেটাই বিষয় আজকে। লন্ডনের ষড়যন্ত্রে বিজেপি সিপিএম হাত মিলিয়েছে।

ষড়যন্ত্রের কথা জানতেন বলেই আরও বেশি স্বচ্ছন্দ ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এসব হয়ে যাওয়ার পরে তিনি বলেছেন ‘‘আমি বছরে দু’বার করে অক্সফোর্ডে আসব। যত বার বলবেন, তত বার আসব। আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমায় ভালো করে কোনও কাজ করে দিতে বললে ঘর মুছে, কাপড় কেচে, রান্না করে বা বাসন মেজে দিতে পারব। কিন্তু ভয় দেখালে হবে না। আমি ভয় পাই না। আমি আমার মাথা নত করি একমাত্র জনতার সামনে। আর কারও সামনে নয়।’’ এবং সেদিন তাঁর কথা শুনে মনে হয়েছে তিনি এটাকে বাম বা অতি বামদের এক ষড়যন্ত্র হিসেবেই নিয়েছিলেন, তিনি ওখানেই বলেন “আপনারা আপনাদের পার্টিকে আরও মজবুত করুন। যাতে আমার সঙ্গে তারা লড়তে পারে!’’

আরও পড়ুন: Aajke | অক্সফোর্ডে যা করলেন, সেটার প্রতিক্রিয়া সামলাতে পারবেন তো কমরেডস?

কিন্তু পরে নামধাম ছবি আর সমাজ মাধ্যমের বিভিন্ন বিষয় আমাদের সামনে। সে দিন রাতেই সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই সামাজিক মাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিল তাঁদের এই বিপ্লবী অভিযানের কথা। তাঁরা এ নিয়ে বেশ গর্ব করেই প্রচার করেছিলেন যে তাদের ইউকে শাখার সদস্যরা পোস্টার নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। এবং দেখাই যাচ্ছে যে এসএফআই’র ইউকে শাখার সম্পাদক নিখিল ম্যাথু, অস্বাথী অশোক সহ অন্তত ৮–১০ জন পড়ুয়া ওই বিক্ষোভে ছিলেন। কিন্তু এস এফ আই বুঝতে পারেনি যে এত তাড়াতাড়ি তাঁদের বিজেপি বন্ধুরাও সবটা বলে দেবেন। আমাদের কাছে পাক্কা খবর গেরুয়া শিবিরের সুনীল ডোকওয়াল নামে এক ব্যক্তি, রজতশুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক চিকিৎসক সে দিন বিশৃঙ্খলার নেতৃত্বে ছিলেন। এঁদের ফেসবুক পেজ বলে দিচ্ছে যে এই ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত আর তাঁরা বিজেপির সক্রীয় কর্মী সমর্থক। মানে কেবল নির্বাচনে ভোট ট্রান্সফার নয়, সিপিএম এখন প্রকাশ্যেই এইভাবে বিজেপির সঙ্গে মিলিত অপারেশনস চালাবে। কিন্তু এই কেলগ কলেজে কী হল তা নিয়ে আমাদের রাজ্যে কি খুব বেশি প্রভাব পড়বে? পড়বে না, যদি সামান্য কিছু প্রভাব পড়েও বা, তা সিপিএম এর পক্ষে খুব সুবিধের হবে না। এই বাম রাম মিলিত বিক্ষোভের কারণে একটু হলেও এস এফ আই, সিপিএম এর মুখ পুড়েছে। কিন্তু এটাই মূল বিষয় নয়, সেই ২০১৯ থেকেই আগে রাম পরে বাম এর বিপদজনক রাজনৈতিক লাইন আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, এবারে শেষ লড়াই এর প্রস্তুতি নিচ্ছে বিজেপি, আর তারা জানিয়েছে আরও ৩% ভোট বৃদ্ধির লড়াই এ তারা সিপিএম কে সঙ্গে চায়, সম্ভবত সেই চাহিদাকে মেলাতেই কোথাও একটা জোট তৈরি হচ্ছে, নব্য বাম রাম জোটের প্রেক্ষিতেই এই নির্বাচন হয়ে উঠবে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এবং বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবর বলছে ২৬–এর বিধানসভা ভোটের আগে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ তীব্র করতে চাইছে বিজেপি। তাতে অনুঘটকের ভূমিকা নিতে আসরে নামছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ । তারা বাংলার প্রতিটি গ্রাম এবং শহরের পাড়ায় ‘হিন্দু সম্মেলন’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আরএসএসের এই উদ্যোগ হিন্দু ভোট এককাট্টা করতে সাহায্য করার জন্যই হিন্দু সম্মেলনগুলোর হোয়াইট ইজ টু বি ডন এর তালিকাও বানাতে শুরু করেছে সঙ্ঘ। বর্ষা মিটলেই জোরকদমে শুরু হয়ে যাবে এই সব সম্মেলন। বঙ্গ–বিজেপির আপাতত একটাই লক্ষ্য, মেরুকরণের রাজনীতি করে যেনতেন প্রকারে হিন্দু ভোট একত্র করা। সেই লক্ষ্যে তারা কোনও একটা বিষয়কেও ছেড়ে যেতে চায় না, প্রকাশ্যে না হলেও সিপিএম এর একটা অংশকে তাঁরা সঙ্গে পেতে চান, লন্ডনের ষড়যন্ত্র সেই কথাই তুলে ধরলো। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেষ করেছিলাম যে লন্ডনে আমরা বিজেপি, বা বলা ভালো সংঘের লোকজনকে সিপিএম এর ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে দেখতে পেলাম, ঐক্যবদ্ধভাবেই তাঁরা মমতার ভাষণ, আলোচনা সভা ভন্ডুল করার চেষ্টা করেছেন, আপনাদের কি মনে হয় আগামী ২০২৬ এর নির্বাচনে সিপিএম বিজেপি প্রকাশ্যে না হলেও গোপনে হাত মেলানোর চেষ্টা চালিয়েই যাবেন? শুনুন মানুষজনের মতামত।

সঙ্ঘের এক প্রবীণ নেতা নাকি কদিন আগেই তাঁদের কর্মী সভায় বলেছেন, ‘হিন্দু সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। শুধু প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশেই নয়, পশ্চিমবঙ্গেও হিন্দুরা আক্রান্ত। তাই সনাতনী সংস্কৃতি শআরও ছড়িয়ে হিন্দু সমাজকে যতটা বেশি সম্ভব একজোট করতে হবে। আর তার জন্য মমতা বিরোধী সমস্ত শক্তিকে নিয়েই চলতে হবে। উঠে এসেছে উদাহরণ, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে জরুরি অবস্থার সময়ে আর এস এস তো ছিল জনতা পার্টির মধ্যেই, তাঁদের সঙ্গে বোঝাপড়াতে তো কোনও অসুবিধে হয় নি, রাজীব গান্ধীর বিরুদ্ধে লড়ার সময়েও বামপন্থীরা প্রকাশ্য মঞ্চেই আমাদের সঙ্গে ছিলেন, তাহলে আজ মমতাকে হাটানোর জন্য আমরা বামপন্থীদের সাহায্য নেবো না কেন? হ্যাঁ এই বাম ডান এর মিলিত এক ষড়যন্ত্র আগামী দিনের রাজনীতিকে আরও পরিষ্কার করে দিল।

Read More

Latest News