ওয়েব ডেস্ক : পশ্চিম মেদিনীপুরের (East Midnapore) কেশপুরে ঘাসের উপর শিশির বিন্দু আর কাশফুলের দোলা জানান দেন মা উমা আসছেন। শরৎ কালীন শারদীয়া মা দূর্গার (Lord Durga) মূর্তি সাধারণত দশভূজা। তবে মা “অষ্টাদশভূজা” (Ashtadashabhuja) রূপে পূজিত হন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অন্তর্গত কেশপুরের গড়সনাপোতা গ্রামের দেব পরিবারে। পশ্চিমবঙ্গের এক এবং অদ্বিতীয় এই “অষ্টাদশভূজা” দুর্গা প্রতিমা!
সারা বছর ধরে কংক্রিটের মূর্তি মন্দিরে পূজিত হন। শারদীয়ার সময় নতুন প্রতিমা গড়ে তোলা হয়। তবে মা দুর্গার সঙ্গে এখানে কার্তিক গণেশ বা লক্ষী-সরস্বতীর মূর্তি থাকে না, পটো-চিত্রে তাদেরকে অঙ্কন করা হয় এবং দাস-দাসী সহকারে। দীর্ঘ প্রায় ৪৫০ বছর ধরে “অষ্টদশভূজা” পূজা আর্চনা করে আসছেন দেব পরিবার। দেব পরিবারের আদি বসবাস ছিল, পশ্চিম মেদিনীপুর (East Midnapore) জেলার অন্তর্গত আনন্দপুর থানার আড়রাগড় গ্রামে। বর্গী আক্রমনের সময় তৎকালীন রাজা ত্রিলোচন দেব যুদ্ধে পরাজিত হন!
আরও খবর : নিম্নচাপের কারণে ফের ভাসবে কলকাতা সহ জেলাগুলি!
তারপর বিষ্ণু মন্দিরে গিয়ে দেব-দেবীদের আরাধনা শুরু করেন। সেই সময় তৎকালীন বর্ধমানের রাজা বাঁকুড়া রায় দেব পরিবারে এসে “অষ্টাদশভূজা” দুর্গা মাতার পূজা (Durga Puja) শুরু করেন। সেই থেকেই মা পূজিত হয়ে আসছেন ১৮ বাহুতে রণ শয্যায় সজ্জিত হয়ে। বর্গী আক্রমণের পর সেখান থেকেই উঠে চন্দ্রকোনা এবং ত্রিলোচনপুর হয়ে বর্তমানে গড়সনাপোতা গ্রামে অধিষ্ঠিত দেব পরিবার ও “অষ্টদশভূজা” দুর্গা মা।
শারদীয়ার প্রাক্কালে প্রত্যেক বছর নতুন করে মাটি দিয়ে তৈরি করা হয় মায়ের মূর্তি। শুধু মায়ের মূর্তিই নয়, গহনা থেকে সাজসজ্জা সবকিছু মাটি দিয়েই তৈরি করা হয়। গীতাষ্টমীর পরের দিন থেকেই কৃষ্ণ “নবমাদী কল্প” থেকেই ১৩ দিন ১৩ দেবীর পূজা হয়। ষষ্ঠীতে বেলবরন এবং সপ্তমীতে নবপত্রিকা স্নানের মধ্য দিয়েই মূল পূজোর শুরু। সপ্তমী থেকে শুরু হয় হোম যজ্ঞ! যা একটানে চলতে থাকে দশমীর দিন পর্যন্ত। সন্ধিক্ষণের পর বিশেষ পুজো হয়।
“দেব নগরী” হরফে লেখা বিশেষ পুঁথির মন্ত্র উচ্চারণে গোপন পূজো হয় “অষ্টাদশভূজা” (Ashtadashabhuja) মা এর। সন্ধিক্ষণে ছাগ বলী এবং নবমীতে দণ্ডী কেটে মায়ের আরাধনায় মেতে উঠেন দেব পরিবারের ৮ থেকে ৮০ সকলেই। বিশেষ রীতি হিসেবে পূজোর সময় পরিবারের কোন সদস্যই বাড়ির বাইরে যেতে পারেন না। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে দেব পরিবারের “অষ্টদশভূজা” র পূজার্চনা। পুজোর সময় কার্যত কয়েক লক্ষ মানুষ ভিড় জমান এই “অষ্টদশভূজা” দেবীর দর্শন করতে।
দেখুন অন্য খবর :