নয়াদিল্লি: চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী সাফল্য। হৃদস্পন্দন থেমে যাওয়ার পরও মৃতদেহে ফের রক্ত সঞ্চালন শুরু করে চমক দেখালেন দিল্লির (Delhi) চিকিৎসকরা। অঙ্গদানের জন্য মৃত্যুর পর দেহে রক্ত চলাচল পুনরায় চালু করা, এশিয়ায় (Asia) এই প্রথম। এই অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে এইচসিএমসিটি মণিপাল হাসপাতালের মেডিক্যাল টিম।
মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত ৫৫ বছরের গীতা চাওলা দীর্ঘদিন শয্যাসায়ী ছিলেন। ৫ নভেম্বর তাঁকে শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে ভর্তি করা হয় দ্বারকার এইচসিএমসিটি মণিপাল হাসপাতালে। জীবিত অবস্থায় তাঁর শেষ ইচ্ছা ছিল, মৃত্যুর পর অঙ্গদান করবেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরিবারের সম্মতিতে লাইফ সাপোর্ট তুলে নেওয়া হয়। ৬ নভেম্বর রাত ৮টা ৪৩ মিনিটে মৃত্যু হয় গীতার।
আরও পড়ুন: “হ্যারিকেন নয়, এলইডি জ্বলবে বিহারে…,” RJD-কে নিশানা যোগীর
গীতার শেষ ইচ্ছা পূরণে হাসপাতালের চিকিৎসকরা ব্যবহার করেন এক বিরল ও জটিল চিকিৎসা পদ্ধতি—নরমোথারমিক রিজিওনাল পারফিউশন (NRP)। এই পদ্ধতিতে এক্সট্রাকর্পোরিয়াল মেমব্রেন অক্সিজেনেটর (ECMO) ব্যবহারের মাধ্যমে মৃত্যুর ৫ মিনিট পরই দেহে রক্ত সঞ্চালন পুনরায় চালু করতে সক্ষম হন চিকিৎসকরা।
মণিপাল ইনস্টিটিউট অফ ক্রিটিকাল কেয়ার মেডিসিনের চেয়ারম্যান ড. শ্রীকান্ত শ্রীনিবাসন বলেন, “চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটি এক বিরল সাফল্য। মৃত্যুর পর দেহে পুনরায় রক্ত চলাচল চালু করে অঙ্গ সংরক্ষণের এমন উদাহরণ এশিয়ায় এই প্রথম। সাধারণত ব্রেন ডেথ রোগীর অঙ্গই দান করা যায়, কারণ হৃদস্পন্দন তখনও থাকে। কিন্তু স্বাভাবিক মৃত্যুর পর এই প্রক্রিয়া কার্যত অসম্ভব। এবার আমরা তা সম্ভব করেছি।”
চিকিৎসক দলের দাবি, এই NRP পদ্ধতির মাধ্যমে তাঁরা লিভার ও কিডনি দীর্ঘ সময় ধরে নিরাপদে সংরক্ষণে সফল হয়েছেন। ন্যাশনাল অরগান অ্যান্ড টিস্যু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজেশন (NOTTO) দ্রুত অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা করে। গীতার লিভার প্রতিস্থাপিত হয় ইনস্টিটিউট অফ লিভার অ্যান্ড বিলিয়ারি সায়েন্সে চিকিৎসাধীন ৪৮ বছরের এক রোগীর শরীরে। তাঁর দুটি কিডনি প্রতিস্থাপিত হয় সাকেতের ম্যাক্স হাসপাতালে ৬৩ ও ৫৮ বছরের দুই ব্যক্তির শরীরে। এমনকী তাঁর কর্নিয়া ও ত্বকও দান করা হয় দুই রোগীকে।
চিকিৎসক মহলে এই সাফল্যকে “অঙ্গদানের ক্ষেত্রে বিপ্লবী পদক্ষেপ” হিসেবে দেখা হচ্ছে। গীতা চাওলার আত্মত্যাগ আর চিকিৎসকদের এই অভিনব প্রয়াস, দু’য়ে মিলে ভারতীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানে তৈরি করেছে এক অসামান্য মানবিক দৃষ্টান্ত।
দেখুন আরও খবর:







