Wednesday, November 19, 2025
HomeScrollAajke | বিহারে করলে লীলা, আর বাংলায় করলে বিলা?
Aajke

Aajke | বিহারে করলে লীলা, আর বাংলায় করলে বিলা?

বাংলার যে যে কাজকে খারাপ বলা হচ্ছে, সেই কাজগুলোই বিজেপি শাসিত রাজ্যে করে ঢাক বাজানো হচ্ছে!

Written By
অনিকেত চট্টোপাধ্যায়

শোনা গেল, বর্ধমানে কন্যাশ্রী পেয়েছেন যাঁরা, উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়াদের নাকি এই এসআইআর-এর এনুমারেশন ফর্ম ফিলাপের কাজে লাগানো হচ্ছে, আরও কিছু জেলাতে এ ধরণের কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একা বিএলও-রা পারছেন না, ৪ নভেম্বর তারিখে বিএলও-দের কাজ শুরু হওয়ার পর গতকালও আরও অতিরিক্ত বিএলও নিয়োগ করা হচ্ছে, বিএলও-রা চাপ নিতে পারছেন না। সাধারণ ভোটারদের কথা বাদই দিলাম, কেরালাতে একজন সহকারি শিক্ষক বিএলও চাপ সহ্য না করতে পেরে আত্মহত্যা করেছেন, তামিলনাড়ু থেকেও এরকম একটা খবর এসেছে। সেরকম একটা সময়ে সেই ছাত্রীরা যাঁরা উচ্চ মাধ্যমিক পড়ছেন, যাঁরা সরকারের কাছ থেকে সেই জন্যই খানিক আর্থিক সাহায্য পাচ্ছেন, তাঁদেরকে এই কাজে নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু রেগে আগুন, তেলে বেগুন ভাতারের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সুভাষ মণ্ডল। তিনি তৃণমূল ঘুরে বিজেপিতে গিয়ে আবার তৃণমূলে না আসতে পেরে ভয়ঙ্কর বিজেপি। তো তাঁর অভিযোগ, ‘‘পুরোপুরি নিয়ম বহির্ভূত কাজ। সর্বদল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনাও হয়নি।’’ বিজেপির বর্ধমান সাংগঠনিক জেলা সহ-সভাপতি সঞ্জীব সেনের অভিযোগ, ‘‘কন্যাশ্রীদের কাজে লাগিয়ে সহযোগিতার নামে রাজ্য সরকার প্রকল্পের প্রচার করছে। এটা রাজনীতি।’’ রাজ্য সরকারের মাইনে পাওয়া শিক্ষকেরা কাজ করতে পারেন, কিন্তু এক অসম্ভব জনপ্রিয় প্রকল্পের সাহায্য যাঁরা পাচ্ছেন, তাঁদের ব্যবহার করা যাবে না, অন্তত বিজেপির সেটাই বক্তব্য। আর সেটাই বিষয় আজকে, বিহারে করলে লীলা, আর বাংলায় করলে বিলা?

যে কথা বলছিলাম, কন্যাশ্রীরা এসআইআর এনুমারেশন ফর্ম ফিলাপ করলে বিজেপির খুব আপত্তি, এতে নাকি সরকারি প্রকল্পের বিজ্ঞাপন হয়ে যাবে। এই বিজেপির শাসনে বিহারে দেড় কোটি ‘জীবিকা দিদি’রা এই কাজই করেছেন। ‘জীবিকা দিদি’, বিহার সরকারের এক মহিলাদের সেলফ-হেল্প গ্রুপ প্রকল্প, তাঁরা কেবল এই কাজই করেননি, বিহারে নির্বাচন কমিশন, হ্যাঁ, খোদ সংঘি জ্ঞানেশ কুমারের নির্বাচন কমিশন এই দেড় কোটি ‘জীবিকা দিদি’কে বুথ ম্যানেজমেন্ট করার কাজও দিয়েছিলেন যাতে করে ভোটদানের সংখ্যা বাড়ে। সেসব এক্কেবারে ভুলে মেরে দিয়েছেন এই বিজেপি নেতারা। তাঁদের অবস্থা সেই ‘কৃষ্ণ করলে লীলা, আমরা করলে বিলা’র মতো, ঠিক জায়গা মতো তাঁরা নিজেদের আগের করা কাজ ভুলে যান, কিন্তু আমরা তো ভুলিনি। এবার নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি করা হোক এই কন্যাশ্রীদের দিয়ে, লক্ষ লক্ষ কন্যাশ্রীদের দিয়ে যুবশ্রীদের দিয়ে, লক্ষ্মীর ভান্ডারে যাঁরা সাহায্য পেয়েছেন, সেই ক্লাবগুলো, যাঁরা দুর্গাপুজোর সময়ে টাকা পেয়েছেন সরকারের কাছ থেকে তাঁদের ভোটার আনার কাজে লাগান, তাঁদের বুথ ম্যানেজমেন্টের কাজে লাগানো হোক। তৃণমূল নেতারা এই দাবি নিয়ে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করুন, ঐ ‘জীবিকা দিদি’দের যে সামান্য টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে, সেটা দেওয়া হোক এই রাজ্যেও। বিহারে এক রকমের নিয়ম, বাংলাতে আরেক রকমের নিয়ম তো চলতে পারে না! কাজেই কাজে লাগানো হোক সরকারি প্রকল্পের সমস্ত বেনিফিসিয়ারিদের। তবে তো লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে। আর যদি নির্বাচন কমিশন তা না করে, তাহলে সেই প্রচার নিয়ে যাওয়া হোক এইসব কোটি কোটি বেনিফিসিয়ারিদের কাছে, বুথের সামনে ধরণা হোক, বন্ধ হোক এই বাঁদরামি।

আরও পড়ুন: Aajke | রবীন্দ্রনাথ, রামমোহন, বিদ্যাসাগর, বিবেকানন্দ বিরোধী বিজেপি বাংলাতে অচল পয়সার থেকেও খারাপ

বিহারের নীতীশ কুমারের ‘জীবিকা দিদি’রা যদি বুথ ম্যানেজমেন্টের কাজ করতে পারেন, তাহলে লক্ষ্মীর ভান্ডার বা পাড়ার ক্লাবের ছেলেরা বা কন্যাশ্রী যুবশ্রীরা কেন সেই কাজ করতে পারবে না? ভোট হয়ে গেলে, রেজাল্ট মন মতো না হলে, হেরে গেলে, কেবল দোষারোপ করলে হবে না, শুরু থেকেই এই বিরোধিতার সুরকে সপ্তমে তুলতে হবে। বিহারে এক নিয়ম, বাংলাতে আরেক নিয়ম মানছি না মানবো না, এই স্লোগান উঠুক। বাংলাতেও ঘোষণা করে দেওয়া হোক, মে মাস জুড়ে কন্যাশ্রীর টাকা ঢুকবে, লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা ঢুকবে ব্যাঙ্কের খাতায়, অনগোইং স্কিম হিসেবেই সেই টাকা ঢুকবে, যে কোনও অন্য খাত থেকেই নেওয়া হোক সেই টাকা, বিহার যদি ওয়ার্লড ব্যাঙ্কের স্বচ্ছ পানীয়ের টাকা মহিলাদের অ্যাকাউন্টে পাঠাতে পারে, তাহলে বাংলারও সেই অধিকার আছে। হ্যাঁ, এই ভাবেই লড়াইটা হোক। যে কোনও শর্তে, যে কোনও মূল্যে, যাঁদের বাংলার মসনদ দরকার, তাঁদের বোঝানো হোক, তাঁদের সবকটা অস্ত্র এখানেও প্রয়োগ করা হবে, আর তা আটকাতে গেলে বাংলাকে স্তব্ধ করা হবে। এই কাজ আজ বিরোধীদের প্রতিটা রাজ্যেই করতে হবে, নিজেদের মতো করে। শঠ, প্রতারকদের সঙ্গে ভদ্র সভ্য ব্যবহার করা যায় না। যে দাওয়াইয়ে যে রোগ সারে, সেই দাওয়াই দিতেই হবে। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, বিহারের সরকারি প্রকল্পের দেড় কোটি জীবিকা দিদিকে নির্বাচন কমিশন বুথ ম্যানেজমেন্টে কাজে লাগিয়েছিল, তাঁদের কাজ ছিল পর্দানসীন মহিলা ভোটারদের চিহ্নিত করতে সহায়তা করা এবং ভোটদান প্রক্রিয়া সহজ করে তোলা। কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রগুলিতে শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং ভোটারদের সহায়তা করা। তাহলে আমাদের রাজ্যে কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভান্ডার, যুবশ্রী বা পাড়ার ক্লাব, যারা পুজোর সময়ে সরকারি সাহায্য পায়, তাঁদের কাজে লাগানো হবে না কেন?

আমাদের বাংলাতে ৫ টাকার খাবারের ব্যবস্থা মনভোলানোর জন্য, দিল্লিতে তা জনমুখী প্রকল্প; আমাদের রাজ্যের ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ ভোট কেনার জন্য পয়সা দেওয়া, আর বিহারে ১০ হাজার টাকা হল সামাজিক প্রকল্প; আমাদের রাজ্যের ‘স্বাস্থ্যসাথী’ আসলে চিকিৎসার গাফিলতিকে লুকোনোর চেষ্টা, আর দিল্লিতে ‘আয়ুস্মান ভারত’ হল এক অভূতপূর্ব স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের সাফল্য। এইগুলো শুনতে শুনতে কান পচে যাচ্ছে, বাংলার যে যে প্রকল্পকে, যে যে কাজকে খারাপ বলা হচ্ছে, ঠিক সেই কাজগুলোই বিজেপি শাসিত রাজ্যে করা হচ্ছে, আর ঢাক বাজানো হচ্ছে। সময় এসেছে এটা পরিস্কার করে বলার যে, বিহার করলে লীলা আর বাংলা করলে বিলা, এসব আর সহ্য করা হবে না।

দেখুন ভিডিও:

Read More

Latest News