Saturday, December 27, 2025
HomeScrollAajke | ইন্ডোর স্টেডিয়ামের মুখ্যমন্ত্রীর ১ ঘন্টার বক্তৃতায় মোদ্দা কথাটা কী?
Aajke

Aajke | ইন্ডোর স্টেডিয়ামের মুখ্যমন্ত্রীর ১ ঘন্টার বক্তৃতায় মোদ্দা কথাটা কী?

২০২৬-এ নির্বাচন কমিশন, ভোটার লিস্টে নাম কাটা, এসআইআর ইত্যাদিই কি হয়ে উঠবে মূল ইস্যু?

Written By
অনিকেত চট্টোপাধ্যায়

পরীক্ষার আগেরদিন বুক ধড়ফড় কার না করেছে! যার করেনি সে হয় এক অলৌকিক মেধা সম্পন্ন, আর না হলে বই এর পাতা উল্টেও দেখেনি, কাজেই তার পাস ফেল নিয়ে কোনও চিন্তাও নেই। কিন্তু ওই মধ্যের লোকজন? অনেকটা পড়েছে, খানিকটা পড়েছে, আগামীকাল পরীক্ষা, বুক ধড়ফড় তো করবেই, হজমি গুলি খেয়ে তো কমবে না। সেসব কমানোর জন্য ছিলেন মাস্টারমশাই, অনেকের প্রাইভেট টিউটর, লাস্ট মিনিট সাজেশন দিতেন। এক দীর্ঘ বক্তৃতা, সাজেশন কম, ভোকাল টনিক বেশি। হ্যাঁ, সোমবার ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সেটাই করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা বললেন, তার মোদ্দা কথা হল – (১) এনিমি নাম্বার ওয়ান বিজেপি, (২) এনিমি নাম্বার টু হল ইলেকশন কমিশন, (৩) দুই শত্রুকে চোখে চোখে রাখুন, আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই, (৪) নাম কাটাকে এক বড় ইস্যু তৈরি করে তুলতে হবে, এই এসআইআর যে আদতে নাম কাটার এক ব্যবস্থা সেটা মানুষের কাছে বোঝাতে হবে, (৫) যাঁদের নাম কাটা গিয়েছে, হিয়ারিং আছে, তার প্রতিটা পর্যায়ে তৃণমূল কর্মীদের থাকতে হবে, (৬) নতুন ভোটারদের আবেদনে সাহায্য করুন। হ্যাঁ, সেই পরীক্ষার আগের টেনশন কাটাতে ঝাড়া এক ঘন্টার এক ভোকাল টনিক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামী এক-দেড় মাস, ফাইনাল ভোটার লিস্ট না আসা পর্যন্ত তৃণমূল কর্মীদের মাঠে নামার সরাসরি নির্দেশ দিলেন উনি। শত্রু চিহ্নিত করে দিলেন, এবার সঙ্গে জুড়বে ক্যামাক স্ট্রিটের দক্ষতা। এই দুটোর যোগফল আমরা দেখতে পাবো ফল প্রকাশের সময়ে। সেটাই বিষয় আজকে, ইন্ডোর স্টেডিয়ামের মুখ্যমন্ত্রীর ১ ঘন্টার বক্তৃতায় মোদ্দা কথাটা কী?

খবর এল, অমিত শাহজি আসছেন, সম্ভবত পরবর্তী পুতুল সভাপতি ইন্টারমিডিয়েট পাশ নীতিন নবীনও আসছেন শহরে, বসবেন নেতাদের সঙ্গে। কোথায়? কোনও একটা হোটেলের ব্যাঙ্কোয়েটে, সেখানে থাকবেন বঙ্গ বিজেপি নেতারা। দিল্লি থেকে এরকম উড়ে এসে নির্দেশ দেওয়া নতুন কিছু নয়, কিন্তু এখনও বিজেপি তার কর্মীবাহিনীর কাছে সেই লাস্ট মিনিট সাজেশন তো দূরের কথা, সিলেবাসও কমপ্লিট করে উঠতে পারেনি। অমিত শাহ এসে যাঁদের সঙ্গে কথা বলবেন, তাঁরা গত তিন-চার মাস ধরে একটা রাজ্য কমিটি তৈরি করে উঠতে পারল না। সেখানে কারা আসবে আর কারা বাদ যাবেন, সেই নিয়ে আকচা-আকচি থামার নাম নেই। ওনারা নাকি বঙ্গ বিজয়ে নামবেন। তবে হ্যাঁ, একটা কাজ তো উচ্চতর নেতৃত্ব শুরু করেছেন, সংখ্যালঘু ভোট ভাঙাও, যত লাগে দাও সেই সব উচ্চাকাংখীদের, হুমায়ুন কবির অ্যান্ড কোম্পানিকে, কেবল টাকা নয়, স্ট্রাটেজি ঠিক করে দেওয়ার মতো কাজেরও দায়িত্ব নিয়েছেন কয়েকজন, তার মধ্যে আবার এক বাম উকিলবাবু আছেন। হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে অফিসিয়াল জোট বিজেপির পক্ষে সম্ভব নয়, সিপিএম এর পক্ষেও নয়, কিন্তু টাকা আসছে দিল্লি থেকে, বুদ্ধি আসছে বাম দিক থেকে, মমতা হারাও।

আরও পড়ুন: Aajke| শুভেন্দুর ঘরে কেক ঢোকেনা, যায় না সান্তাক্লজ

হ্যাঁ, চলছে এই খেলা কারণ আগেই বলেছি, তৃণমূলকে হারাতে হলে – (১) সংখ্যালঘু ভোট ভাঙাতে হবে, (২) বাম-কংগ্রেসের ভোটের আরও কিছুটা বিজেপির দিকে আনতে হবে। এই দুটো শর্ত পূরণ না হলে তৃণমূলকে এই বাংলাতে বিজেপির পক্ষে হারানো অসম্ভব। এসআইআর’ও ব্যুমেরাং হওয়ার পরে এটাই বিজেপি আঁকড়ে ধরেছে। আর ঠিক অন্যদিকে তৃণমূলও চায় বিজেপি–তৃণমূল বাইনারিটাকে ধরে রাখতে। একমাত্র সেই মেরুকরণ থাকলেই সংখ্যালঘু ভোট শেষমেষ তৃণমূলের বাক্সে জমা হতে বাধ্য। সোমবার ইন্ডোর স্টেডিয়ামের জনসভাতে ঠিক সেই কাজটাই করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম শত্রু বিজেপি, দ্বিতীয় শত্রু নির্বাচন কমিশন, এই দু’জনের বাইরে তিনি সম্ভবত একটা বাক্য খরচ করেছেন বাম-কংগ্রেসের জন্য, মানে লক্ষ্য এক তীব্র মেরুকরণ। আসলে ২০২৬-এর নির্বাচনী রণকৌশলের প্রথম ধাপটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই কবেই পার করেছেন, সেদিন তিনি জোর গলায় জানিয়েছিলেন, এসআইআর করতে দেব না। হ্যাঁ, সেটা ছিল টোপ, আজ তা পরিষ্কার। সেই টোপ গেলার পরেই শুভেন্দু–শমীক–সুকান্ত বলতে শুরু করলেন, এসআইআর করে ছাড়ব, দেড় কোটি মানুষের নাম বাদ দেব। হ্যাঁ, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন রাজ্য বিজেপি নেতারা, যা এর আগে কোনও রাজ্যে বিজেপি নেতারা করেননি। এখন বুঝতে পেরেছেন, বাট টু লেট, অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে, সারা রাজ্যে বাদ যাওয়া ভোটারদের কাছে শুভেন্দু–শমীক ভিলেইন। মতুয়া বাদ পড়া ভোটারদের দায় নিতেই হবে বিজেপিকে। ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সেই কথাগুলোই জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, বিজেপি আর নির্বাচন কমিশনকে একই ব্রাকেটে রেখে নির্বাচনে তাদের বিরোধিতায় নামার নির্দেশ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার মানে ২০২৬-এ নির্বাচন কমিশন, ভোটার লিস্টে নাম কাটা, এসআইআর ইত্যাদিই কি হয়ে উঠবে মূল ইস্যু?

এক নতুন অস্ত্র তুলে দিল বিজেপি মমতার হাতে, এ রাজ্যে এসআইআর। আগেই বলেছিলাম, ওই লট-কে-লট, এলাকা-কে-এলাকা নাম বাদ দেওয়া এই বাংলাতে সম্ভব নয়। বলেছিলাম যে, এই এসআইআর-এ মুসলমান সংখ্যালঘু ভোটারদের খুব বেশি ভোট বাদ যাবে না, যা যাবে সেটা খুব সামান্য, এবং বলেছিলাম যে, মতুয়া, রাজবংশী, অবাঙালি বিহারীদের ভোট কাটা যাবে, তা হচ্ছে। আর এর সবটুকু লাভ জমা হবে তৃণমূলের ঘরে। এখন খানিকটা মাথায় ঢুকেছে বিজেপির, তারা উঠে পড়ে লেগেছেন মতুয়া ভোটার তালিকা নিয়ে। কিন্তু সম্ভবত যে ক্ষতি হয়ে গিয়েছে, তা সামলানোর মতো সময় আর বিজেপির হাতে নেই।

দেখুন আরও খবর:

Read More

Latest News