Friday, September 12, 2025
বাঙালি কাউন্টডাউন
HomeScrollAajke | এ রাজ্যে ভোটার তালিকার সংশোধনে বিজেপিরই মুখ আর হাত পুড়বে
Aajke

Aajke | এ রাজ্যে ভোটার তালিকার সংশোধনে বিজেপিরই মুখ আর হাত পুড়বে

বিহারে ৫৫ লক্ষের বেশি ভোটার বাদ দেওয়া হয়েছে, বাংলায় কি তা সম্ভব?

আমাদের রাজ্যে প্রায় ৬.৫৫ কোটি ভোটার আছে। দুগগা ঠাকুরের বিসর্জন শেষ হলেই, ঐ অক্টোবর মাস থেকেই পশ্চিমবঙ্গ-সমেত গোটা দেশেই নাকি ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) কাজ শুরু করে দেওয়ার কথা ভাবছে নির্বাচন কমিশন। দিল্লিতে সব রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে এসআইআর কাজকর্ম শুরুর আগে প্রাথমিক প্রস্তুতির কাজ এই মাসের মধ্যে শেষ করে ফেলার উপরে জোর দিয়েছে কমিশন। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে এ মাসের মধ্যে প্রস্তুতির কাজ সেরে ফেলতেই হবে, এমটাই নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। যাতে অক্টোবর থেকে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু করা যায়। এমনিতে ভোটার তালিকা সংশোধন হবে, সে আর নতুন কী? কারণ সে তো প্রতি বছর দু’বছর পর পর হয়। তাহলে নতুনটা কী? নতুন হল এবার নাপিত এসে কেবল চুল কাটানয়, রান্নাও করবে। মানে নির্বাচন কমিশন কেবল ভোটার কারা, কার নাম ভোটার তালিকাতে থাকবে – এই কাজের মধ্যেই নিজেদেরকে সীমাবদ্ধ রাখতে রাজি নন। তাঁরা দেখতে চান, জানতে চান, সিওর হতে চান যে, আপনি ভোট আগেও দিয়েছেন, সাত বার কি দশবার দিয়েছেন ক্ষতি নেই, কিন্তু আপনি দেশের নাগরিক তো? কবে থেকে কোন আইনের বলে বলীয়ান আমাদের দেশের নির্বাচন কমিশন এই দাবি করতে পারেন, আগে সেটারই তো নিষ্পত্তি হওয়া উচিত। একটা কিছু গোলমাল তো আছেই, তা না হলে এমন বোকার মত কথাবার্তা এই ইলেকশন কমিশনের কর্তা ব্যক্তিরা করছেন কেন? কিন্তু যাই করুন এটা বিহারও নয়, মহারাষ্ট্রও নয়। কাজেই এই মাটিতে কায়দাবাজি করতে এলে তা মূহুর্তের মধ্যে ধরা পড়ে যাবে। সেটাই বিষয়, এ রাজ্যে ভোটার তালিকার সংশোধনে বিজেপিরই মুখ আর হাত পুড়বে।

নির্বাচন কমিশনকে হাতের মুঠোয় এনে মূল দুটো রাস্তা দিয়ে বা দুটো পদ্ধতিতে সরকারের জন্য কাজ করানো হচ্ছে বলে বিরোধীরা অভিযোগ করেছেন। প্রথমটা হল, ভোটার তালিকাতে ইনক্লুসন, মানে নতুন নাম ঢোকানো, বা পুরানো নাম এক্সক্লুসন বা বাদ দেওয়া। সেটা আজ মানুষের সামনে। রাহুল গান্ধী আর তাঁর টিমের সদস্যরা পুরো বিষয়টা পরিস্কার করেই আমাদের সামনে রেখেছেন, দেখানো হয়েছে কীভাবে নাম বাদ দেওয়া হয়েছে আর কীভাবে নাম যোগ করা হয়েছে। এক কামরার ফ্ল্যাটে ৮০ জন ভুতুড়ে ভোটার আছে। দ্বিতীয় পদ্ধতি হল, ভোটের দিনেই ভুতুড়ে ভোটার হাজির করা। ‘ভোট ফর ডেমোক্রেসি’ (VFD)-র লাগাতার চালিয়ে যাওয়া গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, নির্বাচনের প্রাথমিক আর চূড়ান্ত ভোটার সংখ্যার মধ্যে এক বিশাল গরমিল ছিল, যা প্রায় ৫ কোটি ভোট। সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, এই অমিলের সংখ্যা ছিল ৪,৬৫,৪৬,৮৮৫। এই অস্বাভাবিক ভোট বাড়ার সঙ্গে নির্বাচনী ফলাফলের এক সম্পর্ক নিশ্চিতভাবেই আছে। অন্ধ্রপ্রদেশে যেখানে ভোট বৃদ্ধির হার ছিল ১২.৫৪ শতাংশ এবং ওড়িশায় ১২.৪৮ শতাংশ, সেখানে বিজেপি-এনডিএ জোট যথাক্রমে ২৫টার মধ্যে ২১টা এবং ২১টার মধ্যে ২০টা আসনে জয়লাভ করে। এর ঠিক উল্টোদিকে, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে যেখানে সাতটা ধাপের মধ্যে পাঁচটাতেই ভোট বাড়ার হার ০.৫০ শতাংশের নিচে ছিল, সেখানে বিজেপি-এনডিএ-র ফলাফল ছিল তুলনামূলকভাবে দুর্বল। এই রাজ্যে তাদের আসন সংখ্যা ২০১৯ সালের ৬৪ থেকে কমে ২০২৪ সালে ৩৬-এ নেমে আসে। এটা একটা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, ভোট গণনায় যত বেশি গরমিল ছিল, বিজেপি-এনডিএ জোটের আসন লাভ তত বেশি হয়েছে। মানে যত লোক ভোট দিতে এলেন, তা দিনের শেষে আর কদিন পরে চুড়ান্ত হিসেবের সময়ে দেখা যাচ্ছে, আগের থেকে অনেক বেশি ভোটার এসেছে। আর সেই ভুতুড়ে ভোটার ফলাফলকে পালটে দিয়েছে।

আরও পড়ুন: Aajke | মা দুর্গার পায়ের তলায় এবারে অসুরের বদলে মোদিজি?

তো কেন বলছি যে এই পদ্ধতিগুলো কাজে দেবে না? বলছি কারণ (১) এখানে একজন ভুয়ো ভোটার যোগ করাও বিরাট ব্যাপার। কায়দা করে, অজান্তে দশ পাঁচটা ভোটার জুড়ে দেওয়াই যায়, কিন্তু লাখ লাখ ভোটার জোড়া হবে বা বাদ দেওয়া হবে, বাংলাতে তা অসম্ভব। আর যত এই পদ্ধতি নিয়ে নাচন-কোঁদন হবে, তত এক্কেবারে গ্রাউন্ড লেভেলে তৃণমূল কর্মীরা সক্রিয়তা বাড়াবে। ফলে ঐ দু’দশটা নামও বাদ দেওয়া বা জুড়ে দেওয়া বাংলাতে সম্ভব নয়। দ্বিতীয় পদ্ধতি হল, ভোট শেষ হল, বলা হল ৫৬৭ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন, আমাদের এখানে পোলিং এজেন্টরা ফর্ম সেভেনটিন চাইবেন। তাঁরা জানেন এসব ফিরকিবাজি, রাতে সেটা ৬৪০ করে দেওয়া যাবে না। এখানে প্রতিটা পোলিং এজেন্ট এই ফর্ম সেভেনটিন কাকে বলে, কেন দরকার সেটা জানেন। জানেন আজ নয়, সেই বাম আমল থেকেই জানেন। কাজেই নির্বাচন কমিশন এ রাজ্যে সার, প্রিন্সিপাল, পিওন, প্রফেসর যাই করুন না কেন, এ রাজ্যে এক্কেবারেই সুবিধে তো হবেই না, বরং যত এসব করা হবে তত গ্রাউন্ড লেভেলে তৃণমূল কর্মীদের, বাম কর্মীদের সক্রিয়তা বাড়াবে। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, এই রাজ্যে ভোটার তালিকার থেকে মানুষের অজান্তে, রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মীদের আড়ালে রেখেই লক্ষ লক্ষ ভোট জুড়ে দেওয়া বা বাদ দিয়ে দেওয়া কি সম্ভব? বিহারে ৫৫ লক্ষের বেশি ভোটার বাদ দেওয়া হয়েছে, বাংলাতে কি তা সম্ভব?

হ্যাঁ, খুব জোর গলায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন একটা নামও বাদ পড়বে না, একজন ভ্যালিড ভোটারকেও বাদ দেওয়া যাবে না, দিতে দেব না। তাঁর এই আত্মবিশ্বাসের উৎস হল রাজ্যের বুথে-বুথে তাঁর দল, বামেদের, রাজনৈতিক কর্মীদের সক্রিয়তা। এতটা সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী বিহার মহারাষ্ট্র বা হরিয়ানাতে নেই। নেই বলেই সেখানে এসব সম্ভব। আচ্ছা এটা মুখ্যমন্ত্রী জানেন না? অবশ্যই জানেন, তাহলে বলছেন কেন? বলছেন কারণ, তাঁর এই দাবি আর উচ্চারণের পিছনে দাঁড়াবে লক্ষ লক্ষ বুথ লেভেলের ওয়ার্কাররা, সেখান থেকেই আসবে জয়। বাংলায় নির্বাচনে জেতার চাবিকাঠি হল বুথে কর্মীদের সক্রিয়তা। মমতা সেই ভোক্যাল টনিকটা দিচ্ছেন। বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশন সেটা বুঝতে পারবে ২০২৬-এর রেজাল্ট আউটের পরে।

Read More

Latest News