Thursday, September 4, 2025
HomeScrollAajke | শূন্যতা নয় আপাতত ফাঁকা ফ্ল্যাটে যৌনতাই সমস্যা সিপিএমের

Aajke | শূন্যতা নয় আপাতত ফাঁকা ফ্ল্যাটে যৌনতাই সমস্যা সিপিএমের

এসব আলোচনার মানে কিন্তু কখনওই এমন নয় যে কেবল সিপিএমেই এই বিকৃতি দেখা যায়

লেনিন নারী-পুরুষের সমতায় বিশ্বাসী ছিলেন, আবার তিনি প্রেমহীন অবাধ যৌনতার ঘোর বিরোধী ছিলেন। জার্মান কমিউনিস্ট নেত্রী ক্লারা জেৎকিনের সঙ্গে আলোচনার সময়ে তিনি বলেছিলেন, যৌন সমস্যাকে সমাজের মূল সমস্যা হিসেবে তুলে ধরাটা একটা ভুল পদক্ষেপ। প্রলেতারীয় বিপ্লবের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত পুঁজিবাদী সমাজের ভিত্তি ভেঙে দেওয়া, আর বিবাহ ও যৌন সমস্যাগুলো সেই বৃহৎ সামাজিক বিপ্লবেরই অংশ। তিনি বলেছিলেন, যৌনতা নিয়ে অতিরিক্ত আলোচনা প্রলেতারীয়দের শ্রেণি চেতনাকে গুলিয়ে দেয়।

তিনি বিশ্বাস করতেন, প্রেম এবং যৌনতা শুধুমাত্র শারীরিক চাহিদা নয়, যৌনতার স্বাধীনতা কোনওভাবেই বিপ্লব ও শ্রেণিসংগ্রামের মূল লক্ষ্য থেকে মানুষকে বিচ্যুত করবে না। এখন লেনিন বলেছিলেন বা কী বলেছিলেন সেসব নিয়ে এক বড় মাপের আলোচনা তো একসময়ে হত এই বাংলাতে, আবার তার সঙ্গে সঙ্গে কে কাকে বিয়ে করবে বা করবে না সেই নির্দেশ প্রথমে দলের সদস্যদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল কিন্তু বাম সরকার আসার পরে রামা শ্যামা খেঁদি, পেঁচিও কে কাকে বিয়ে করবে বা করবে না তাও নির্ধারিত হত লোকাল কমিটির দফতর থেকে, তদ্দিনে লেনিনের পাঠ উবে গেছে, কেবল হাতেকলমে প্রয়োগ। তো সেই সময়ে এক বড় নেতার নামের আগে মাদুর বিশেষণ লাগানো হয়েছিল, কেন হয়েছিল, বুঝে নিন, না বুঝলেও ক্ষতি নেই। এক মন্ত্রীর কাজিন সিস্টার আসতেন, মন্ত্রীদের জন্য নির্দিষ্ট সার্কিট হাউসে, সমস্ত জেলাতে, সাংবাদিকেরা অপেক্ষা করতেন, কখন সার্কিট হাউসে কাজিন সিস্টার আসবেন, আসলেই ঝাঁপ বন্ধ, সাংবাদিকদের বাড়ি ফেরা। কিন্তু এসব তখন মিডিয়াতে আসত না, কারণ সেই সাহস মিডিয়ার ছিল না আর আজকের মতো শয়ে শয়ে লাখে লাখে মিডিয়া ছিলও না। গেছে সেই দিনকাল, সিপিএমের একজন বিধায়কও নেই সন্ধেপ্রদীপ দেওয়ার জন্য কিন্তু কেচ্ছার হাঁড়ি রোজ ভাঙছে। সেটাই বিষয় আজকে, শূন্যতা নয় আপাতত ফাঁকা ফ্ল্যাটে যৌনতাই সমস্যা সিপিএমের।

এমনিতে ধরুন ক্ষমতা মানেই টাকা আর যৌনতার অপব্যবহার, প্রতি পদে পদে, যে থাকুক ক্ষমতায়, বিজেপি, তৃণমূল, এসপি, বিএসপি, বাম ডান কমিউনিস্ট আরএসএস এমনকী সাধুসন্তদেরও বিকৃত, অবাধ যৌনাচারের কেচ্ছা নতুন কিছু নয়। হলফ করে বলতে পারি যে প্রতিদিন, প্রতিদিনের খবরের কাগজে এই খবর পাবেন, কোথাও না কোথাও তা হচ্ছে। আর ক্ষমতা তাকেই এক অবাধ চেহারা দেয়। কিন্তু সেই যেই হোক এমন বিকৃত আর অবাধ যৌনাচারের ঘটনা সামনে চলে এলে মারধর দেওয়া হয়, বেদম ক্যালানো যাকে বলে। থানাপুলিশ হয়। এক তৃণমূল নেতা কসবা ল কলেজে এক ছাত্রীকে ডেকে এনে ধর্ষণ করলেন, ভিডিও তোলালেন। তো কী হয়েছে? পুলিশ গ্রেফতার করেছে, জেলে আছেন। যদি পুলিশ গ্রেফতার না করত তাহলে বিক্ষোভ হত, পুলিশ কেন গ্রেফতার করছে না তার জবাব চাওয়া হতো, উই ওয়ান্ট জাস্টিস মিছিল হত। স্বাভাবিক। কিন্তু সিপিএমে এমন সব অভিযোগ আসলে একটা কমিটি তৈরি হয়। ধরুন তন্ময় ভট্টাচার্য। তিনি এক মহিলা সাংবাদিকের কোলে বসে পড়লেন, কী হল? কমিটি তৈরি হল, কমিটি বহিষ্কার না সাসপেন্ড করবে তা নিয়ে আলোচনা হল, তাঁকে সাসপেন্ড করা হল, এবং সাসপেনশনের মেয়াদ কাটার পরে তিনি আবার ফিরে এসেছেন। ওদিকে সুশান্ত ঘোষ, বিরাট বিপ্লবী, অভিযোগ চাকরি দেবেন বলে দীর্ঘ সময় ধরে একজনকে যৌন সম্পর্কে বাধ্য করলেন। অভিযোগ এল, কমিটি সুশান্ত ঘোষকে বহিষ্কার করল। মানে থানা নয়, পুলিশ নয়, বেধড়ক ক্যালানিও নয়, এসব অপরাধের পরে শেখ শাহজাহানের ফাঁসি চাওয়া দল কেবল দল থেকে বহিষ্কারের নিদান দিয়েই চুপ করে বসে গেছে। এরকম একটা নয়, বহু বহু ক্ষেত্রেই এক প্যারালাল বন্দোবস্ত। এবং কী গর্ব করে কুজন সুজন বলেন আমরা তো দল থেকে তাড়িয়েই দিই, আমরাই তো পারি অন্য কেউ তো পারে না। অর্থাৎ কমিউনিস্ট পার্টিতে, মানে সিপিএমে অ্যাঙ্কর করব, দলের ওয়েবসাইটে তুমি খবর পড়বে এই গাজরটা সামনে ঝুলিয়ে যে ছেলেটি ফাঁকা ফ্ল্যাটে মদ খেতে ডাকে, যে ছেলেটি যৌন সম্পর্কের ডাক দেয় তাকে কেলিয়ে বৃন্দাবন দেখানো নয়, পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া নয়, তার বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ নিয়ে বিচারে বসবেন বুড়ো কর্তারা। সমস্যা হল যাঁরা বসবেন তাঁরাও তাঁদের প্রবল ক্ষমতার জমানায় এরকম বহু ফাঁকা ফ্ল্যাট অনেককেই দেখিয়েছেন, কিন্তু তখন অভিযোগগুলো সামনে আসত না। এখন আসে, এবং কেবল এক লোক দেখানো কমিটি আর সাসপেনশনের কথা বলেই কীভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যায় আবার, সেই আলোচনাতে ডুবে যান, বোঝেন না এই অভিযোগগুলো সিপিএমকে আরও শূন্যতার দিকেই ঠেলে দিচ্ছে। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেষ করেছিলাম, ক্ষমতায় নেই তারপরেও তন্ময় ভট্টাচার্য, বংশগোপাল চৌধুরী, সুশান্ত ঘোষ বা বিভিন্ন যুব ছাত্র নেতাদের ধারাবাহিক বিকৃত যৌনতা আর ফাঁকা ফ্ল্যাটের নিমন্ত্রণ সামনে আসছে সারি দিয়ে। এবং মজার কথা হল তাদের পুলিশে দেওয়া হচ্ছে না, তদন্ত পুলিশ করছে না, তদন্ত করছে দল। সেই দল যখন নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে উই ওয়ান্ট জাস্টিস বলে চিৎকার করে, তখন তা কি মানুষ বিশ্বাস করে? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।

এসব আলোচনার মানে কিন্তু কখনওই এমন নয় যে কেবল সিপিএমেই এই বিকৃতি দেখা যায়। না, একেবারেই না। বিকৃতি ক্ষমতার থেকেই জন্ম নেয়। সবসময় সেই নারী নির্যাতন, ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত মানুষকে ধরে জেলে দেওয়া যায় তাও নয়, সেই মেয়েটি হঠাৎ উবেই যায়, বা সেই মেয়েটি আত্মহত্যা করে। যেক্ষেত্রে সামনে আসে তখন সব বিরোধী দল, সাধারণ মানুষ তার বিরোধিতা করে, সেই মানুষটির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা, তদন্ত, বিচারের দাবি তোলা হয়, বহু ক্ষেত্রে তাদের জেলে পোরাও হয়। কিন্তু কেন এক দল নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে এত সরব, কিন্তু তারাই সেই দলের মধ্যে সেই সমস্ত নির্যাতনের ক্ষেত্রে পুলিশি তদন্ত, জেল জাস্টিসের দাবি না তুলে এক নাম কে ওয়াস্তে কমিটি তৈরি করে সর্বোচ্চ শাস্তি দল থেকে বিতাড়নের নির্দেশ দিয়েই চুপ করে যায়, তা বোঝা খুব কঠিন। সিপিএম যেটা বোঝে না তা হল, মানুষ কিন্তু এগুলো মাথায় রাখে, বুঝলে ওই শূন্য ফ্ল্যাটে ডাকার সঙ্গে দলের শূন্যতার যে এক সরাসরি সম্পর্ক আছে তাও বুঝতে পারত।

Read More

Latest News