দেবেশ চক্রবর্তী, হুগলি (বলাগর): হুগলির (Hoogly) বলাগড়ে (Balagarh) ডি ভোটার (D voter) আতঙ্ক! করিন্যা গ্রামে দেড় হাজার মানুষের নাম নেই নির্বাচন কমিশনের (Election Commission) তালিকায়! বলাগড় ব্লকের বাকুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত করিন্যা গ্রামে ছড়িয়েছে চরম আতঙ্ক। জানা গেছে, প্রায় দেড় হাজার ভোটারের নাম নেই নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত ২০০২ সালের ভোটার তালিকায়। ফলে “ডি ভোটার” আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, তারা বছরের পর বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস করছেন, সরকারি সমস্ত নথি — আধার, রেশন কার্ড, জমির দলিল, এমনকি ভোটার আইডিও তাঁদের হাতে রয়েছে। তবুও নতুন করে প্রকাশিত সংশোধিত তালিকায় তাঁদের নাম উধাও। এতে অনেকে আশঙ্কা করছেন, ভবিষ্যতে তাঁরা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন, এমনকি নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্নও উঠতে পারে।
করিন্যা গ্রামের এক বাসিন্দাদের অভিযোগ,“আমরা এই মাটিতে জন্মেছি, বড় হয়েছি, কিন্তু হঠাৎ শুনছি আমাদের নাম ভোটার লিস্টে নেই। এখন সবাই ভয় পাচ্ছে ‘ডি ভোটার’ বলে চিহ্নিত করা হবে।”
স্থানীয় পঞ্চায়েতের সদস্যরা জানিয়েছেন, বিষয়টি ইতিমধ্যেই নির্বাচন দফতরে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও কোনও সঠিক উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে জেলা প্রশাসনের তরফে খতিয়ে দেখা হচ্ছে কেন এত মানুষের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। বৃদ্ধা থেকে শুরু করে যুবক সবাই আতঙ্কে। কারও মুখে কান্না, কারও চোখে রাগ!
এক প্রবীণ গ্রামবাসী বললেন,“আমরা এই মাটিতে জন্মেছি, কর দিয়েছি, ভোট দিয়েছি… এখন হঠাৎ করে বলে নাম নেই! তাহলে আমরা কারা?”
গ্রামের মানুষ এখন সকাল থেকে সন্ধ্যা ব্লক অফিসে ঘুরছেন নিজেদের নাম ফেরানোর আশায়। কেউ আবেদনপত্র জমা দিচ্ছেন, কেউ আবার স্থানীয় নেতাদের বাড়ি ঘুরছেন— কিন্তু সমাধান নেই।
আরও পড়ুন- এসআইআর-র হিয়ারিং -এ ডাক পাবেন আপনি? কী জানাল কমিশন
বলাগড় ব্লকের রাজনৈতিক মহলেও এই ঘটনা নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, ইচ্ছাকৃতভাবে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ অনেক ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে শাসক দলের দাবি, এটি সম্পূর্ণ প্রযুক্তিগত ত্রুটি, প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে।
এদিকে, এই ঘটনায় আতঙ্কে বহু মানুষ দিনরাত দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। অনেকেই স্থানীয় ব্লক অফিসে ছুটে যাচ্ছেন তাঁদের নাম পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য। যদিও
ব্লক অফিস থেকে গ্রামের মানুষদের জানানো হচ্ছে ‘ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ চলছে। যাঁদের নাম বাদ পড়েছে, তাঁরা নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করে আবেদন জানাতে পারেন। তদন্তের পর বৈধ নাগরিকদের নাম ফের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।”
তবুও গ্রামজুড়ে এখন একটাই প্রশ্ন ঘুরছে— “যদি নাগরিকই না থাকি, তবে ভোট দেব কিভাবে?”
দেখুন আরও খবর-







