Friday, June 20, 2025
HomeScrollনৃশংস গণহত্যায় ক্ষমা চাক ব্রিটেন, জাগছে জালিয়ানওয়ালাবাগ
Jallianwala Bagh Massacre

নৃশংস গণহত্যায় ক্ষমা চাক ব্রিটেন, জাগছে জালিয়ানওয়ালাবাগ

 নিরীহ শিশু, মহিলা, বৃদ্ধদের ঘিরে গুলিতে ঝাঁঝরা করেছিল ইংরেজ বাহিনী

Follow Us :

ওয়েবডেস্ক: দেড় দশকের বেশি ইংরেজ শাসনে ভারত। মুক্তির শ্বাস নেওয়ার জায়গা নেই। পরাধীনতার গ্লানি কুরে কুরে খাচ্ছে দেশবাসীকে। তারই মধ্যে ভারতীয়দের দমন পীড়নে জারি রাওলাট আইন। প্রতিবাদ করায় সফিউদ্দিন কিচলিউ, সত্যপালের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীরা গ্রেফতার। হাঁসফাঁস অবস্থা। তারই মধ্যে অমৃতসরে (Amritsar) জালিয়ানওয়ালাবাগে (Jalliwala Bagh) বৈশাখী মেলা (Fair)। সেখানে পরিবার নিয়ে ফুরসত খুঁজেছিলেন সাধারণ গরিব গ্রামবাসী। তাঁদের কাছে কোনও অস্ত্র ছিল না। শিশু, মহিলা, বৃদ্ধ সবাই হাজির ছিলেন। ওই জালিয়ানওয়ালাবাগের বেশিরভাগই ঘেরা ছিল। ঢোকা বেরনোর জন্য উন্মুক্ত একটিই মাত্র রাস্তা। জেনারেল আরই এইচ ডায়ার (R E H Dyer) হুকুম জারি করলেন, ওই একটি মাত্র রাস্তাও বন্ধ করে দেওয়া হোক। বৈশাখী মেলা উপভোগ করতে ভিতরে তখন আটকে অনেকে। এরপরই ডায়ারের ভয়ঙ্কর নির্দেশে নির্বিচারে একের পর এক গুলি ছুটে এল। শুধুই শোনা যেতে থাকল নিরীহ মানুষগুলির আর্তনাদ। বেরনোর কোনও পথ নেই। তাঁরা যুদ্ধ করতে নামেননি। বাঁচার আর্তি শোনার কেউ নেই। যতক্ষণ না গুলি শেষ হচ্ছে বুলেট একের পর এক শরীর ভেদ করতে থাকল। লুটিয়ে পড়ল দেহগুলি। গুলি থেকে বাঁচতে সামনে থাকা কুয়োয় মরণ ঝাঁপ দিলেন অনেকে। দেওয়ালে দেওয়ালে অসহায়, নিরস্ত্র মানুষগুলির কান্না প্রতিধ্বনিত হতে থাকল। ওই গণহত্যায় (Massacre) মৃত্যু হয়েছিল ১৫০০ জনের। আহত হন আরও অনেকে। কুখ্যাত সেই জালিয়ানওলাবাগ হত্যাকাণ্ড ঘটে ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল। ব্রিটিশ শাসনের ভারতে যে হত্যাকাণ্ডের জন্য ব্রিটেন এবার ক্ষমা চাক। ব্রিটেনের সংসদ হাউস অফ কমন্সেই সেই দাবি তুলেছেন সেখানকারই বিরোধী কনজার্ভেটিভ দলের সাংসদ বব ব্ল্যাকম্যান। আর পনেরো দিন পরেই জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যকাণ্ডের ১০৬ বছর পূর্ণ হবে। তার আগে এই ঘটনায় নতুন করে সামনে এসেছে ব্রিটিশ ভারতের সেই কালো দিন। হাউস অফ কমন্সেই ১৯২০ সালের ৮ জুলাই সেই সময় সেক্রেটারি অফ স্টেট ফর ওয়্যার উইনস্টন চার্চিল এই ঘটনার নিন্দা করেছিলেন। এমনকী ওই ঘটনার পর ব্রিটেনের সংসদে জেনারেল ডায়ারের বিরুদ্ধে ভোটাভুটিও হয়েছিল। মত যায় ডায়ারের বিপক্ষে। চার্চিল জানিয়েছি্লেন, জনতা ছিল নিরস্ত্র। তাঁরা কাউকে আক্রমণ করতে যাননি। গুলি শেষ হওয়ার মুখে ফায়ারিং বন্ধ হয়েছিল। চার্চিল ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচএইচ অ্যাসকুইথ প্রকাশ্যেই ঘটনার নিন্দা করেছিলেন। তবে এখনও পর্যন্ত ভারতের কাছে লিখিত ক্ষমা চায়নি ব্রিটেন।

এই ঘটনার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায় দেশজুড়ে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিবাদে ব্রিটিশদের দেওয়া নাইটহুড পদবি ত্যাগ করেছিলেন। ১৯১৯ সালের ২২ মে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ওই ঘটনার খবর পেলেন। তিনি কলকাতায় একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন। ৩১ মে ভাইসরয় লর্ড চেমসফোর্ডকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ওই ঘটনায় পাঞ্জাববাসীর পাশে দাঁড়িয়ে পদবি ছাড়ার চিঠি লেখেন। তারপরই দেশজুড়ে ১৯২০ থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। যা ব্রিটিশদের ভারত ছাড়তে বাধ্য করাকে ত্বরান্বিত করে।

আরও পড়ুন: মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে পুলিশ সাংবিধানিকভাবে বাধ্য, সুপ্রিম নির্দেশ

কীভাবে ওই ঘটনা? ডায়ার খবর পান জালিয়ানওয়ালাবাগে জমায়েত হবে। এরোপ্লেনে করে জমায়েত পরখ করা হয়। ১৩ এপ্রিল, রবিবার বিকেলে ৫০ জনের গোর্খা ও শিখ বাহিনী ঘটনাস্থলে হাজির হয়। তাঁদের হাতে .৩০৩ লি এনফিল্ড বোল্ট অ্যাকশন রাইফেল। সঙ্গে অস্ত্রে পরিপূর্ণ দুটি গাড়ি। যাতে ছিল মেশিন গান। কিন্তু ওই ছোট প্রবেশ পথ দিয়ে গাড়ি ঢুকতে পারেনি। জালিয়ানওয়ালাবাগের পাঁচটি সরু প্রবেশ পথ ছিল। সেগুলি বন্ধ ছিল। একটিই মূল ঢোকা ও বেরনোর রাস্তা ছিল। টানা প্রায় ১০ মিনিট ধরে গুলি চলে। গুলি থেকে বাঁচতে অনেকে ওই গুলির সামনে দিয়ে ছুটে বাইরে বেরোতে যান। তাতে পদপিষ্ট হয়েও মৃত্যু হয়। কুয়োতে ঝাঁপিয়ে ১২০ জনের মৃত্যু হয়। হিংস্র ডায়ার। গুলিতে আহতদের যেন শুশ্রুষার জন্য বাইরে আনা না হয়। সেজন্য রাতের কারফিউয়ের সময় এগিয়ে দেন। জখমের যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে অনেকে নিস্তেজ হয়ে যান। বর্বরোচিত ওই ঘটনায় প্রতিশোধের আগুন নেভেনি। ১৯৪০ সালে ১৩ মার্চ। লন্ডনের ক্যাক্সটান হলে উধম সিং খুন করলেন জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের মুল পরিকল্পনাকারীকে। তিনি সেসময় পাঞ্জাবের লেফটেন্যান্ট গভর্নর ছিলেন। তাঁর নাম মাইকেল ও ডায়ার। ইংল্যান্ডের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এই মেমোরিয়াল পরিদর্শন করে গিয়েছেন।জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনার শতবর্ষপূর্তি হয় ১৯১৯ সালে। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ওই ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন। ২০১৩ সালে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও ওই স্মারক পরিদর্শন করেন। তিনি সেখানে লেখেন, এটি ব্রিটিশ ইতিহাসে গভীর লজ্জাজনক অধ্যায়। ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর জালিয়ানওয়ালাবাগ পরিদর্শনের পর লন্ডনের মেয়র সাদিক খান দাবি করেছিলেন ব্রিটেন সরকার ক্ষমা চাক। ২০২১ সালের ২৫ ডিসেমন্বর। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যকাণ্ডের প্রতিশোধ নিতে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেন। যশোবন্ত সিং চৈল। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এখন অমৃতসরে রয়েছে জালিয়ানওয়ালাবাগ মেমোরিয়াল। পর্যটকরা একটুকরো ইতিহাসের খোঁজে সেখানে যান। কুখ্যাত ব্রিটিশ শাসনের স্মারক চিহ্ন পরখ করেন। জালিয়ানওয়ালা বাগ জাগছে।

দেখুন অন্য খবর: 

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Sukanta Majumder | বিগ ব্রেকিং, আটক সুকান্ত মজুমদার নিয়ে আসা হল লালবাজারে, কী অবস্থা? দেখুন সরাসরি
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | ইরানের ১৭তম অ্যা/টাকে ধোঁয়া হয়ে গেল ইজরায়েল, ছারখার হাইফা, কোথায় নেতানিয়াহু?
00:00
Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | ভাতা মে/রে লাভ কার?
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | এ যেন ধ্বং/সযজ্ঞের সূচনা, মোতায়েন B2 স্পিরিট স্টেল্থ বো/ম্বা/র, কী করবে ইরান?
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | বিগ ব্রেকিং, সবচেয় বড় হা/মলা ইরানের, গুঁ/ড়িয়ে দিল ইজরায়েলের গোয়েন্দা অফিস
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel|৮ দিনে ৮ অবস্থা ইজরায়েলের, ইরানের ক্লাস্টার মি/সাইল হা/ম/লায় ছারখার ইজরায়েলের ২০টি এলাকা
00:00
Video thumbnail
West Bengal BJP | দিলীপ ঘোষের 'বো/মা', কী করবেন শুভেন্দু-সুকান্ত?
00:00
Video thumbnail
Sukanta Majumder | পশ্চিমবঙ্গ দিবস থেকে প্রতিবাদ দিবস, একনজরে দেখুন তু/লকা/লাম দেড় ঘন্টা
00:00
Video thumbnail
Sukanta Majumder | বিগ ব্রেকিং, আটক সুকান্ত মজুমদার নিয়ে আসা হল লালবাজারে, কী অবস্থা? দেখুন সরাসরি
03:08:13
Video thumbnail
Iran-Israel | ৮ দিনে ৮ অবস্থা ইজরায়েলের, ইরানের ক্লাস্টার মি/সাইল হামলায় ছারখার ইজরায়েলের ২০টি এলাকা
05:55:15