ওয়েব ডেস্ক: ১ জানুয়ারি মানেই শুধুই ইংরেজি নববর্ষ (New Yer 2025) নয়। রামকৃষ্ণ অনুগামীদের কাছে দিনটি এক গভীর আধ্যাত্মিক স্মৃতির দিন—কল্পতরু উৎসব (Kalpataru Festival)। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের ভক্ত-শিষ্যরা এই দিনটি বিশেষ মর্যাদায় পালন করেন। এর সূচনা হয়েছিল ১৮৮৬ সালের ১ জানুয়ারি। কাশীপুর উদ্যানবাটীতে এই উৎসবের মূল আয়োজন হলেও, রামকৃষ্ণ মঠ, রামকৃষ্ণ মিশন, বেদান্ত সোসাইটি এবং দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতেও দেশজুড়ে ভক্তদের ঢল নামে।
এই দিনটি এত গুরুত্বপূর্ণ কেন? কারণ, এই দিনেই শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস নিজেকে ঈশ্বরের অবতার হিসেবে প্রকাশ করেছিলেন—ভক্তদের বিশ্বাস এমনটাই।
আরও পড়ুন: নিউ ইয়ারে ছুটি মানেই ট্রিপ! হাতেগোনা ছুটিতে কোথায় যাবেন?
ঘটনাপ্রবাহের পেছনে রয়েছে এক হৃদয়ছোঁয়া কাহিনি। সেই সময় শ্রীরামকৃষ্ণ দুরারোগ্য গলার ক্যানসারে আক্রান্ত। চিকিৎসার সুবিধার জন্য তাঁকে দক্ষিণেশ্বর থেকে কাশীপুর উদ্যানবাটীতে আনা হয়েছিল। ১৮৮৬ সালের ১ জানুয়ারি তিনি তুলনামূলকভাবে একটু সুস্থ বোধ করেন। সেই দিন তিনি গৃহী শিষ্যদের সঙ্গে নিয়ে উদ্যানবাটীতে হাঁটতে বের হন।
শিষ্যদের মধ্যে ছিলেন বিশিষ্ট নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষ। উদ্যানবাটীর এক গাছতলায় দাঁড়িয়ে শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁকে প্রশ্ন করেন, “তোমার কী মনে হয়, আমি কে?” গিরিশচন্দ্র ঘোষ উত্তরে বলেন, “আমার বিশ্বাস, আপনি রামকৃষ্ণ পরমহংস—মানবকল্যাণের জন্য মর্ত্যে অবতীর্ণ ঈশ্বরের অবতার।”
এই উত্তরের পর শ্রীরামকৃষ্ণ বলেন, “আমি আর কী বলব? তোমাদের চৈতন্য হোক।” এই কথা বলেই তিনি সমাধিস্থ হয়ে পড়েন এবং একে একে তাঁর শিষ্যদের স্পর্শ করেন।
পরবর্তীতে উপস্থিত শিষ্যরা জানিয়েছেন, সেই স্পর্শে তাঁদের প্রত্যেকের মধ্যেই এক অদ্ভুত আধ্যাত্মিক জাগরণ ঘটে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত শিষ্য রামচন্দ্র দত্ত দাবি করেছিলেন, ওই দিন শ্রীরামকৃষ্ণ পুরাণে বর্ণিত কল্পতরু-তে পরিণত হয়েছিলেন—যে গাছের কাছে গেলে সকলের কামনা পূর্ণ হয়। তিনিই প্রথম এই দিনটির নাম দেন কল্পতরু দিবস, যা পরে পরিচিত হয় কল্পতরু উৎসব নামে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ওই দিন শ্রীরামকৃষ্ণের কোনও সন্ন্যাসী শিষ্য তাঁর পাশে ছিলেন না। কেবল গৃহী শিষ্যরাই উপস্থিত ছিলেন। ভক্তদের মতে, এই দিনটি ঠাকুরের জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও রহস্যময় উৎসব।
আজও কল্পতরু দিবস উপলক্ষে রামকৃষ্ণ অনুগামীরা দাতব্য চিকিৎসা, কম্বল বিতরণ, ভক্তসেবা-সহ নানা সমাজসেবামূলক কর্মসূচির আয়োজন করেন। এমনকি ২০১০ সালে এই বিশেষ দিনে দক্ষিণেশ্বরগামী তীর্থযাত্রীদের সুবিধার্থে পূর্ব রেল চালু করেছিল বিশেষ ট্রেনও।







