Tuesday, August 26, 2025
HomeScrollAajke | শকুনির ভূমিকাতে শুভেন্দু অধিকারী?

Aajke | শকুনির ভূমিকাতে শুভেন্দু অধিকারী?

শকুনিকে এমনিতে কৌরব পক্ষের একজন বলেই ধরা হয়, এবং কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে তিনি পাণ্ডবদের হাতেই মারা গিয়েছিলেন এটাও ঠিক। কিন্তু আসল শকুনির স্বরূপ বোঝার জন্য একটু ফ্ল্যাশব্যাকে যেতে হবে। ধৃতরাষ্ট্র জন্মান্ধ, প্রায় জোর করেই তিনি গান্ধার রাজের কন্যা গান্ধারীকে বিয়ে করলেন, বাধা দিতে গিয়েছিলেন গান্ধার রাজ এবং তাঁর সন্তানেরা, যাঁদের মধ্যে তিনিই ছিলেন বয়োজ্যেষ্ঠ, তাঁদের জেলে পোরা হয়। সেখানে গান্ধাররাজ সুবল এবং তাঁর পুত্রদের জন্য একটাই রুটি দেওয়া হত, সেই একটা রুটিতে কারও পেটই ভরত না। তাঁরা সব্বাই মিলেই ঠিক করেন, একজনই এই রুটি খাবেন এবং তিনি জেল থেকে বেরিয়ে ওই কুরুবংশকে ধ্বংস করবেন। শকুনি সেই দায়িত্ব নিলেন। কিন্তু জেল থেকে বেরিয়েই বুঝেছিলেন যে বাইরে থেকে তাঁর পক্ষে কুরুবংশ ধ্বংস করা সম্ভব নয় তাই কৌরবদের সঙ্গে হাত মেলালেন, একমাত্র গান্ধারীই বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর এই চাল, তিনি বাধা দেওয়ার শত চেষ্টাও করেছিলেন কিন্তু ততদিনে মামা শকুনি কৌরব রাজকুমার দুর্যোধন দুঃশাসনের কাছে ডার্লিং হয়ে গেছে। তাদেরকে রাজ্যের কুপরামর্শ দিয়ে পাণ্ডবদের সঙ্গে লড়িয়ে দিলেন, খুব ভালো করেই জানতেন যে শেষমেশ পাণ্ডবরা কুরুবংশ ধ্বংস করবে, করেওছিল। যুদ্ধের ১৮ দিনের মাথায় যখন শকুনি নিহত হচ্ছেন, ততদিনে কুরুবংশের আর কিছুই প্রায় বেঁচে ছিল না। হ্যাঁ, এটাই ছিল শকুনির স্ট্রাটেজি, আজ কাঁথির খোকাবাবুকে দেখলে মনে হচ্ছে উনি সেরকম কিছু প্রতিজ্ঞা নিয়েই বিজেপিতে যাননি তো? কাজেই সেটাই আমাদের বিষয় আজকে, শকুনির ভূমিকাতে শুভেন্দু অধিকারী?

শুভেন্দু অধিকারী যখন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাচ্ছেন তখন এ রাজ্যে বিজেপির কী অবস্থা? তার ঠিক আগেই ২০১৯-এ বিজেপির বিরাট উত্থান, ১৮টা সাংসদ জিতেছিল বিজেপির, কেবল তাই নয়, ভোট শতাংশ ছিল ৪০.৭ শতাংশ। কে সভাপতি, দিলীপ ঘোষ, মেরে বদন বিগড়ে দেব, হ্যাঁ, মুখোমুখি এই কথা বলতে যাঁর গলা কাঁপত না, ঘরে ইডি পাঠাব, সিবিআই পাঠাব এসব চমকানো নয়, বাইক বাহিনী নিয়ে ঘুরেছেন ক্যাডারদের পাশে থাকতে। কাঁধে গামছা, সমর্থক আর কর্মীরা দেখেছেন একজন নেতা যিনি ফোরফ্রন্টে দাঁড়িয়ে লড়াই করছেন। আর ২০১৯-এ ১৮টা আসন মানে প্রত্যেকেই ধরে নিলেন খেলা শেষ, বিজেপি আসছেই ক্ষমতায়।

আরও পড়ুন: Aajke | এত স্ববিরোধী কথাবার্তা কেন বলেই চলেছেন অভয়ার বাবা-মা?

হলটা কী? ২০২১-এ? দিলীপ ঘোষ প্রায় সাইডলাইনে, সর্বত্র ঘুরছেন কাঁথির খোকাবাবু, পেছনে পুরনো তৃণমূলের কিছু কর্মী, দলে আদি নব ইত্যাদি ভাগ, ২০০ পার তো দূরস্থান, কেঁদে ককিয়ে ৩৮ শতাংশ ভোট, আর ৭৭টা আসন। ২০২৪ সাধারণ নির্বাচন, বাওয়াল এল ওই কাঁথির খোকাবাবুর তরফ থেকেই, ২৯ তো বটেই ৩১ পাব আর সরকার ভেঙে দেওয়া হবে। শোনা যায় ওনারই উসকানিতে দিলীপ ঘোষ সমেত কয়েকজনের আসন বদলানো হল, ১৮ থেকে ৩০-এ যাওয়ার বদলে ৬টা কমে ১২টা। মোদিজি ক্যাম্পেন করলে সাধারণভাবে ভোট বাড়ে ৭-১০ শতাংশ, বিভিন্ন রাজ্যেই, এখানে ভোট একই থেকে গেল, আর ২০১৯-এর তুলনায় ভোট কমল প্রায় তিন শতাংশ। দলে প্রবল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, যার প্রায় পুরোটাই ওই শুভেন্দু অধিকারী ক্যাম্প থেকেই উসকানি। আপাতত তিনি দলের ধর্না মিছিল প্রোগ্রামেও যাচ্ছেন না, দলের সাংগঠনিক সভাতেও যাচ্ছেন না, নিজের মতো করে যা করছেন তাতে দলে ফাটল আরও চওড়া হচ্ছে, একের পর এক নির্বাচিত এমএলএ যোগ দিচ্ছেন তৃণমূলে। এতবড় আরজি কর ইস্যুতে শুভেন্দু যাকে বলে ধেড়িয়েছেন, ছাত্র সমাজের নাম করে এক বকচ্ছপ আন্দোলন খাড়া করতে গিয়ে আরও জনবিচ্ছিন্ন হয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। এর মধ্যে আবার নিজের উঠোনে কাঁথির সমবায় নির্বাচনে হার নয়, গোহারান হেরেছেন। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে ডাল মে কুছ তো কালা হ্যায়, বিজেপির এক রাজ্য নেতা নাম গোপন রাখার শর্তে সেদিন এক বড়সড় ফোনালাপে রাজি হলেন। উনিই বললেন যে দলের মধ্যেই নাকি কথা উঠছে, শুভেন্দু অধিকারী কি তাহলে দলটাকে এ রাজ্য থেকে তুলে দেওয়ার জন্যই দলে এসেছেন। তাঁর বক্তব্য, তিনি আসা ইস্তক দলের মধ্যে আদি-নব্য দ্বন্দ্ব তুঙ্গে, সবচেয়ে সফল, সবচেয়ে জনপ্রিয় বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের নামে তিনি দিল্লিতে নাকি প্রচুর ভুল বুঝিয়েছেন, সেসব অভিযোগে নাকি চরিত্র ইত্যাদি নিয়েও কথাবার্তা উঠেছে। সব মিলিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর চালচলন, তাঁর কাজ কারবারে বিজেপির লাভ তো নয় বরং ক্ষতি হচ্ছে। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম যে শুভেন্দু বিজেপিতে যাওয়ার আগে বিজেপির ভোট পার্সেন্টেজ আর আসন দুটোই বাড়ছিল, শুভেন্দু যাওয়ার পর থেকেই তা হু হু করে কমছে। আপনাদের কী মনে হয়, কেন কমছে? শুনুন কী বলেছেন মানুষজন?

হ্যাঁ, পরিসংখ্যান খুব পরিষ্কার বলে দিচ্ছে যে যেদিন থেকে শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে গিয়েছেন, সেই দিন থেকেই বিজেপির ভোটের গ্রাফ নীচের দিকেই নেমেছে, বিজেপি যেভাবে ক্ষমতার দিকে হাত বাড়াচ্ছিল তাতে মনে হয়েছিল ২০২১-এই রাজ্যের ক্ষমতা বদল হবে, তা তো হয়ইনি, এখন যত দিন যাচ্ছে মনে হচ্ছে যে বিজেপি আবার তার সেই ১৪-১৬ শতাংশের দিকেই হাঁটা দিচ্ছে। ক্ষমতায় আসা তো দূরের কথা, নিজেদের অস্তিত্বকে ধরে রাখাও কঠিন হয়ে উঠছে আর সবচেয়ে বড় কথা বিজেপির মতো এক ক্যাডারভিত্তিক ডিসিপ্লিন্ড দলের মধ্যে যে খেয়োখেয়ি চলছে তা কিন্তু বহু জায়গাতেই দেখাও যায় না।

Read More

Latest News