skip to content
Sunday, February 9, 2025
HomeScrollAajke | এত স্ববিরোধী কথাবার্তা কেন বলেই চলেছেন অভয়ার বাবা-মা?
Aajke

Aajke | এত স্ববিরোধী কথাবার্তা কেন বলেই চলেছেন অভয়ার বাবা-মা?

১৬৫ দিন পরে বলতে বাধ্য হচ্ছি এনাফ ইজ এনাফ

Follow Us :

কানাকে কানা বলিও না, খোঁড়াকে খোঁড়া বলিও না, ইহাতে উহারা কষ্ট পাইবে। ছোট্টবেলাতে পড়েছি, আজও মেনে চলি, আর এখন তো রাষ্ট্রেরও সেরকমই নির্দেশ। সে ছাড়াও বহুক্ষেত্রেই আমরা নিজেদের মুখ বা কলমকে সংযত রাখি, সব সময় সব ব্যাপারেই সত্যিটা মুখের উপর বলার মধ্যে কোনও বিরাট গর্ববোধ লুকিয়ে থাকার কথা নয়। মানে ধরুন এক অত্যন্ত বদ মানুষের পুত্র বা কন্যা আপনার বন্ধু বা বান্ধবী, সেই বদ মানুষটি মারা গেছেন, আপনার অনিচ্ছে সত্ত্বেও আপনাকে সেখানে হাজির হতে হয়েছে। সেখানে গিয়ে শুনছেন, তিনি কত মহান ছিলেন ইত্যাদি বলে বলে কান্নাকাটি হচ্ছে, আপনি কী করবেন? চিৎকার করে বলবেন যে থাম ভাই, একটা বদের হাঁড়ি মারা গেছে বেশ হয়েছে? বলা যায় না, বলতে নেই, মৃত্যুশোক দুঃখের আবহে কটু সত্যি বলাটা শোভনীয় নয়। এক বিশাল মাপের রাজনৈতিক নেতার পুত্র মারা গিয়েছিলেন বাইক অ্যাকসিডেন্টে, তো পুলিশের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম, প্রচুর মদ খেয়ে বাইক চালাতে গিয়েই এই বিপত্তি। কিন্তু যখন ওনার বাড়িতে গেলাম, আফটার অল এক মানুষ তাঁর সন্তান হারিয়েছেন, আমি যাওয়ার পরেই সেই মানুষটি বলতে শুরু করলেন যে আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের চক্রান্তে কীভাবে তাঁর পুত্রকে আসলে হত্যা করা হল। না, একটা কথাও বলিনি, বলতে পারিনি। কিন্তু আজ বললে বলে দেব সত্যি কথাটা মুখের উপরে, কারণ বিনয় বা শোভন অশোভনের একটা সীমা আছে। সেই ৮ অগাস্টের জঘন্য ধর্ষণ আর হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই বহুবার মনে হয়েছে যে মৃতা, নির্যাতিতার বাবা মা মিথ্যে বলছেন, বার বার বিভিন্ন কথা বলছেন, যার প্রতিবাদ করিনি, করিনি কারণ এই বিরাট শোকের আবহে সেটা বলা উচিত ছিল না কিন্তু এবারে সম্ভবত সেই আগল খুলেই যাবে। ১৬৫টা দিন কেটে গেছে, এই ধর্ষণ আর মৃত্যুকে ঘিরে এক অর্থহীন আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বহু মানুষ, কিন্তু তার এক পর্যায়ের লজিক্যাল পরিসমাপ্তির পরেও আর সেই ভদ্রতা বজায় রাখা অসম্ভব হয়ে উঠছে, আজ সেটাই বিষয় আজকে, এত স্ববিরোধী কথাবার্তা কেন বলছেন অভয়ার বাবা মা?

এটা ঘটনা যে তাঁদের একমাত্র সন্তান এক জঘন্য ঘটনার শিকার, সেই আত্মজা আর ফিরে আসবে না, কিন্তু সেই শোক সামলে ওঠাও তো এক জরুরি বিষয়। এত মানুষ ওই মৃত্যুর পরে রাস্তায় নেমেছেন, এত মানুষ ন্যায়বিচারের দাবিতে রাত জেগেছেন, এত মানুষের সমর্থন, তাঁদের সন্তানের বন্ধুবান্ধবী, সহপাঠীদের সমর্থন, সঙ্গে থাকা, এই দীর্ঘ সময় ধরে এক আন্দোলন, সবই তো হয়েছে, সেটা চলুক না। তাঁদের মনে হতেই পারে যে বিচার পাওয়া যায়নি, তাঁরা আবার বিচার চান, কিন্তু সমানের কারও না কারও শেখানো কথাগুলো বলে চলেছেন, বিভ্রান্ত করছেন প্রত্যেককে, পক্ষে বিপক্ষের প্রত্যেক মানুষ ক্ষুব্ধ। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তিন দিনের মাথায় বাড়িতে চলে গেলেন, গুরুত্ব বুঝেছিলেন তাই গিয়েছিলেন, ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ওনার বাড়িতে যাওয়ার তো কোনও দরকার ছিল না।

আরও পড়ুন: Aajke | আমাকে ফাঁসি দিন, আমাকে ফাঁসানো হয়েছে, সঞ্জয় রায়

এবারে দেখুন সেই দিনের ফুটেজগুলো, ওনারা বলছেন মুখ্যমন্ত্রীর উপর আমাদের আস্থা আছে, পুলিশ তদন্ত করছে, নিশ্চয়ই দোষী শাস্তি পাবে। তারপরের দিনেই বললেন, পুলিশ আমাদের মুখ বন্ধ রাখার জন্য টাকা দিতে চেয়েছিল। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে পুলিশকর্তাদের নিয়ে এক ষড়যন্ত্র করে যাঁকে হত্যা করা হল তার বাবা-মাকে মুখ বন্ধ রাখার জন্য সেই প্রশাসনের একজন আইপিএস অফিসার গিয়ে কুড়ি হাজার টাকা দিয়ে তাঁদের মুখ বন্ধ করাতে গিয়েছিলেন? এই কথা যিনি বলবেন, তিনি তো উন্মাদ, আমরা সেদিনই বলেছিলাম এই অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই, কিন্তু সঙ্গে এটাও ভেবেছিলাম, এরকম এক শোকে মানুষ তো উন্মাদ হয়ে যায়, কথা বাড়াইনি। উনি সিবিআইকে ওনার প্রথম বয়ান দিতে গেলেন ১৫ অগাস্ট, ২০২৪, সেখানে কিছুই বললেন না। ক’দিন পরেই দ্বিতীয়বার আবার বয়ান দিলেন, সেখানে বললেন যে উনি দ্বিতীয়বার পোস্টমর্টেমের জন্য মৌখিকভাবে বলেছিলেন যা পুলিশ শোনেনি। উনি টালা থানায় গিয়েছিলেন সঙ্গে ছিলেন ওনার পড়শি, যাঁকে আলোচনার জন্য তিনি রাত দশটার পরেও বাড়িতে ডাকেন, যাঁকে তিনি মেয়ের খবর পেয়ে হাসপাতালে আসার পরেই ফোন করে আসতে বলেছিলেন, যিনি পড়ি কি মরি করে ১টার মধ্যে হাসপাতালে যাচ্ছেন, যিনি সারাক্ষণ ওনাদের সঙ্গে ছিলেন, মৃতার দেহ পোড়ানো পর্যন্ত। তিনি বলছেন এই দ্বিতীয় পোস্টমর্টেমের কথা তিনি জানেন না। এই দ্বিতীয় পোস্টমর্টেমের কথা তিনি ১৫ অগাস্ট পর্যন্ত কোথাও বলেননি, কিন্তু তার ক’দিন পর থেকেই বলা শুরু করলেন যা শিয়ালদহ নিম্ন আদালতের বিচারক ধর্তব্যের মধ্যেও আনেননি। কারণ উনি সত্যি বলছিলেন না। উনি আদালতের মধ্যে বিচারকের রায়দান শেষে মানে সাজা নয়, যেদিন অভিযুক্ত দোষী না নির্দোষ তার ঘোষণা করলেন বিচারক সেদিন কী বললেন? রায় ঘোষণার পরে শিয়ালদহ আদালতের বিচারক যখন এজলাস ছাড়ছেন, তখন সবার নজর ছিল আরজি করের নির্যাতিতার বাবা–মায়ের দিকে। বিচারকের উদ্দেশে ছলছল চোখে হাতজোড় করে নির্যাতিতার বাবাকে বলতে শোনা যায়, “আপনার উপর যে আস্থা রেখেছিলাম, তার পূর্ণ মর্যাদা রেখেছেন। আপনাকে ধন্যবাদ দিতে চাই।” বিচারক বেরিয়ে গেলেন, ওনারাও বেরিয়ে এলেন, মিডিয়ার সামনে বললেন বিচার পেলাম না। এবং ওনাদের এই স্ববিরোধী মন্তব্য বা ব্যবহারের পরেই ওনাদের পক্ষে দাঁড়ানো প্রথম আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য সরে গেছেন বা তাঁকে সরানো হয়েছে, পরের আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার সরে গেছেন। এটা না জাস্ট আর নেওয়া যাচ্ছে না। ১৬৫ দিন পরে বলতে বাধ্য হচ্ছি এনাফ ইজ এনাফ। এবারে বিচার পেতে দিন আপনার আত্মজাকে। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম, এই আরজি কর ধর্ষণ খুনের মামলা চলাকালীন নির্যাতিতার বাবা-মা যাঁরা তাঁদের একমাত্র সন্তানকে হারিয়েছেন সেটা যেমন সত্যি তেমনই তাঁদের অনেক স্ববিরোধী মন্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী আমাদের টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করছে ধাঁচের অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য কি তদন্তের ক্ষতি করেছে? শুনুন দর্শকরা কী বলেছেন।

এই গোটা এপিসোডে আরও একজন তাঁর অনেক কিছু খুইয়েছেন, এক ধর্ষণ আর হত্যা, ওই রাতে এক অপরাধীর কাছে তিনি হারিয়েছেন তাঁর জীবনসঙ্গিনীকে, যাঁর সঙ্গে এই বছরের নভেম্বর মাসেই ওই নির্যাতিতার বিয়ের কথা পাকা হয়েছিল, যিনি নিজেও ডাক্তার। কিন্তু একটা কথাও বলেননি, তদন্তে সহযোগিতা করেছেন, নিজের শোককে নিয়ে নিভৃতেই থাকতে চেয়েছেন, মিডিয়ার আলোতে ভেসে সেলিব্রিটি হয়ে ওঠার ইচ্ছে তাঁর হয়নি যা তিনি চাইলেই হতেই পারত। অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে তিনি অনেককেই জানিয়েছেন, আমাকে একটু আমার মতো করে থাকতে দিন, আমাকে একটু স্পেস দিন, আমার যা গেছে তার স্মৃতি নিয়ে থাকতে দিন, সেরকম কিছু বলার থাকলে আমি আপনাদের যোগাযোগ করে নেব। হ্যাঁ, এটাকেই ডিগনিটি বলে, বেঁচে থাকার জন্য যা বড্ড প্রয়োজন।

RELATED ARTICLES

Most Popular