Sunday, August 24, 2025
HomeScrollআইআইটি পাশ থেকে ধর্মের পথ, জেনে নিন বৃত্তান্ত

আইআইটি পাশ থেকে ধর্মের পথ, জেনে নিন বৃত্তান্ত

ওয়েব ডেস্ক: মহাকুম্ভের (Mahakumbh 2025) ভিড় থেকে হঠাৎ করেই সকলের নজরে এসেছেন আইআইটি বাবা (IIT Baba)। সুদর্শন এক যুবক, গালে হালকা চাপ দাঁড়ি, মাথার চুলে এখনও তৈরি হয়নি জটা, চোখেমুখে প্রশান্তির ছাপ স্পষ্ট। আপনারা সকলেই হয়তো জেনেছেন, এই সাধুবাবা দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছেন, লিখেছেন একটি সম্পূর্ণ বইও। তারপর তিনি বেছে নিয়েছেন আধ্যাত্মিকতার পথ। কিন্তু কেন? শুধুমাত্র আধ্যাত্মিকতার নেশায় নিশ্চিত জীবন ছেড়ে সাধনার পথ বেছে নিয়েছেন তিনি? নাকি জীবনের কঠিন লড়াইকে এড়িয়ে যেতেই তিনি নিয়েছেন সন্ন্যাস?

সালটা তখন ২০০৮। হরিয়ানার (Haryana) অভয় সিং (Abhay Singh) তখন বাবার ইচ্ছেপূরণ করার জন্য দিনরাত এক করে আইআইটি-র (IIT) জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তাঁর নিজের বিশেষ কিছু ইচ্ছে না থাকলেও শুধুমাত্র বাবার জন্য তিনি বসেছিলেন প্রবেশিকা পরীক্ষায়। পাশও করেন ভালোভাবেই। দেশব্যপী তাঁর র‍্যাঙ্ক আসে ৭৩১। অভয়ের সামনে খুলে যায় আইআইটি মুম্বইয়ের (IIT Mumbai) দরজা। ২০০৮ থেকে ২০১২- মাঝের এই কয়েকটা বছর তরুণ অভয়কে একজন ইঞ্জিনিয়ার করে তোলে। কিন্তু ফটোগ্রাফার হওয়ার সুপ্ত ইচ্ছে তখনও বেঁচে ছিল সদ্য আইআইটি পাশ যুবকের মনে। একথা শুনে আপনাদের হয়তো ‘3 Idiots’ সিনেমার ফারহানের কথা মনে পড়ছে। সেটাই স্বাভাবিক। যেভাবে ফারহানও ফটোগ্রাফির শখকে দমিয়ে রেখে শুধুমাত্র বাবা-মায়ের ইচ্ছেপূরণের জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং করছিলেন, অভয়ের জীবনের গল্পটা অনেকটা সেরকমই। তফাৎ একটাই- ফারহান ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেনি, কিন্তু অভয় সেই পথে পা বাড়ায়নি। হরিয়ানার অভয় সিং আইআইটি মুম্বই থেকে এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিটেক করেন। তারপর আবার ডিজাইনিংয়ে মাস্টার্সও করেন তিনি। টানা এক বছর আইআইটির কোচিং ইন্সটিটিউটে ফিজিক্সও পড়িয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন: মহিলারাও কি ‘নাগা সাধু’ হতে পারেন?

এরপর জীবনের নিগূড় রহস্য নিয়ে ভাবা শুরু করেন তিনি। ‘A Beautiful Place To Get Lost’ নামে একটি বইও লিখে ফেলেন। অনেকেই মনে করেন, এই বই লেখার সময় থেকেই অভয়ের জীবনের মোড় ঘুরে যায়। আধ্যাত্মিকতার সন্ধানে মানালি থেকে ২০০০ কিমি পায়ে হেঁটে যান চার ধামের উদ্দেশ্যে। শুরু হয় তাঁর জীবনের অমোঘ আধ্যাত্মিক যাত্রা। কিন্তু এর মাঝে কি প্রেম দেখা দিয়েছিল এই সাধকের জীবনে? অকপটে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন আইআইটি বাবা। এই বিষয়ে তিনি বলেন, “আইআইটি তে ১০ জনের মধ্যে ১ জন মেয়ে। কিন্তু ডিজাইন স্কুলে ১০ জনের মধ্যে ৭ জন মেয়ে ছিল।” পরক্ষণেই তিনি বলেন “জীবন কী সেটা আগে বুঝতে হবে। আর সমস্ত অভিজ্ঞতা না হলে জীবনের মানে বোঝা সম্ভব নয়।”

এইসব শুনে অনেকেরই মনে হতে পারে যে, এই হ্যান্ডসাম সাধু আইআইটি-র একটা সিট নষ্ট করলেন। অনেকেই আবার ভাবতে পারেন, অতিরিক্ত গঞ্জিকা সেবনের জন্য আজ উনি মানসিকভাবে অস্থির। কিন্তু এসব কি ঠিক? হয়তো না। কারণ আইআইটি বাবার কথাবার্তা শুনে তাঁকে যথেষ্ট বুদ্ধিমানই মনে হয়। পাশাপাশি তাঁর স্মৃতিশক্তিও বেশ প্রখর। এমনকি অজানাকে জানার ইচ্ছেও তাঁর মধ্যে প্রবল। তা না হলে, নিশ্চিত জীবন ছেড়ে নিজের জীবন দর্শন দিয়ে সমস্ত পার্থিব বস্তু ও সম্পর্কের মায়া ত্যাগ করে তিনি এই রাস্তা বেছে নিতেন না। শেষ কথা একটাই, জীবনকে নিজের মতো কাটানোর অধিকার সকলেরই রয়েছে। আইআইটি বাবা যাই করুক না কেন, অন্তত কাউকে ঠকাচ্ছেন না, কারও ক্ষতি করছেন না। নিজের মতো করে জীবন উপভোগ করছেন। তাই তাঁর জীবনকে নিয়ে প্রশ্ন করার আগে আমাদের উচিত নিজেদের জীবনকে আরও বেশি আলোর পথে উন্নীত করা।

দেখুন আরও খবর: 

Read More

Latest News