ওয়েব ডেস্ক: শীতল বরফের বুকেই মৃত্যু দাঁড়িয়ে ছিল ওত পেতে। তুষারে ঢাকা হ্রদের উপর আচমকাই আছড়ে পড়ে একটি ছোট বিমান (Plane Crash)। প্রবল ঠান্ডা, অন্ধকার রাত—কিন্তু জীবন এত সহজে হার মানেনি। আশ্চর্যজনকভাবে প্রাণে বাঁচলেন পাইলট ও তাঁর দুই কন্যা! রবিবার আমেরিকার আলাস্কার (Alaska Plane Crash) দুর্গম Tustumena হ্রদে ভেঙে পড়ে Piper PA-12 Super Cruiser বিমানটি। সন্তানদের নিয়ে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে বেরিয়েছিলেন পাইলট, কিন্তু আনন্দের সফর মুহূর্তেই ভয়াবহ বিভীষিকায় বদলে যায়। দুর্ঘটনার পর তিনজনই বিমানের ভাঙা ডানায় আশ্রয় নেন। প্রতিকূল আবহাওয়া, হাড় কাঁপানো ঠান্ডা—তবুও ১২ ঘণ্টা ধরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে অলৌকিকভাবে ফিরে এলেন তাঁরা।
দুর্ঘটনার পর বিমানের কোনো খোঁজ মিলছিল না, যাত্রীদের অবস্থাও ছিল অজানা। এমন পরিস্থিতিতে সামাজিক মাধ্যমে সাহায্যের আবেদন জানায় তাঁদের পরিবার। খবর পেয়েই তৎপর হন স্থানীয় এক অভিজ্ঞ পাইলট, টেরি গোডেস। বিমান নিয়ে আকাশপথে অনুসন্ধান চালিয়ে অবশেষে তিনি দেখতে পান দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষ। প্রথমে মনে হয়েছিল, হয়তো কেউই বেঁচে নেই। কিন্তু কাছে যেতেই স্তব্ধ হয়ে যান— বিমানের ভাঙা ডানার উপর থেকে হাত নাড়ছেন এক ব্যক্তি! তাঁর দুই শিশুকন্যাও তখন ঠান্ডায় জমে গেলেও জীবনের আশায় বিমানের ধাতব কাঠামো আঁকড়ে ধরে রেখেছিল নিজেদের।
আরও পড়ুন: ২,০০০ ভারতীয়র ভিসা-র আবেদন বাতিল করল আমেরিকা, কিন্তু কেন?
-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ভয়ানক ঠান্ডা! চারপাশে শুধুই সাদা বরফ আর হাড়ভাঙা শীতের কামড়। তবুও ১২ ঘণ্টা ধরে বিমানের ভাঙা অংশে আটকে ছিলেন পাইলট ও তাঁর দুই মেয়ে। টেরি গোডেস বলেন, “ধ্বংসাবশেষ দেখে মনে হচ্ছিল, এখানে কেউ বেঁচে থাকার প্রশ্নই আসে না। কিন্তু যখন দেখি তাঁরা জীবিত, তখন শিহরিত হয়ে যাই।” দ্রুত উদ্ধারকারী দলকে খবর দেওয়া হয়। সহায়তায় এগিয়ে আসেন আরও এক পাইলট, ডেল ইচার। পরে আলাস্কা ন্যাশনাল গার্ডও যুক্ত হয় অভিযানে। অবশেষে তাঁদের নিরাপদে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
আলাস্কার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত এই হ্রদ বরাবরই ভয়ঙ্কর বলে পরিচিত। আকস্মিক ঝড়, প্রতিকূল আবহাওয়া আর কঠিন ভৌগোলিক অবস্থার কারণে এখানে দুর্ঘটনার আশঙ্কা সবসময় থেকেই যায়। হ্রদের চারপাশে উঁচু পাহাড় থাকায় কুয়াশা ও তীব্র বাতাস বিমান চলাচল আরও কঠিন করে তোলে। আলাস্কার ফিশ অ্যান্ড গেম বিভাগ ইতিমধ্যেই এই অঞ্চলের উপর বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে। কী কারণে বিমানটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ল, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
আলাস্কার দুর্গম অঞ্চলে বিমানই যোগাযোগের একমাত্র ভরসা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক বিমান দুর্ঘটনা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসেই এখানেই এক মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ১০ জন। বারবার এমন দুর্ঘটনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তবে ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যেও বেঁচে ফেরা তিন যাত্রীর এই অবিশ্বাস্য কাহিনি এখন সবার মুখে মুখে।
দেখুন আরও খবর: