রূপম রায়, নদিয়া: গেদে সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গাদের (Rohingya) প্রবেশ নিয়ে, তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা। শিয়ালদহ স্টেশন (Sealdah station) থেকে গ্রেফতার করা হয় তিন জন সন্দেহভাজন (Suspects Arrested) রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীকে (Rohingya Infiltrators)৷ তিন জনের মধ্যে দু জন নাবালিকা রয়েছে ৷
শিয়ালদহ জিআরপি (Sealdah GRP) সূত্রে খবর, গতকাল সকালে শিয়ালদহ স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে একজন পুরুষের সঙ্গে দুই নাবালিকাকে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াতে দেখে সন্দেহ হয় টিকিট পরীক্ষকের৷ তিনি টিকিট দেখাতে চাইলেও দেখাতে পারেননি তাঁরা৷ এর পরই জিজ্ঞাসাবাদে ওই ব্যক্তি অসংলগ্ন কথা বলায় আরপিএফ-এ খবর দেন টিকিট পরীক্ষক৷ আরপিএফ এসে পরিচয়পত্র এবং নথি দেখতে চাইলে কিছুই দেখাতে পারেননি ওই তিন জন৷ তাঁদের কাছে পাসপোর্টও ছিল না৷
আরও পড়ুন: ‘দুয়ারে সরকার’, শিবির নিয়ে ১১ দফা নির্দেশিকা নবান্নের
শুধু মায়ানমারের পরিচয়পত্র মিলেছে৷ এর পরই আরপিএফ-এর পক্ষ থেকে শিয়ালদহ জিআরপি থানায় খবর দেওয়া হয়৷ জিআরপি থানার পুলিশ এসে তিনজনকে গ্রেফতার করে৷জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত মায়ানমারের বাসিন্দা আব্দুল রহমান নামে ওই ব্যক্তি জানান, দুই নাবালিকার সঙ্গে গতকাল রাতে গেদে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন তিনি৷
কুড়ি হাজার টাকার বিনিময়ে ভারতে ঢোকেন তাঁরা৷ এর পর গেদে থেকে লোকাল ট্রেন ধরে শুক্রবার রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ শিয়ালদহ স্টেশনে পৌঁছন তাঁরা৷ তাদের উদ্দেশ্য ছিল শিয়ালদহ থেকে ট্রেন ধরে দিল্লি যাওয়ার৷ মায়ানমারের বাসিন্দা ধৃত ওই ব্যক্তি জানান, দিল্লিতে তাঁর পরিচিত আরও কয়েকজন রোহিঙ্গা আগে থেকে রয়েছেন৷
গেদে সীমান্ত দিয়ে কুড়ি হাজার টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের প্রবেশ সম্পর্কে কৃষ্ণগঞ্জ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের যুব সভাপতি শুভজিৎ সরকার বলেন, বিএসএফকে টাকা দিয়েই এই সমস্ত রোহিঙ্গারা গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করছে। সীমান্তের সুরক্ষার দায়িত্ব বিএসএফের ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। তাদের গাফিলতির জন্যেই বাংলাদেশের ভয়াবহ অবস্থার মধ্যেও সীমান্ত পেরিয়ে অনায়াসেই রোহিঙ্গারা প্রবেশ করছে ভারতে। বিএসএফকে সীমান্তে পাহারা সম্পর্কে আরও সজাগ হতে হবে।
এ ব্যাপারে কৃষ্ণগঞ্জের বিজেপি নেতা অমিত পরামানিক বলেন, রাজ্য সরকারের জমি জটের জন্যই বিএসএফ পাহারা থাকা সত্ত্বেও যেখানে তার কাটার বেড়া নেই সেইখান দিয়েই কিন্তু অনুপ্রবেশ হচ্ছে। রাজ্য সরকার জমি দিলে আজকে এই অবস্থা হত না। পাশাপাশি তিনি বলেন, দেশের সুরক্ষার স্বার্থে রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্র সরকার উভয়কেই সীমান্তের সুরক্ষার জন্য করা ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে আগামী দিন খুবই বিপজ্জনক ।
যদিও সীমান্তের বাসিন্দা রমেশ ঘোষ বলেন, বিএসএফ সীমান্তে পাহারা দেয় বলেই তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারেন ও রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারেন ।
তবে সীমান্তে অনুপ্রবেশ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিএসএফকে আরও সতর্ক হতে হবে। কড়া পাহারার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে কোনও অনুপ্রবেশকারী আর ভারতে প্রবেশ করতে না পারে।
স্থানীয় বাসিন্দা রূপ কুমার ঘোষ বলেন, বিয়েতে টাকা নিয়ে অনুপ্রবেশ করাচ্ছে এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তবে সীমান্তে যে দালাল চক্র সক্রিয় এটা তিনি স্বীকার করেন। পাশাপাশি তিনি বলেন, যেহেতু সীমান্তের তারকাটা নিয়েই এবং শীতের সময় কুয়াশা থাকে সেই সময়টাকে কাজে লাগাচ্ছে দালালরা।
পাশাপাশি তিনি জোরের সঙ্গে বলেন, সীমান্তে আগে চুরি ডাকাতি হলেও বর্তমানে সেগুলো বন্ধ রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা রাতে ঘুমাতে পারছেন বিএসএফের জন্যই। তবে যে সমস্ত জায়গায় তারকাটা দিতে বাকি রয়েছে সেগুলো তারকাটা দেওয়া হলেই সমস্ত অনুপ্রবেশ বন্ধ হবে।
দেখুন অন্য খবর: