Thursday, November 20, 2025
HomeScrollস্বামীর সঙ্গে মিলে সংসারের হাল ধরছেন জেলার প্রথম মহিলা শিউলি!
Jaynagar

স্বামীর সঙ্গে মিলে সংসারের হাল ধরছেন জেলার প্রথম মহিলা শিউলি!

জেলার সর্বপ্রথম মহিলা শিউলি মাজিদা লস্কর!

ওয়েব ডেস্ক : সংসারের হাল ধরার জন্য স্বামীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে খেজুর গাছে হাড়ি বাঁধছে জেলার প্রথম মহিলা শিউলি (Siuli)। মহিলারা পারেনা এমন কোন অসাধ্য সাধন কাজ এ দুনিয়ায় নেই। মহিলাদের বীর পরাক্রমের কথা ইতিহাসের পাতা থেকে শুরু করে অপারেশন সিদুঁর পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে। স্বামীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংসারের হাল ধরার জন্য মাজিদা লস্কর এখন জেলার প্রথম মহিলা শিউলি।

সাধারণত শীতের সময় বাঙালি রচনা তৃপ্তিতে নানান পিঠেপুলি খাদ্য তালিকায় রয়েছে। কিন্তু পিঠে পুলি নলেন গুড় (Nalen jaggery) ছাড়া যেন অসমাপ্ত। জয়নগরের (Jainagar) প্রসিদ্ধ মোয়া তৈরিতেও নলেন গুড়ের অবদান অপরিসীম। সেই কারণে শীতের সময় খেজুর গাছের এই রস দিয়ে তৈরি হয় নলেন গুড়ের চাহিদা থাকে অপরিসীম। সাধারণত এই শীতের সময় খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করার জন্য শিউলিরা খেজুর গাছে হাড়ি বাঁধেন।

ছোটবেলা থেকে মাজিদার স্বামী আব্দুর রউফ লস্কর এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। বিবাহের পর থেকে সংসারের হাল ধরার জন্য মাজিদা লস্কর ওনার স্বামীর সঙ্গে শিউলির কাজ শুরু করে। বিয়ের পর থেকে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে স্বামীর সঙ্গে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকে তিনি এখন পাকা দস্তুর শিউলি হয়ে উঠেছে। এখন নিজে নিজেই খেজুর গাছের রস সংগ্রহ থেকে শুরু করে নলেন গুড় তৈরি করার প্রক্রিয়াতেও তিনি সিদ্ধহস্ত। এই দম্পতি মিলে এলাকার প্রায় ১৮০ থেকে ২০০ টি খেজুর গাছ থেকে একদিনে রস সংগ্রহ করেন।

আরও খবর : বিষ্ণুপুর পুরসভার চেয়ারম্যান থাকছেন গৌতম, জানাল তৃণমূল!

জয়নগরের (Jaynagar) দু’নম্বর ব্লকের মনিপুর বাঁশতলা এলাকার বাসিন্দা এই দম্পতি এখন জয়নগর এলাকার প্রসিদ্ধ বেশ কয়েকটি মোয়া দোকানের নলেন গুড়ের সরবরাহ প্রথম সারির শিউলি। জেলার প্রথম মহিলা শিউলি হয়ে ওঠার গল্প জানালেন মাজিদা নস্কর! তিনি বলেন, “সংসারের অভাব গোছানোর জন্য স্বামীর সঙ্গে এই কাজে আমি যুক্ত হই। প্রথমের দিকে বহু বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে আমার। এই কাজ শিখতে গিয়ে বহু আঘাত এবং ব্যাথা সহ্য করতে হয়েছে। খেজুর গাছের কাঁটা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। কিন্তু ধীরে ধীরে স্বামীর সঙ্গে এই কাজের সঙ্গে থেকে আমি সমস্ত কিছু শিখেছি। এই শীতের মৌসুমে স্বামীর সঙ্গে এই শিউলির কাজ করি। এর ফলে সংসারের অর্থের সংকট কিছুটা হলেও দূর হয়। দুজনে মিলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই কাজ করি।”

এ বিষয়ে আব্দুর রউফ লস্কর বলেন, “ছোটবেলা থেকে এই কাজের সঙ্গে আমি যুক্ত রয়েছি। আমি এক দিনে ১৮০ থেকে ২০০ টি গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করি। আমার স্ত্রী প্রথম আগ্রহ জানিয়েছিল সে আমার সঙ্গে এই কাজ করবে। এরপর ধীরে ধীরে স্ত্রীকে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত করি। নিজে হাতেই গাছ থেকে খেজুর রস সংগ্রহ করবে কিভাবে খেজুর রস থেকে নলেন গুড় প্রস্তুত করবে সমস্ত প্রক্রিয়া শেখায়। বেশ কয়েক বছর ধরে ধীরে ধীরে এই কাজ শিখে তিনি এখন পাকা দস্তুর মহিলা শিউলি হয়ে উঠেছে। ১৫ বছর ধরে আমার পাশে থেকে আমাকে সাহায্য করে যাচ্ছে আমার স্ত্রী। আমার স্ত্রী আমার সহযোগিতা করার জন্য এবং সংসারের হাল ধরার জন্য এই সিদ্ধান্তে আখেরে আমার অনেক সাহায্য পাশাপাশি সংসারের অনেকটাই অর্থনৈতিক সংকট ঘুচে গিয়েছে। আমরা এই শীতকালে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হই সারা বছর চাষবাস করি। চাষবাস করার সময়ও আমার স্ত্রী আমাকে সাহায্য করে। এভাবেই আমার জীবন সংগ্রামের লড়াইয়ে আমার স্ত্রী অন্যতম যোদ্ধা। এই কাজ অনেক কষ্টসাধ্য কাজ সেই কারণে আগামী প্রজন্ম এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইছে না। এই কাজে লাভ অনেক কম। যে পরিমাণ পরিশ্রম আমরা করি সেই পরিমাণ টাকা আমরা পাই না। এর ফলে আগামী প্রজন্ম এই কাজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।”

দেখুন অন্য খবর :

Read More

Latest News