ওয়েব ডেস্ক: বাংলার জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো (Durga Puja) মানেই ঐতিহ্য, কাহিনি আর ইতিহাস। তেমনই এক প্রাচীন দুর্গাপুজোর (Ancient Durga Puja) সাক্ষী বাঁকুড়ার (Bankura) কোতুলপুর। প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো, ভদ্র জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো। রামকৃষ্ণ দেবের স্মৃতি বিজড়িত এই জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো আজও এলাকার মানুষের কাছে নস্টালজিয়া।
কোতুলপুরের ভদ্র পরিবারের ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে ব্যবসা ও জমিদারির সঙ্গে। জনমুখে শোনা যায়, মনসামঙ্গল খ্যাত চাঁদ সওদাগরের উত্তরপুরুষ এই ভদ্ররা। লবনের আমদানি রফতানি ব্যবসায় গড়ে ওঠে বিপুল সম্পদ। প্রায় ৩৫০ বছর আগে বর্ধমানের মহারাজ উদয় চাঁদ মহাতাপের কাছ থেকে কিনে নেওয়া হয় ১৭টি তালুকের জমিদারি। একদিকে রমরমিয়ে চলা লবন ব্যবসা অন্যদিকে জমিদারি আয় বাড়তে থাকে। জরিদারি পত্তনের পাশাপাশি শুরু হয় দেবী দুর্গার আরাধনা। প্রথমে সাতমহলা জমিদারবাড়ির উঠোনে গড়ে ওঠে দুর্গা মণ্ডপ। ভাগ হয়ে যায় পরিবার, ভাগ হয়ে যায় পুজোও। কিন্তু জাঁকজমকে কোনো খামতি ছিল না। দুর্গাপুজো ঘিরে হত পুতুল খেলা, রামলীলা, যাত্রাপালা, গমগম করত জমিদার বাড়ি।
আরও পড়ুন: ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ঘোষবাড়ির পুজো ৩০৩ বছরে পা রাখল
১৮৮০ সালের ১০ অক্টোবর সপ্তমীর সকালে এই ভদ্র বাড়ির দুর্গাপুজো দেখতে এসেছিলেন স্বয়ং রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। তবে জমিদারি প্রথা বিলোপের পর থেকে ম্লান হয়ে যায় পুজোর জৌলুস। ভাঙতে শুরু করে সাতমহলা প্রাসাদ, ধ্বংসপ্রায় বহু মন্দির। তবুও আজও দাঁড়িয়ে আছে দুর্গা মণ্ডপ, রাসমঞ্চ, শ্রীধর জিউ ও গিরি গোবর্ধন মন্দির।
সংস্কারের অভাবে ম্লান হলেও আজও দুর্গাপুজোর সময় ভিড় জমে ভদ্র বাড়িতে। হাজারো মানুষ আসেন অতীত ঐশ্বর্যের সাক্ষী হতে। পরিবারের পক্ষ থেকেও ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে কিছু মন্দিরের পুনর্নির্মাণ কাজ। সময়ের নিয়মে অনেক কিছুই বদলেছে। তবু ভদ্র জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো আজও মানুষকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় বাংলার জমিদারি ঐশ্বর্যের সোনালি অধ্যায়ে।
দেখুন আরও খবর: