ওয়েব ডেস্ক: বিষ্ণুপুরের মৃণ্ময়ী দেবীর পুজোকে (Mrinmoyee Pujo Of Bishnupur) বাংলার প্রচীনতম দুর্গাপুজোগুলির (Ancient Durga Puja Of Bengal) তালিকায় রাখা যায়। মল্ল রাজাদের এই পুজো আজও বহন করে চলেছে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্য। এখানে পুজো শুরু হয় মাতৃপক্ষ শুরুর কয়েকদিন আগেই। মঙ্গলবার ভোরে মুহুর্মুহ তোপের ধ্বনিতে কেঁপে উঠল মল্লগড়ের মাটি। প্রাচীন রীতি মেনেই কৃষ্ণা নবমী তিথিতে গোপাল সায়েরে মহাস্নান পর্বের পর তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে এলেন পটের বড় ঠাকুরানী রূপে মহাকালি। শুরু হয়ে গেল মল্লরাজাদের (Malla Kings) প্রাচীন দুর্গাপুজা। ৯৯৭ খ্রীস্টাব্দে এই পুজো শুরু হয়েছিল ১৯ তম মল্ল রাজা জগত মল্লের হাত ধরে।
আজ রাজা নেই, নেই রাজত্ব। কিন্তু কালের নিয়মে হারিয়ে যায়নি হাজার বছরের প্রাচীন বিষ্ণুপুরের দুর্গাপুজা। কথিত আছে ইতিহাস বলে ১৯তম মল্লরাজা জগৎ মল্ল ৯৯৭ খ্রীস্টাব্দে বিষ্ণুপুরের জঙ্গলে শিকার করতে বেরিয়ে বট বৃক্ষের তলায় বিশ্রাম নেওয়ার সময় এক অলৌকিক দৃশ্য দেখেছিলেন। সেই সময় দেবী মৃন্ময়ী তাঁকে দর্শন দিয়ে মন্দির নির্মাণ এবং গঙ্গামাটির অনন্য প্রতিমা নির্মাণ করে পুজো শুরু করার নির্দেশ দেন। বিষ্ণুপুরে মল্ল রাজ পরিবারের কূলদেবী হিসাবে প্রতিষ্ঠা পান দেবী মৃন্ময়ী। সেই রীতি আজও অক্ষুন্ন থাকলেও পজোর জৌলুস এখন বেশ ফিকে। তবে পুজোর রীতি নিয়মে আজ রয়েছে প্রাচীনত্ব। বলিনারায়ণী পুঁথি মেনে পুজো হয় এখানে।
আরও পড়ুন: ২৮১ বছরের পুজোর বিশেষত্ব, বাড়ির আনাচে কানাচে রয়েছে ইতিহাস
নবমাদি কল্পারম্ভ জীতাষ্টমীর পরের দিন শুরু হয় মল্ল রাজাদের প্রাচীন দুর্গাপুজো। পুজো শুরুর জানান দিতে দেওয়া হয় নয়টি তোপধ্বনি। পরপর তিনটি তিথিতে পটের তিন দেবীর তিনটি রূপের আগমণ হয়। রাজ পরিবারের কথায়, তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে জীতাষ্টমীর পরদিন নিয়ম মেনে রাজ পুরোহিতদের পুজো পাঠের মধ্যে দিয়ে স্থানীয় গোপাল সায়ের থেকে স্নান করিয়ে প্রাচীন মন্দিরে আনা হয় পটের বড় ঠাকুরানী অর্থাৎ মহাকালিকে। এরপর মান চতুর্থীর দিন একই নিয়ম মেনে মন্দিরে আসবেন মেজ ঠাকুরানি অর্থাৎ মহালক্ষ্মী। সপ্তমীর সকালে মন্দিরে আনা হবে ছোট ঠাকুরানী অর্থাৎ মহাসরস্বতীকে।
এরপর মহাঅষ্টমীর সন্ধিক্ষণে মা মৃন্ময়ীর সামনে অষ্টধাতুর বিশালাক্ষীর পুজো করা হয়। সোনার চাপা ফুল দিয়ে অঞ্জলী দেন রাজপরিবারের সদস্যরা। নবমীর নিশুতি রাতে রাজ পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে পুরোহিত মশাই উলটো দিকে মুখ করে খচ্চর বাহিনীর পুজো করেন। পুজোর শেষদিনে বিজয়া যাত্রা করা হয় নীলকণ্ঠ পাখি উড়িয়ে।
প্রাচীন জনপদে মৃন্ময়ীর এই পুজোকে ঘিরে শুধু রাজ পরিবারের নয় আবেগ জড়িয়ে রয়েছে বিষ্ণুপুরের আপামর মানুষেরও। তাই আজ মৃন্ময়ীর পুজো শুরু হতেই মল্ল রাজাদের সুপ্রাচীন মৃন্ময়ীর মন্দিরে ভিড় জমালেন অসংখ্য মানুষ। খুঁজে পেলেন হাজার বছরের বেশি প্রাচীন দুর্গাপুজোর ইতিহাস।
দেখুন আরও খবর: