Friday, October 10, 2025
HomeScrollFourth Pillar | কাটা মাথাও বলবে মমতা ব্যানার্জি জিন্দাবাদ

Fourth Pillar | কাটা মাথাও বলবে মমতা ব্যানার্জি জিন্দাবাদ

খেল খতম পয়সা হজম, এবারে বচ্চে লোগ তালি বাজাও। গত ছ’ মাস ধরে তৃণমূল যে আড়াআড়িভাবে ভেঙে যাচ্ছে তার এক্সক্লুসিভ খবর দিয়ে যাচ্ছিলেন মিডিয়ার পণ্ডিতরা। এক্কেবারে ঘোড়ার মুখের খবর পাওয়ার জন্য যাঁরা রোজ ঘোড়ার মুখের কাছে হত্যে দিয়ে বসে থাকেন। দলের নাকি দুই কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল, একটা কালীঘাট, অন্যটা ক্যামাক স্ট্রিট। দলের নাকি দখল নিতে চাইছিলেন উচ্চাকাঙ্ক্ষী অভিষেক, মমতা নাকি টের পেয়েই সব বানচাল করে দিয়ে নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছেন। ব্যস, ক্যামাক স্ট্রিটে নাকি ডিল ডান, হয় বিজেপিতে না হলে বিজেপির সুবিধে করে দেওয়ার জন্য এক নতুন দল নিয়ে নামছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তর সম্পাদকীয় থেকে কলতলার বৈঠকি ঝগড়া সবখানেই এই আলোচনায় মজেছিলেন মানুষও। আমার মতো পুঁচকে সাংবাদিকও শ’ খানেক এমন প্রশ্নের সম্মুখীন তো হয়েইছি যে কবে ফাইনালি ভাঙছে তৃণমূল? হ্যাঁ, এটাই আপাতত বিজেপির বাংলা দখলের এক এবং একমাত্র উপায়, তৃণমূলকে ভাঙা কেবল নয়, এমন একজনকে ভাঙানো যার ফলে দলের মরাল নষ্ট হয়ে যায়, আর সেই জায়গা থেকেই বোধহয় এক ধরনের প্রচারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এ রাজ্যের বিজেপির মিডিয়া ম্যানেজারদের, তাঁদের সর্বগ্রাসী প্রচারের ফলে খানিকটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল এমনকী তৃণমূলের র‍্যাঙ্ক অ্যান্ড ফাইলের মধ্যে। আজ ইন্ডোর স্টেডিয়ামের বৈঠক সেই গুজবের বা প্রচারের একটা ঠিকঠাক জবাব নিয়ে হাজির হয়েছে। এবারে আসুন আদত বৈঠকের কথায়, কেন এই বৈঠক? কোন উদ্দেশ্যে এই বৈঠক? জানুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন মোচ্ছব এবং শেষে মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ, আগামী ২০২৬-এ এই সময়ে সম্ভবত ক্যান্ডিডেট লিস্ট বের হবে, কাজেই সময় পাক্কা এক বছর। তৃণমূল তো এক সংগঠিত ক্যাডার বেসড পার্টি নয়, এখানে ধ্রুবপদ বেঁধে দেন নেত্রী নিজে, আমরা মাঠে ঘাটে নাটে সেই সুর শুনতে পাই। আজ ছিল সেই সুর বেঁধে দেওয়ার দিন। তার প্রথম সুরটাই ছিল দলের শীর্ষ নেতৃত্বে কোনওরকম দ্বন্দ্ব নেই, কেউ নেত্রীর ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করছে না। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলের স্তম্ভ হিসেবেই যেমন ছিলেন, যতটা ক্ষমতা নিয়ে ছিলেন ততটা ক্ষমতা নিয়েই আছেন।

হ্যাঁ, এটাই ছিল প্রথম সুর, আপনি ওই ভোটার লিস্ট নিয়ে যত খুশি পারুন লিখুন, সেসব অনেক অনেক পরের কথা। ২০২৫-এর ইন্ডোরে তৃণমূল সম্মেলনের প্রথম সুর হল দল ঐক্যবদ্ধ। অভিষেক বললেন, আমি নাকি বিজেপিতে যাব, আমি নাকি অন্য দল তৈরি করব? আরে বাবা আমার কাটা মাথাও বলবে মমতা ব্যানার্জি জিন্দাবাদ। কেউ যদি এমন তর্ক দেন যে অমন তো রাজনীতির লোকজনেরা বলে থাকেন তারপর সময় সুযোগ মতো সেই ভাঙন সামনে আসে। তাহলে আসুন আরও ক’টা দিক আলোচনা করা যাক। ইন্ডোর স্টেডিয়ামের আজকের সম্মেলনে দ্বিতীয় একজন নেতা বলুন যিনি বললেন আমাদের দল ২১৫-র একটা হলেও বেশি আসন পাবে। বাকি যাঁরা যাঁরা বলেছেন তাঁদের কথা ছিল মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে আমরা লড়ব জিতব, সে তৃণমূলের বক্সিদা হোক, ইউসুফ পাঠান বা কীর্তি আজাদ হোক বা শতাব্দী, প্রত্যেকের ভাষা খেয়াল করুন, দল আমাদের, আমরা ঠিক করব আগামী দিনে দল কোন পথে যাবে, বিজেপিকে আমরা শিক্ষা দেব, দলের নেতাদের কী করা উচিত, কী করা উচিত নয়। এসব কথা দুজনের বক্তৃতায় ছিল, এক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দুই, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার মেসেজ, দলে এক নম্বর কে, আর দলে দু’ নম্বরে কে আছেন। অভিষেকের নাম এসেছে সিবিআই চার্জশিটে, এক ফোন রেকর্ডিংয়ের থেকেই ওই নাম এসেছে, মমতা ব্যানার্জি কম বেশি মিনিট তিন চার খরচ করলেন ওটা বোঝাতে যে ষড়যন্ত্র করে গলা বদলে আর্টিফিসিয়াল ইন্টলিজেন্স ব্যবহার করে চক্রান্ত করছে সিবিআই যারা এখনও আরজি কর মামলার তদন্তই শেষ করে উঠতে পারেনি। হ্যাঁ, দলের দুই নম্বরের অস্বস্তি দূর করে কর্মীদের কাছে যে মেসেজ দিলেন আগামিকাল থেকে সেটাই সেই কর্মীরা পাড়ায় পাড়ায় বলবেন। এবং কিছু এমন কথা বলা বা ছবি না রাখা ইত্যাদির ভেতর দিয়ে একটা পরিষ্কার স্ট্রাটেজি বেরিয়ে এল যে এবারেও মমতাই এক কাঁধে করে পার করতে চান দলকে, এক্কেবারে উত্তরাধিকারী ঘোষণা করে দেওয়ার জায়গাতে গেলেন না, কিন্তু গোটা সম্মেলনে দল আগামী দিনে কোন পথে চলবে, কোন পথে চলতে হবে নেতা কর্মীদের সেটা খুব পরিষ্কার।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | আবার বিশ্ব বাজারে ধস নামাবে চীন?

এবারে আসুন দ্বিতীয় বিষয়ে, মমতা খুব পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন নির্বাচন সামলানোর জন্য যে এজেন্সি কাজ করছে তারা কাজ করবে, এরাই আগে আই প্যাক ছিল, এখন পিকে নেই, কিন্তু একটা অর্গানাইজেশন যাঁরা সেই পিকের সময় থেকে কাজ করছেন, এঁরাই প্রতিটা বিধানসভা এলাকার ভোট স্ক্যান করেন, কোন বুথে কোথায় পিছচ্ছে, কোন ইস্যু কাজ করছে, প্রচারের দিকগুলো কী কী হবে, প্রচার কী ভাবে হবে সবটাই যাঁরা আগে দেখতেন, তাঁরাই দেখবেন। মমতা নিজেই কর্মীদের জানিয়ে দিলেন যে ওদেরকে সাহায্য করুন, কাজ করতে দিন, এই কাজটা জরুরি। ক’দিন আগেই এমন এক প্রচার চলছিল যে অভিষেকের আনা এইসব হাইটেক ব্যাপার শেষ, এখন আবার মমতা ব্যানার্জি পুরনো স্টাইলেই নির্বাচন করাবেন, এখন পরিষ্কার যে এই ভোটকুশলীর দল কাজ করবে, আগে যেভাবে করেছিল সেভাবেই কাজ করবে এবং যদি কারও না জানা থাকে তাহলে জেনে নিন যে এই কাজের সিংহভাগ কিন্তু ওই ক্যামাক স্ট্রিট থেকেই হয়, হয়েছে, হবে। কাজেই ক্যামাক স্ট্রিটের রাস্তা বন্ধ, এবারে সবটাই কালীঘাট, এরকম এক প্রচার কিন্তু জমি পেল না। মমতা নিজেই জানিয়ে দিলেন এই ভোটকুশলীদের দল কাজ করবে, নির্দেশ দিলেন তাঁদের সাহায্য করতে হবে। মাথায় রাখুন ক’দিন আগেই মদন মিত্র বড় অভিযোগ করেছিলেন, পরে ক্ষমাও চেয়েছেন, সৌগত রায় ইত্যাদি সিনিয়ররা এই ব্যবস্থাতে খুশি নন, দলের মধ্যে কিছু কথা আগেও উঠেছে, কিন্তু মূলত অভিষেকের উদ্যোগেই এই ব্যবস্থা চালু হয়েছিল, তারা এবারেও কাজ করবে। এবারে আসুন তিন নম্বর বিষয়ে যা কেবল ছুঁয়ে গেছেন মমতা, জেলায় জেলায় মহকুমায় ওই অবজার্ভার থাকবে, নির্বাচনের কাজের রিপোর্ট দিতে হবে, কলকাতার কেন্দ্রীয় দফতরে রোজ চারজন করে বড় নেতারা বসা শুরু করবেন। বলা হল এই ব্যবস্থা ভোটার লিস্টের ভুয়ো ভোটারদের খুঁজে বের করার জন্য, কিন্তু তার সঙ্গেই শুরু হয়ে গেল এক্কেবারে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের কাজ।

হ্যাঁ, দিল্লি, মহারাষ্ট্রে ভুয়ো ভোটারের কথা উঠেছে, কিছু প্রশ্ন আছে। এ বাংলাতেও তেমন চেষ্টা করা হচ্ছে তার জন্য দুটো এজেন্সি কাজ করছে বলেও জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কিন্তু সেই দুটো এজেন্সি আজ নয় বছর ছয় সাত ধরেই অ্যাক্টিভ, এদের কাজ শুধু ভুয়ো ভোটার ঢুকিয়ে দেওয়া এমনও নয়, এই দুটো এজেন্সি হাত ধরে ফান্ডিং আসছে কি না, সেটাও দেখা দরকার, এই দুটো এজেন্সি এই বাংলার কিছু তথাকথিত সুবোধ ও সুশীলদের টাকা জোগাচ্ছেন কি না সেটাও দেখা দরকার। এই দুটো এজেন্সির সঙ্গে এই খাস কলকাতার কিছু অবাঙালি ব্যবসায়ীর লেনদেন আছে কি না সেটাও দেখা দরকার। সে যাই হোক আজকের ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূল সম্মেলনের মোদ্দা উদ্দেশ্য আর লক্ষ্য হল ২০২৬-এর রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন। মূল মেসেজ হল দলে কোনও ফাটল নেই, দল ঐক্যবদ্ধ। ২) দলের নির্বাচনের কাজ দেখার জন্য যে ভোটকুশলীরা কাজ করছে সেটা চলবে। ৩) এক সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যের চারজন নেতা কেন্দ্রীয় দফতরে বসা শুরু করবে, জেলা বা মহকুমা থেকে একটা টিম নির্বাচনের প্রস্তুতির অগ্রগতির কথা জানাতে থাকবে। এর মধ্যে ফাঁকে এধারে ওধারে কী কথা হল, কারা কার পাশে বসলেন, কে কখন কার সঙ্গে ঢুকলেন সেসব চুলচেরা বৃত্তান্ত কলতলার বৈঠকে পেয়ে যাবেন, গণশক্তিতে পাবেন মুখ্যমন্ত্রী কোথায় কোন কবিতার কোন শব্দ ভুল বলেছেন। তৃণমূল কর্মীরা যে মেসেজ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন তা হল দিদিমণি, অভিষেক ব্যানার্জি বলে দিয়েছেন ২১৫টার একটা হলেও বেশি আসন পেতেই হবে, হ্যাঁ ওটাই মোদ্দা কথা।

Read More

Latest News