কলকাতা: দুর্গাপুজোর আগেই কলকাতাবাসী পাচ্ছেন নতুন তিন মেট্রো লাইন (Metro Railway Projects)। এই নতুন পরিষেবা শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক বড় পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিন রুটের উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাবে কলকাতার পরিবহণ মানচিত্রও। শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতির পথে আরও একধাপ। ইতিমধ্যেই প্রতিটি রুটের ভাড়া নির্ধারিত হয়েছে এবং চালু হওয়ার সম্ভাব্য সময়ও জানানো হয়েছে মেট্রো সূত্রে। জানা গিয়েছে, শুক্রবার থেকেই এক মেট্রোয় হাওড়া ময়দান থেকে সল্টলেক সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারবেন যাত্রীরা। মেট্রো সূত্রে খবর, হাওড়া ময়দান থেকে সেক্টর ফাইভ যেতে যাত্রীদের সময় লাগবে ৩২ মিনিট। আর হাওড়া থেকে ৩০ মিনিট মতো। বাসে যেতে ঘণ্টা দেড়েক লাগত তাই এবার পাতালপথে লাগবে আধ ঘণ্টা। ভাড়ার তালিকা আজ বুধবারের মধ্যে প্রস্তুত হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে হাওড়া থেকে সেক্টর ফাইভ ভাড়া ২৫ টাকা হওয়ার সম্ভাবনা।
শুক্রবার উদ্বোধন হচ্ছে কলকাতা মেট্রোর তিনটি সম্প্রসারিত লাইন। নোয়াপাড়ার সঙ্গে যুক্ত হবে দমদম বিমানবন্দর (জয় হিন্দ)। শিয়ালদহের সঙ্গে যুক্ত হবে এসপ্ল্যানেড। রুবির (হেমন্ত মুখোপাধ্যায়) সঙ্গে জুড়বে বেলেঘাটা (মেট্রোপলিস)। মোট ১৪ কিলোমিটারের পথ। নোয়াপাড়া থেকে দমদম বিমানবন্দর (জয় হিন্দ স্টেশন) প্রায় ৬.২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রুটে দুটি ট্রেন চলবে এবং প্রতিটির মধ্যে ১৫ মিনিটের ব্যবধান থাকবে। হাওড়া ময়দান থেকে সেক্টর ফাইভ (ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো পূর্ণাঙ্গভাবে চালু) এই রুট চালু হয়ে গেলে মাত্র ১২ মিনিটে শিয়ালদহ থেকে হাওড়া পৌঁছে যাওয়া সম্ভব হবে। রুবি থেকে বেলেঘাটা মেট্রো: প্রায় ৪.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই অংশটি চালু হলে শহরের পূর্ব অংশের যাত্রীদের বড় সুবিধা হবে।
এদিকে শিয়ালদা-এসপ্ল্যানেড মেট্রোর সঙ্গে জুড়ে গেলে প্রথমবারের মতো পুরো যাত্রাপথে ছুটবে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো। এই আবহে হাওড়া ময়দান থেকে একেবারে সল্টলেক সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত যাওয়া যাবে। এই আবহে এই রুটের মেট্রোর গুরুত্ব আরও বাড়বে। হাওড়া বা শিয়ালদা পর্যন্ত ট্রেনে আসা ব্যক্তিরা কম সময় মেট্রো ধরে নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যেতে পারবেন। এদিকে নোয়াপাড়া থেকে ইয়েলো লাইনের মেট্রো দমদম ক্যানটনমেন্ট হয়ে এয়ারপোর্টে পৌঁছবে। এর মধ্যে সবচেয়ে কম দৈর্ঘ্যের পথ শিয়ালদহ থেকে এসপ্ল্যানেড। মাত্র ২.৬ কিলোমিটার। ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর এই অংশটুকু চালু হয়ে গেলে কলকাতার পরিবহণ ব্যবস্থারই ভোল বদলে যেতে পারে। অভ্যাস বদলে দিতে পারে নিত্যযাত্রীদের। বর্তমানে দিনের ব্যস্ত সময়ে সেক্টর ফাইভ-শিয়ালদহ এবং হাওড়া ময়দান-এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত ১২ মিনিট অন্তর এবং অন্য সময়ে ১৫ মিনিট অন্তর মেট্রো পরিষেবা পাওয়া যায়। সূত্রের খবর, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো পুরোদমে চালু হয়ে গেলে যাত্রীদের ভিড়ের কথা মাথায় রেখে এই ব্যবধান কমিয়ে আনা হবে। তখন আট মিনিট অন্তর পরিষেবা পাওয়া যাবে।
কলকাতার যানজট এড়িয়ে দ্রুত এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছে যেতে শহরবাসীর অন্যতম পছন্দের পরিষেবা মেট্রো। তবে এত দিন তাতে কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে, শহরের যানজট এড়িয়ে মাত্র ১২ মিনিটে শিয়ালদহ থেকে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে যেতে পারবেন যাত্রীরা। এই রুটে প্রথম ২ কিমি-র ভাড়া ৫ টাকা। এসপ্ল্যানেড থেকে হাওড়া ভাড়া ১০ টাকা। বিমানবন্দর থেকে দমদম ক্যান্টনমেন্ট যেতে ১০ টাকা লাগবে। আর বিমানবন্দর থেকে নোয়াপাড়া পর্যন্ত ভাড়া ধার্য করা হয়েছে ২০ টাকা। আবার বিমানবন্দর থেকে দক্ষিণেশ্বর, বরানগর, দমদম এবং বেলগাছিয়া যেতে খরচ পড়বে ৩০ টাকা। বিমানবন্দর থেকে শ্যামবাজার, শোভাবাজার সুতানটি, গিরিশ পার্ক, মহাত্মা গান্ধী পার্ক এবং সেন্ট্রাল পর্যন্ত ৩৫ টাকা লাগবে।
মেট্রোর আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্ল্যানেড ও শিয়ালদহ থেকে সল্টলেক সেক্টর ফাইভ রুটে এতদিন মেট্রো ছুটেছে। কিন্তু এই দুই অংশ জুড়ে গেলে এক ধাক্কায় যাত্রীসংখ্যা অনেকটাই বেড়ে যাবে। ফলে সাধারণ মানুষ থেকে অফিসযাত্রী প্রত্যেকরই খুব সুবিধা হবে। এসপ্ল্যানেড চত্বরের অফিসপাড়ায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে এত দিন শুধু হাওড়া স্টেশন থেকেই মেট্রোর সুবিধা পাওয়া যেত। এখন শিয়ালদহ স্টেশন থেকেও সেই সুবিধা মিলবে। হাওড়া থেকে সরাসরি মেট্রোয় চেপে পৌঁছে যাওয়া যাবে সল্টলেক সেক্টর ফাইভে। এত দিন এই সুবিধা শুধু শিয়ালদহ স্টেশন থেকে মিলত। বর্তমানে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোয় প্রতি দিন গড়ে ১ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করেন। পরিষেবা পুরোদমে চালু হয়ে গেলে দৈনিক যাত্রীসংখ্যা ৭ লক্ষ পেরিয়ে যেতে পারে বলে অনুমান করছেন কলকাতা মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজার পি উদয়কুমার রেড্ডি।







