কলকাতা: কলকাতা পুরসভায় মাসিক অধিবেশনে পেশ করা প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে তর্ক বিতর্কে সরগরম অধিবেশন কক্ষ। বুধবার কলকাতা পুরসভার মাসিক অধিবেশন বসেছিল। সেখানেই বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে পরস্পর তর্কযুদ্ধ জড়ালেন তৃণমূল ও বিজেপি কাউন্সিলরেরা। শাসক বিরোধীর বাক বিতণ্ডায় কার্যত উত্তাল হয়ে ওঠে অধিবেশন কক্ষ। অধিবেশনের উত্তাপ কমাতে চেয়ারপার্সন মালা রায়কে কাউন্সিলরদের দিতে হল জোর ধমক।
অধিবেশনের একেবারে শেষ দিকে প্রস্তাবনায় ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে দেশ জুড়েই বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃতদের অসম্মান এবং অবমাননা করা হচ্ছে। রাজা রামমোহন রায়কে মধ্যপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী ব্রিটিশদের সহচর বলেছেন তো অসমে রবি ঠাকুরের গান গাইলে এফআইআর করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আবার তারাই বাংলায় বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙছে।” এর জন্য তিনি কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন।
আরও পড়ুন: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জামিন পেলেন কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়
এই বিষয়টি নিয়ে সমর্থন জানান বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ। তিনি বলেন, “আমি অরূপদার প্রস্তাবকে সমর্থন করছি। যতদূর জানি যে ব্যক্তি এই মন্তব্য করেছিলেন, তিনিও এই মন্তব্যের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন। কিন্ত রেড রোডের নাম বদলে দিয়ে কার্নিভাল রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন তৃণমূল কাউন্সিলর তপন দাশগুপ্ত। কিন্তু রেড রোডের নাম তো অনেক দিনই বদলে গিয়েছে, তার নাম ইন্দিরা গান্ধী সরণী। আজ সেই ইন্দিরা গান্ধীর জন্মদিনে তাঁর নাম বদলে একটি বিদেশি শব্দে রাস্তার নামকরণ করতে বলেছেন।” পাশাপাশি, সেইসময় সজল ঘোষ আরও বলেন, এ রাজ্যের এবং এদেশের বিভিন্ন স্বাধীনতা সংগ্রামী ও মনীষীদের বিরুদ্ধে বর্তমান শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিভিন্ন নেতা নেত্রীদের আচরণ ও নানান মন্তব্য কুরুচিকর। এরপরই শুরু হয় শাসক পক্ষ ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ।
কটাক্ষের সুরে সজল আরও বলেন, রাস্তার নাম বদলে মমতা সরণী করার প্রস্তাব দিতে পারতেন। বিজেপি কাউন্সিলরের এমন কথা শুনেই ক্ষেপে যান তৃণমূল কাউন্সিলরেরা। এরপর এই প্রস্তাবের সমর্থনে বলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম এবং মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার। তাঁরা অরূপকে সমর্থন জানিয়ে বিজেপির উদ্দেশে বলেন, “যারা স্বাধীনতা আন্দোলনের পিছনে ছুরি মেরে বিশ্বাসঘাতকতা করে ব্রিটিশদের মুচলেকা দিয়েছিল, তাদের মুখ থেকে রাষ্ট্রপ্রেম শিখব না। তাঁরা বাংলার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শকে নষ্ট করে দিতে চাইছে। তা বাংলার মানুষ কখনও হতে দেবে না।”
এরপরই মালা রায় বিরোধী দলনেত্রী তথা বিজেপির কাউন্সিলর মিনা দেবী পুরোহিতের উদ্দেশ্যে তীর্যক মন্তব্য করে বলেন, বাংলার সংস্কৃতি নিয়ে আধ ঘন্টার বক্তব্য রাখতে মিনা দেবী সক্ষম? বিজেপির পক্ষ থেকে এর তীব্র প্রতিবাদ করে বলা হয়, মিনাদেবী পুরোহিত হিন্দি ভাষী বলেই তাকে বাংলার সংস্কৃতির বিষয় নিয়ে কথা বলার বিষয়ে কটু মন্তব্য করা হচ্ছে । সজল ঘোষের পাল্টা অভিযোগ, রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম খোদ বিহার থেকে তার পরিবার এ রাজ্যে এসে বসবাস শুরু করেছিল। তাই তিনিও বাংলার সংস্কৃতি নিয়ে বড় বড় কথা বললেও, বাংলার সংস্কৃতি ও অস্মিতা নিয়ে আধ ঘন্টার বক্তব্য রাখতে পারবেন না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দেখুন খবর:










