Wednesday, October 29, 2025
HomeScrollAajke | শুভেন্দুর সংখ্যালঘু প্রেম, বিষ মাখানো হাত, দিচ্ছে সওগাত?
Aajke

Aajke | শুভেন্দুর সংখ্যালঘু প্রেম, বিষ মাখানো হাত, দিচ্ছে সওগাত?

কী এমন বললেন শুভেন্দু, যার জন্য এত কথা বলতে হচ্ছে?

সুকুমার রায় দিয়েই শুরু করা যাক। ‘আর যেখানে যাও না রে ভাই সপ্তসাগর পার/ কাতুকুতু বুড়োর কাছে যেও না খবরদার। বিদঘুটে তার গল্পগুলো না জানি কোন দেশি/শুনলে পরে হাসির চেয়ে কান্না আসে বেশি।’ এবার কাতুকুতু বুড়োর জায়গায় শুভেন্দু অধিকারীকে বসিয়ে দিলেই আমার গল্প শুরু হয়ে যাবে। এতদিন জানতাম, তিনি কাঁথির খোকাবাবু। রাজনীতির আঙিনায় খোকাবাবুর মতোই মন্তব্য করে বসেন। লাফালাফি, দাপাদাপি এই সবই সার। কিন্তু, সবাই উন্নতি করে শুভেন্দু অধিকারীও করছেন। অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে, তাতে করে অধিকারীবাবুকে আর কিন্তু খোকাবাবু বলা যাচ্ছে না। কাতুকুতু বুড়োর সঙ্গেই তার মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে বেশি। মনে রাখবেন, সুকুমার রায়ের এই চরিত্রটি কিন্তু মানুষকে জোর করে কাতুকুতু দিয়ে হাসায়। শুভেন্দু একটু এগিয়ে আছেন। তার কাতুকুতু দেওয়া রাজনৈতিক মন্তব্যগুলো শুনলে মানুষ এমনিই হাসতে শুরু করছে, জোরজার করার দরকারই পড়ছে না।

কিন্তু কী এমন বললেন শুভেন্দু, যার জন্য এত কথা বলতে হচ্ছে? সেটা বুঝতে গেলে একটু পিছনের দিকে তাকাতে হবে। আমাদের এখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে অধিকারীবাবু যে কী চোখে দেখেন, সেতো মোটামুটি সকলেরই জানা। পহেলগামে জঙ্গি হামলার পরপর শুভেন্দু কী মন্তব্য করেছিলেন মনে আছে? বলেছিলেন, কাশ্মীরে যাবেন না, ওখানে মুসলমানরা থাকে। এই মন্তব্যের বিরোধিতা করে পাল্টা জবাব দিয়েছিলেন আর কেউ নয়, তাঁর নিজেরই দলের রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য।

এ তো গেল একটা ঘটনা। এছাড়াও আমাদের বিরোধী দলনেতা সংখ্যালঘুদের রোহিঙ্গা বলে ডাকতেই অভ্যস্ত। জাস্টিফাইড। বিজেপির নেতার নেতা নরেন্দ্র মোদিও তো পোশাক দিয়ে, খাবার দিয়ে মানুষ কেমন তার বিচার করেন। লুঙ্গি পরলেই তো সন্ত্রাসবাদী, মুড়ি খেলেই তো বাংলাদেশি, তাই না অধিকারীবাবু? এই তো কয়েকদিন আগে, যখন আপনি কালীপুজোর উদ্বোধন করতে গিয়ে মানুষের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন, তখনও তাদের সরাসরি অনুপ্রবেশকারী বলতে আপনার একবারও মুখে আটকায়নি। কী বলেছিল তাঁরা? পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর নির্যাতন বন্ধ করতে, একশো দিনের কাজের সুরাহা করতে। প্রতিবাদ করলেই অনুপ্রবেশকারী, তাই না?

আরও পড়ুন: Aajke | ডাক পেল না বিহার ভোটে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই পাত্তা দেয় না বঙ্গ-বিজেপিকে, এরা করবে ক্ষমতা দখল?

এহেন শুভেন্দু অধিকারী, যিনি হিন্দুহৃদয়সম্রাট, যিনি একদা বলেছিলেন, বাংলার মসনদ দখল করতে সংখ্যালঘু ভোটের কোনও দরকারই নেই। হিসেব কষে বলে দিয়েছিলেন কত শতাংশ হিন্দু ভোটার বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য তৈরি আছে। জনসভায় দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, মাত্র ৫ থেকে ৬ শতাংশ হিন্দু ভোট বাড়লেই বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে সরকার তৈরি করবে। কিন্তু এখন, রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা SIR ঘোযণা হয়ে গিয়েছে যখন, তার কদিন আগেই অধিকারীবাবু কী বললেন? সোজা কথায় ঢোঁক গিললেন। ঢোঁক গিলে বললেন, সংখ্যালঘু ভোট চাই না বলিনি। বলেছি, সংখ্যালঘু ভোট আমরা পাই না। দেখুন, গোটা গল্পটা।

মহামতি লেনিন বলেছিলেন, ‘এক কদম আগে তো দু’কদম পিছে’। হ্যাঁ এটাই লেনিনের বিখ্যাত মোডাস অপারেন্ডি, রণকৌশল। কিন্তু শুভেন্দুবাবুর রণকৌশল কী? ‘এক কদম আগে, তো একশো কদম পিছে’। সোজা কথায়, পারলে রণক্ষেত্র থেকে পলায়ন বা বিরোধীর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়া। ঠিক যেটা করছেন এখন। দেশের সংখ্যালঘুদের হাজারও অপমান করার পর, এই ভোটের বাজারে ঘরোয়া কোন্দলে ছিন্নভিন্ন বঙ্গ বিজেপিকে দিয়ে, SIR আর সিএএ-র জুজু দেখিয়ে ২৬-এর বিধানসভায় জেতা যাবে না। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ সরাসরিই বঙ্গ বিজেপিকে বলে দিয়েছে, ‘ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই, ছোট এ তরী’। উত্তরপ্রদেশ যান, রাজস্থান যান, পশ্চিমবঙ্গে আপনাদের জায়গা হবে না। মতুয়াদের নিয়ে যেটুকু আশা ছিল, সেটা নিয়ে তো এই মুহুর্তে আরও গোলমাল। গেরুয়া শিবিরের মতুয়া নেতারাই বঙ্গ বিজেপিকে দেখে নেবেন বলে তৈরি হয়েছেন। তাহলে শেষ আশা কারা? আর কারা? ঐ সংখ্যালঘুরা।

শুভেন্দু বুঝতে পেরেছেন, এ রাজ্যে সংখ্যালঘুরা বিজেপিকে সন্দেহ করেন। আর তাই জোড়াফুল ফুটিয়ে তোলেন তারা। ভোট দেন তৃণমূলকেই। এই সংখ্যালঘু ভোটকেই এবার ভাগ করতে চাইছেন শুভেন্দু। এটা সেটা বলে চেষ্টা করছেন, সংখ্যালঘু ভোটারদের মন ভোলাতে। কেন না, বাংলার মধ্যবিত্ত, শিক্ষিত, উদারপন্থী ভোটারদের হাতে রাখার জন্য শক্তি চট্টোপাধ্যায় পড়া শমীক ভট্টাচার্যকে তো বিজেপি ময়দানে নামিয়েই দিয়েছে। এবার সংখ্যালঘুদের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি মধুর হাসি হাসতে শুরু করেছেন শুভেন্দু, আর পাশ থেকে গুনগুন করে সুকান্ত বলছেন, মোদিজি তো বলেইছেন, ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’। কিন্তু এসব করে কী ভোটের পালে হাওয়া লাগবে? আসুন দেখে নিই কী বলছেন মানুষ?

শুভেন্দু-শমীক-সুকান্তরা খুব ভাল করেই জানেন SIR নিয়ে ভারতীয় মুসলমানরা কিন্তু চিন্তিত। আর তাই, পরিষ্কার দেওয়া নেওয়ার হিসেবে চলে আসতে চাইছেন এইবার। মধুর হাসির আড়ালে বলছেন, ‘আমাকে তোমরা ভোট দাও, আমরা তোমাদের নিরাপত্তা দেব’। সংখ্যালঘুরা কি এই হাসিকে বিশ্বাস করবে? না কী তাঁরা জানেন, ‘বিষ মাখানো হাত, দিচ্ছে সওগাত’। কিছুদিনের মধ্যেই এর উত্তর পাওয়া যাবে।

Read More

Latest News