Wednesday, September 10, 2025
বাঙালি কাউন্টডাউন
HomeScrollAajke | শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছে নিয়ে চাকরির পরীক্ষা তো দিলেন, তারপর?
Aajke

Aajke | শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছে নিয়ে চাকরির পরীক্ষা তো দিলেন, তারপর?

নতুন করে শুরু করা, এই কথাটা আমাদের মাস্টারমশাইরাই শিখিয়েছেন

পরশু স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা তখনও শেষ হয়নি, পরীক্ষা হলের বাইরেই অপেক্ষা করছিলেন এক ভদ্রলোক, তাঁর কন্যা এবারে প্রথমবার পরীক্ষায়, তিনিই বলছিলেন, “যে লাগামছাড়া দুর্নীতি হয়েছে তার পরে আমার অন্তত ব্যক্তিগতভাবে কোনও আশা নেই। তার উপরে তো আছেই আবার নতুন করে মামলাবাজি, আবার নতুন মামলা করে আটকে দেওয়া হবে পরীক্ষার রেজাল্ট, মানুষ বিরক্ত, আমরাও। মেয়েকে বলেছি পরীক্ষা দাও, কিন্তু এটাও বুঝিয়েছি, যেন খুব আশা করে বসে না থাকে।” গত চার বছর ধরে ক্রমাগত এসএসসি–র নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, আর সেই জন্যই এ বারের পরীক্ষায় যাতে কোনওরকম ফাঁকফোঁকর না থাকে, তা নিশ্চিত করতে আঁটোসাঁটো নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। পরীক্ষার্থী ও বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্রের ইনভিজিলেটদের অভিজ্ঞতা বলছে, হালে কোনও পরীক্ষাতেই এ রকম নিরাপত্তা চোখে পড়েনি। বেলা দেড়টা নাগাদ পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে পুরোনো ও নতুন প্রার্থীদের অনেকেই বলেছেন পরীক্ষা ভালো হয়েছে। প্রশ্নও তুলনামূলক ‘সহজ’ ছিল। কিন্তু বেশিরভাগ চাকরিপ্রার্থীর মনেই ঘুরেফিরে দু’টো দুশ্চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। এক, সুপ্রিম কোর্ট বারবার সতর্ক করার পরেও এত নিরাপত্তার ঘেরাটোপ টপকে ২০১৬–এর ‘টেন্টেড’ বা ‘দাগি’ প্রার্থীরা কেউ বসে পড়েননি তো, যার জন্য আবার আদালতে মামলা দায়ের হতে পারে? এবং দুই, ২০১৬–এর মতো এ বারও সবকিছু মিটে যাওয়ার পরে সেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠবে না তো এবং আবারও গোটা প্যানেল বাতিল হয়ে যাবে না তো? হ্যাঁ, মনে ভয় আবার মামলার, কোনও না কোনভাবে একটা মামলা হলেই আবার সব আটকে যাবে না তো? আবার এই লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থীর পরীক্ষার পরে, রেজাল্ট বার হওয়ার পরে, এমনকী চাকরি পাওয়ার পরেও সেই আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াবে। সেটাই বিষয় আজকে, শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছে নিয়ে চাকরির পরীক্ষা তো দিলেন। তারপর?

সারাদিন ধরে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা, রাজ্যের দু’ তিনজন আইনজীবী অন্য কোনও কাজই করেননি, তাঁরা ব্যস্ত ছিলেন, প্রতি মুহূর্তে তাঁদের কাছে সব ইনপুট এসেছে, কিছু এসেছে পুলিশের সূত্রে, কিছু এসেছে তাঁদের নিজেদের সূত্রে। হ্যাঁ, প্রায় ভাগাড়ের শকুনের মতোই কিছু লোকজন বসেছিলেন আর একটা ভুল ধরার জন্য, আর একটা ভুল মানে আর একটা মামলা আর একটা মামলা মানে আবার সব আটকে যাওয়া। যেমনটা হাজার দেড়েক দাগির জন্য আটকে গিয়েছে চলে গেছে ২৬ হাজার মানুষের চাকরি।

আরও পড়ুন: Aajke | আর কোনও শুভেন্দু নয়, বিজেপির সিদ্ধান্ত

দোষ নেই রাজ্য সরকারের? দুর্নীতি ছিল না মন্ত্রীদের? ছিল তো, রাজ্য সরকারের দোষও আছে। কিন্তু বিরোধিতায় নেমে সবকটার চাকরি খেয়ে নেব, সবক’টাকে জেলে পুরবো, ঢাকিসুদ্ধ বিসর্জন দেব কথাগুলোই বলে দেয় এখানে লড়াইটা দুর্নীতির বিরুদ্ধে নয়, গদি দখলের, যে গদি দখল করতে চায় বিজেপি, যে গদি ফিরে পেতে চায় বামেরা। সেই গদির লড়াইয়ের মাঝখানে পড়ে হাজার হাজার ছেলে মেয়ে এক নরক যন্ত্রণা ভোগ করলো। দুর্নীতি হয়েছে? হয়েছেই তো। তো তার তদন্তও চলছে, এত বছর ধরে তদন্তে ঠিক কী পাওয়া গেছে? খবরের কাগজে কিছু সূত্রে পাওয়া চমকদার খবর, এর এই সম্পত্তি, ও কোটি টাকা খেয়েছে, তার ৪০ কোটির ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স। সিবিআই, ইডি এখনও একজনকেও শাস্তি দিতে পেরেছে? পারবে? জানা নেই, কিন্তু ওই ২৬ হাজার ছেলেমেয়ের, যুবক যুবতীর জীবন নরক করে ছেড়েছে। আজ আবার পরীক্ষার সময়ে সেই শকুনেরাই আকাশে উড়ছিল, যদি মরা পচা ধসা একটা লাশ পাওয়া যায়, আর যদি ছড়িয়ে দেওয়া যায় আবার সেই আশঙ্কা, যা মনের ভেতরে তো আছেই, যদি তাকে আবার বের করে আনা যায়। ইন ফ্যাক্ট বিরোধী দলনেতা তো বলেই দিয়েছেন, আবার মামলা হবে। শাসক, বিরোধী দলের নেতারা আকচা আকচি করবে, একে অন্যকে চোর চোট্টা চিটিংবাজ বলবে, এতে আর নতুন কী আছে বলুন? এ তো জন্ম ইস্তক আমরা দেখছি। কিন্তু সেই চক্করে পড়ে রাজ্যের তিন লক্ষ যুবক যুবতীর যদি ভরসাই উঠে যায় গোটা ব্যবস্থাটার উপরে, যদি তারা বুঝেই ফেলে যে তাঁরা হলেন নয়া জামানার ক্যানন ফডার, তাঁদের কাঁধে বন্দুক রেখে, তাঁদের ভবিষ্যতের কাঁথায় আগুন জ্বালিয়ে রুটি সেঁকে নিতে চান এই নেতারা, এই ব্যবস্থা, তাহলে কেউ বাদ পড়বেন না, সেই নৈরাজ্য যে কত ভয়ঙ্কর তা আর নতুন করে বলার কিছুই নেই। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, হ্যাঁ হয়েছিল দুর্নীতি, তারপরে সমস্ত দুর্নীতিকে পাশে রেখে আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা আর দেখরেখের মধ্যেই রাজ্য সরকার শেষ করতে পেরেছে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা, কিন্তু আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে, আবার এক আইনি জটিলতায় রাজ্যের এই হাজার হাজার যুবকদের স্বপ্ন যে অন্ধকারে ডুবে না যায় সেই চিন্তাই কুরে খাচ্ছে তাদের। আপনাদের কী মতামত?

স্টার্ট অ্যাফ্রেস, নতুন করে শুরু করা, এই কথাটা আমাদের মাস্টারমশাইরাই শিখিয়েছেন, পুরনো অনেক কিছুকে ভুলে, পুরনো হেরে যাওয়া, পিছিয়ে পড়াকে ভুলে মানুষকে নতুন করে এগোতে হয়। এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই যে সেদিন দুর্নীতি হয়েছিল, কিন্তু তাদের সিংহভাগ জেলে, তদন্ত চলছে। তদন্তের ফলাফল আসলে সেটাও দেখে নেব আমরা। কিন্তু তার আগে পুরনো বোঝা ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াটাই কি বুদ্ধিমানের কাজ নয়? আসুন আমরা মন থেকে কামনা করি দোষীরা শাস্তি পাক, আর শিক্ষক হতে চাওয়া এই হাজার হাজার যুবক যুবতী পান স্বস্তি।

Read More

Latest News