যেমনটা রোজ করে থাকি, একটা বিষয়ের অবতারণা আর সেই বিষয়কে নিয়ে অন্তত দুটো ভিন্ন মতামতকে এনে হাজির করা, যাতে করে আপনারা আপনার মতটাকে শানিয়ে নিতেই পারেন আবার আপনার বিরুদ্ধ মতটাকেও শুনে নিতে পারেন।
মন্ত্রীর গাড়ি হু হু করে বেরিয়ে গেল আর তারপরেই দেখলাম আমরা, এক ছাত্র পড়ে রয়েছে, তার চোখ দিয়ে রক্ত পড়ছে, তাকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার আগেই জানা গেল যে মন্ত্রী নিজেও চলে গেছেন হাসপাতালে, ওনারও নাকি হাতে লেগেছে, যদিও রক্ত ইত্যাদি বের হয়নি। ওদিকে আর একজন ছাত্রের পা ভেঙেছে, সেও হাসপাতালে। যাদবপুর কিছুদিন পর পর খবরের শিরোনামে আসে, আবার এসেছে, এবারে বড় অভিযোগ, শিক্ষামন্ত্রী, একসময়ের অধ্যাপকও বটে, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর গাড়ির চাকার তলায় ছাত্র আহত। এরপরে যা যা হয়েছে সবটাই রুটিন ধরেই হয়েছে, এলাকা, তার পাশের এলাকা, কাছেপিঠের তৃণমূলের নেতারা জড়ো হয়েছেন, মিছিল করেছেন, আমরা চাইলে আধঘণ্টায় যাদবপুরের দখল নিতে পারি গোছের কথাবার্তাও শোনা গেছে। অন্য দিকে আবার রুখে দাঁড়াল যাদবপুর, সেই পুরনো স্লোগান, আমরা শুনেছিলাম অসহ্য বুদ্ধের উদ্ধত দম্ভ, আটকাতে আমরা রাস্তায় নামব, এবারে কেবল নামটা পাল্টে গেল, অসহ্য ব্রাত্যের উদ্ধত দম্ভ, আটকাতে আমরা রাস্তায় নামব। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি ইতিহাসে মন্ত্রী-নেতার গাড়ি চাপা দিয়ে চলে যাচ্ছে প্রতিবাদী ছাত্রকে, এমনটা তো খুব একটা কেন? একটাও নেই। কাজেই এ নিয়ে কথা তো চট করে থামবে না। আর হল কেন এই ঝামেলা, ছাত্রদেরই বা দাবি কী? দাবি খুব পরিষ্কার, নির্বাচন চাই, গতবছরের ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকেই দিদিমণিই নিজেই জানিয়েছিলেন, নির্বাচন হবে ৬ মাসের মধ্যেই, কেটে গেছে ৬ মাস এখনও নির্বাচন নেই, কাজেই ছাত্রদের দাবি তো উঠবেই, আর ছাত্র রাজনীতি করে ব্রাত্য বসু রাজনীতিতে না এলেও বাকিরা তো ছাত্র রাজনীতি করেই এসেছেন, আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস, সৌগত রায় ইত্যাদিদের কথা বলছি, তাঁরা তো জানেন, ছাত্র রাজনীতির প্রথম অধিকার হল কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়ন। কেন হবে না ভাই? কাজেই সেই জায়গা থেকেই বিক্ষোভ আর তার ফলশ্রুতি এই ঘটনা। সবে আরজি কর সামলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবস্থার নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু মুখেই এই ঘটনা আশা করেননি, যদিও ঘটনার পরে বাম আর তৃণমূল মুখোমুখি লড়েই যাচ্ছে, বিবৃতির পর বিবৃতি, রাস্তায় নামা। মিছিল মিটিং, কিন্তু রাজ্যের বিরোধী দলের হাতে এখনও ললিপপ, তেনারা বুঝেই উঠতে পারছেন না যে হচ্ছেটা কী? পাবটা কী?
আরও পড়ুন: অদিতির সঙ্গে সাদা কালো | ট্রাম্পসাহেব বাংলাদেশ মোদিজিকে দিয়ে গ্রিনল্যান্ড নিজে রাখতে চান
এবারে আসুন একটু অন্য দিক থেকে দেখা যাক। যাদবপুরে হচ্ছিল তৃণমূলপন্থী অধ্যাপকদের, ওয়েবকুপার সম্মেলন, সেখানে কেন এসএফআই বা বাম ছাত্র সংগঠন বিক্ষোভ দেখাতে যাবে? এটা কোন ধরনের রাজনীতি? কেবল ব্রাত্য বসু আছেন বলে? ধরুন সিপিএমের সম্মেলন হচ্ছে, বা অন্য কোনও দলের, সেখানে আর একটা ছাত্র যুব বা অন্য কোনও রাজনৈতিক সংগঠন গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে পারে? এ ধরনের আহাম্মক সিদ্ধান্ত নিতে থাকলে ভবিষ্যতে কী হতে পারে ভেবেই আমি আতঙ্কিত। দুই, ওই সম্মেলনের মধ্যেই ব্রাত্য বসু যিনি আবার শিক্ষামন্ত্রীও বটে তিনি এসএফআই-এর ডেপুটেশন নিলেন, তার ছবিও পাওয়া যাচ্ছে, অর্থাৎ তিনি কোনও কথা শোনেননি তাও নয়। এরপরে কিছু ছাত্র বিক্ষোভ চালিয়ে যায়, তারই অঙ্গ হিসেবে গাড়ি আটকানোর চেষ্টা চলে, গাড়ির চাকার হাওয়া খুলে দেওয়া হয়, এরপর শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির বনেটে চাপে ছাত্ররা, কাচ ভাঙা হয়। এই নৈরাজ্যের কতটা প্রয়োজনীয়তা ছিল? কোন মহান লক্ষ্য সাধিত হবে এ দিয়ে? এরপর খুব পরিষ্কার যে ছেলেটি ছিটকে পড়ে আঘাত পায়, গাড়ির চাকা কোনওভাবেই, হাজার চেষ্টার পরেও কারও কেবল চোখ রক্তাক্ত করতে পারে না, ছেলেটি ছিটকে গিয়েছিল, পাশে দাঁড়ানো স্কুটি ইত্যাদি কিছুতে লেগে একটা আঘাত পেয়েছে। কিন্তু সেটাকে গাড়ি চাপা বলে চালানোর চেষ্টায় একটা ফটোশপ করা ছবিও আমদানি হয়ে গেল, এগুলোর দরকার ছিল? পিছনে আর একজন অধ্যাপক ওম প্রকাশ মিশ্র ছিলেন, তাঁকে ধরে প্রায় মব লিঞ্চিং-এর মতো এক ঘটনার ছবিও সামনে আছে। কী চান এই ছাত্ররা? আবার এভাবেও দেখতে পারেন, ছাত্র আন্দোলন কবে আর ব্যাকরণ মেনে হয়েছে? সে তো এমন উত্তাল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, তাই বলে মন্ত্রী এতটুকু ধৈর্য দেখাবেন না? মন্ত্রীর গাড়িকে ওইভাবেই যেতে হবে? মন্ত্রী যদি আরও ঘণ্টা চার-পাঁচ ঘেরাও হয়েই থাকতেন, কোন মহাভারত অশুদ্ধ হত তাতে। সব মিলিয়ে এমন পরিস্থিতি কাম্য নয়, ছাত্রদের কী করা উচিত বা উচিত নয়ের আগে শিক্ষক, অভিভাবক, রাজ্যের শাসকদলের কী করা উচিত ছিল সেটা অনেক বেশি জরুরি বিবেচ্য ব্যাপার। আর সেখানে কোথাও বেশ বড় গাফিলতি ছিল বলেই আবার শিরোনামে যাদবপুর।