ওয়েব ডেস্ক: পদ্ধতির ফাঁক দিয়ে ধর্ষণকারীর ছাড় পাওয়া চরম ব্যর্থতা। অভিমতসহ দ্বাদশ বর্ষীয়াকে ধর্ষণের দায়ে পকসো মামলায় (POCSO) দুই ব্যক্তির সাজা বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। বিহারের (Bihar) ভোজপুর জেলায় ১২ বছর বয়সি এক কিশোরীকে বার বার ধর্ষণে অভিযুক্ত দুই ব্যক্তির সাজা মাইলফলক রায়ে বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। ক্ষতিগ্রস্তের বয়ান বার বার একইরকম থাকা সত্ত্বেও এবং সেই ধর্ষণের মেডিক্যাল প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে আসামিদের পাটনা হাইকোর্টের মুক্তির নির্দেশ বাতিল করার রায় দিলেন বিচারপতি সঞ্জয় কুমার ও বিচারপতি সতীশ চন্দ্র শর্মা।
বার বার ধর্ষণে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ার পর কিশোরী জানায়, তাদের কীর্তি ফাঁস করলে হরেরাম শাহ এবং মণীশ তিওয়ারি খুন করার হুমকি দেয়। ভারতীয় ফৌজদারি আইন অনুসারে এবং পকসো আইন অনুসরণে নিম্ন আদালতের দুই আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বয়সের প্রমাণে ঘাটতি, চার্জ গঠনে ভ্রান্তি এবং একইসঙ্গে দুই আইনে শুনানি হওয়ার কারণ দেখিয়ে সাজা খারিজ করে পাটনা হাইকোর্ট (Patna High Court)। সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন কিশোরীর বাবা।
আরও পড়ুন: বোকা বানাতে পারলেই সাফল্য! বিতর্কিত মন্তব্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর
অভিযুক্ত তথা আসামিরা হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত যথাযথ বলে দাবি করলেও শীর্ষ আদালত রায়ের শুরুতেই জানিয়ে দেয়, টেকনিক্যাল কারণকে সামনে রেখে জঘন্য ধর্ষণের অপরাধে অভিযুক্তদের ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা ব্যবস্থাগত ব্যর্থতা। ছোটদের আইনি নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য যে ব্যবস্থা, এমন প্রবণতার ফলে তাকেই লঘু করা হয়। পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট এবং নিম্ন আদালতে ওই কিশোরী ধারাবাহিকভাবে একই রকম বয়ান দিয়েছে। ছোটখাটো তফাৎ স্বাভাবিক। তা নিয়ে গুরুতর সন্দেহের সুযোগ নেই।
দ্বিতীয়ত, নথিতে তার বয়স ১২ থেকে ১৫-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। কিন্তু সেটাও অস্বাভাবিক নয়। বিশেষত গ্রামীণ এলাকায়। যেখানে নথিগত অসামঞ্জস্য হামেশাই ঘটে থাকে। কিন্তু সে যে নাবালিকা, তা নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। ফলে এক্ষেত্রে একইসঙ্গে পকসো আইন প্রযোজ্য। সে যে ধারাবাহিক ধর্ষণের শিকার, তা মেডিক্যাল এবং গর্ভপাতের রেকর্ড অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত। আর নিম্ন আদালত এফআইআর দাখিলের দিনটিকেই অপরাধের দিন হিসেবে উল্লেখ করে যে ভুল করেছে, তার জন্য অপরাধীদের মুক্তি প্রাপ্য নয়, অভিমত সুপ্রিম কোর্টের।
শীর্ষ আদালত আরও বলে, নিখুঁত জবানবন্দি বা প্রমাণ বলে কিছু হয় না। মন্তব্য সহ ত্রুটিহীন জবানবন্দি পাওয়ার জন্য আদালতের চাহিদার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের সতর্কবার্তা। মনে রাখতে হবে, নিখুঁত তথ্যের চাহিদা অনেক সময় বানানো তথ্য তৈরির প্রতি উৎসাহ দেয়। তাই ক্ষতিগ্রস্তকে যে বাস্তব পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে, সেদিকেই আদালতকে লক্ষ রাখতে হবে। বিশেষত যে ক্ষতিগ্রস্তরা গ্রামীণ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর। মহিলা বিশেষত নাবালিকারা যৌন অপরাধের ক্ষেত্রে দ্বিগুণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। প্রথমত, ধর্ষণের ফলে এবং দ্বিতীয়বার আইনি পদ্ধতির মুখোমুখি হয়ে। তাই বিচারক বা বিচারপতিদের অত্যন্ত স্পর্শকাতরতার সঙ্গে এবং বৃহত্তর সামাজিক প্রেক্ষাপটের দিকে নজর রেখে পা ফেলতে হবে। অভিমতসহ নিম্ন আদালতের সাজা বহাল রেখে দুই সপ্তাহের মধ্যে আসামিদের আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ।
দেখুন অন্য খবর: