নয়া দিল্লি: এক শিক্ষিকার পোশাক নিয়ে বিতর্ক (Dress Code Debate) তীব্র আকার নেয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশপুর প্রফুল্ল বালিকা বিদ্যালয়ে। অভিযোগ, শাড়ি না পরে স্কুলে আসায় তাঁকে মানসিকভাবে হেনস্থা করা হয়, এমনকি মারধর ও চুল কেটে নেওয়ার মতো চরম অপমানজনক ঘটনার শিকার হতে হয়। এর জেরে মানসিক অবসাদে দীর্ঘ ৭ বছর চিকিৎসাধীন ছিলেন ওই শিক্ষিকা। সুস্থ হয়ে ফের স্কুলে যোগ দিতে চাইলে বাধা আসে স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে। শেষমেশ আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি, যেখানে কলকাতা হাইকোর্ট কড়া (Calcutta High Court) নির্দেশ দেয় যে শিক্ষকের পোশাক নির্ধারণের ফতোয়া জারি করতে পারে না স্কুল ম্যানেজিং কমিটি।
২০১০ সালের একদিন, অন্যান্য দিনের মতোই স্কুলে এসেছিলেন ইংরেজি শিক্ষিকা মধুরিমা দাস। বাঁশদ্রোনি থেকে বাসন্তী প্রতিদিন যাতায়াত করা তাঁর পক্ষে শাড়ি পরে আসা কঠিন ছিল, তাই সালোয়ার কামিজ পরেছিলেন তিনি। এতেই ক্ষুব্ধ হন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা। ছাত্রীদের একাংশ ও কিছু সহকর্মীর উপস্থিতিতে তাঁকে হেনস্থা করা হয়। অভিযোগ, তাঁকে মারধর করা হয় ও চুল কেটে নেওয়া হয়। পরে পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে। ঘটনার পর মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেন শিক্ষিকা, আর স্কুলেও ঢুকতে দেওয়া হয়নি তাঁকে।
আরও পড়ুন: মায়ানমারে মৃত্যুমিছিল, সাহায্য পাঠাল ভারত
টানা সাত বছর মানসিক চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে তিনি ফের স্কুলে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁকে প্রবেশ করতে দেয়নি, এমনকি বেতনও বন্ধ করে দেয়। বিষয়টি শিক্ষা দফতরকে জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে কলকাতা হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন তিনি। দীর্ঘ পাঁচ বছর মামলার প্রক্রিয়া চলার পর বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে বিষয়টি ওঠে, যেখানে শিক্ষিকার আইনজীবী স্পষ্ট জানান যে সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন রায়ের ভিত্তিতে কোনও শিক্ষক বা শিক্ষিকার পোশাক নির্ধারণের একচ্ছত্র অধিকার স্কুল ম্যানেজিং কমিটির নেই।
বিচারপতি পুরো বিষয়টি শোনার পর বিস্ময় প্রকাশ করেন ও মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। পাশাপাশি, দক্ষিণ ২৪ পরগনার স্কুল পরিদর্শককে বলা হয় সব দিক খতিয়ে দেখে চার সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষিকাকে স্কুলে পুনরায় নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। এই রায় কেবল মধুরিমা দাসের জন্য নয়, বরং শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার পক্ষেও এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করছেন অনেকে।
দেখুন আরও খবর: