ওয়েবডেস্ক: দীর্ঘ ৩৩ বছর আমেরিকায় (America) থাকার পরেও ৭১ বছরের বৃদ্ধাকে ভারতে (India) পাঠিয়ে দেওয়া হল, বলা যায় তাড়ানো হল। আর সেই কাজটিও আমেরিকা করল জঘন্য কদর্য আচরণের সঙ্গে। আটক করার সময় ওই বৃদ্ধাকে হাতকড়া পরানো হয়, পা শক্ত করে বাঁধা হয়েছিল। তিনি নিরামিষভোজী, কিন্তু কারাগারে তাঁকে এমন খাবার দেওয়া হয়েছিল যা তিনি খেতে পারতেন না।
আটক থাকার সময় হরজিত সিংয়ের মুক্তি ও ন্যায়বিচার চেয়েছিল প্রবাসীদের ভারতীয়দের পাশাপাশি ‘পাঞ্জাবি দাদির’র সংস্পর্শে আসা মার্কিনীরাও। কিন্তু এর পরেও মার্কিন সরকারের অভিবাসন বিভাগ তাঁকে একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে বসে ভারতে পাঠিয়ে দিয়েছে। ট্রাম্প সরকারের (Trump Government) বিরুদ্ধে চরম অমানবিক আচরণের অভিযোগ এনেছেন বৃদ্ধা। হরজিত আরও জানিয়েছেন, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চান।
হরজিত কউর (Harjit Kaur) জানান, ১৯৯১ সাল থেকে তিনি আমেরিকায় থাকেন। কিন্তু পাসপোর্ট না থাকার কারণে ২০১২ সাল থেকে নির্বাসন প্রক্রিয়া জোরালো আকার নেয়। আমি এর কোনও কারণ জানি না। আমি প্রতি ছয় মাস অন্তর হাজিরা দিতে যেতাম। ৮ সেপ্টেম্বর আমাকে গ্রেফতার করা হয়। আমাকে কোনও কারণ জানানো হয়নি, পরিবারের সঙ্গে দেখাও করতে দেওয়া হয়নি। যদিও ওদের কাছে আমার সঙ্গে দেখার করার টিকিট ছিল।
গ্রেফতার করার সময় তিনজন মিলে আমার পাশে গোল করে দাঁড়িয়েছিল। আমাকে একটা ঠান্ডা ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। সকাল হতেই আমাকে সেখান থেকে অন্য জায়গায় সরানো হয়, সেই সময় আমাকে হাত কড়া পরানো হয়েছিল, পা দুটিকে শক্ত করে বেঁধে দেওয়া হয়। নিরামিশাষী হিসেবে যে খাবার দেওয়া হয়েছিল, তা খাওয়ার অনুপযুক্ত ছিল।
ওয়ার্ক পারমিট এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও, হরজিত কউরকে আরও বেশ কয়েকজন মহিলার সঙ্গে আটক করা হয়েছিল।
হরজিত জানিয়েছেন, ভারতে পাঠানোর সময় তাঁকে হাতকড়া পরানো হয়নি। হরজিত জানিয়েছেন, আমার সন্তান, নাতি-নাতনীরা সকলেই আমেরিকায় আছে। আমি ফিরে যেতে চাই। অ্যারিজোনায় নিয়ে যাওয়ার আগে ৮-১০ দিন বেকার্সফিল্ডে আটকে ছিলেন তিনি। তার সেখান থেকে বিমানে দিল্লিতে পাঠানো হয়। আমার সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করা হয়েছিল।
হরজিতের আইনজীবী দীপক আলুওয়ালিয়া জানিয়েছেন, গত রবিবার রাতে আচমকা বেকার্সফিল্ডের আটককেন্দ্র থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হরজিতকে। এর পরে তাঁকে একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে তুলে দেয় মার্কিন অভিবাসন বিভাগ (US Immigration Department) । সেই ফ্লাইট জর্জিয়া হয়ে গত মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে আসে। আটক অবস্থায় তাঁকে ভারতে ফেরানো হয়।
আরও পড়ুন- মার্কিন সফরে চরম অপমানিত হলেন শাহবাজ শরিফ!
গত শনিবার হরজিতের সঙ্গে কয়েকটি জরুরি প্রয়োজনে ফোন করার অনুরোধ করেছিলেন আলুওয়ালিয়া। তাঁর দাবি, সেই অনুরোধের জবাব আসে গত বুধবার। ফোনের অপর পাশ থেকে বলা হয়, দুদিনের মধ্যে হরজিতে সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হবে তাঁকে। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে হরজিত কউর ভারতেই ফিরে এসেছিলেন।
আলুওয়ালিয়া জানিয়েছেন, হরজিৎ কউরের পরিবার তাঁর ভারতে ফেরার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ব্যবস্থা করেছিল। তাঁরা মার্কিন সরকারের কাছে মাত্র দু’টি অনুরোধ করেছিলেন: প্রথমত, তাঁকে একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে ফেরত পাঠানো হোক। দ্বিতীয়ত, তাঁকে কয়েক ঘণ্টার জন্য আমেরিকায় তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হোক। কিন্তু কোনটিই শোনেনি ট্রাম্প প্রশাসন। জর্জিয়ায় প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ঘণ্টা তাঁকে আটক রাখা হয়েছিল। সেই সময়ে তাঁকে শোয়ার বিছানা পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। আটকে রাখা হয় আরও বেশ কিছু লোকের সঙ্গে একটি অস্থায়ী হোল্ডিং রুমে। সেখানে শুধুমাত্র একটি কংক্রিটের বেঞ্চ ছিল। মেঝেতে কম্বল পেতে ঘুমোতে বাধ্য করা হয়েছিল।
আলুওয়ালিয়া জানিয়েছেন, হরজিত কউর বৃদ্ধা। শোওয়ার পরে আর উঠতে পারছিলেন না। কারণ তাঁর দুই হাঁটুতেই অস্ত্রোপচার হয়েছে। তিনি খাবার চেয়েছিলেন। কারণ, তাঁকে কিছু ওষুধ খেতে হয়। কিন্তু তাঁর সেই অনুরোধ উপেক্ষা করা হয়। পরে তাঁকে একটি পনির স্যান্ডউইচ দেওয়া হয়েছিল। ওষুধ খাওয়ার জন্য জল চেয়েছিলেন, দেওয়া হয় এক প্লেট বরফ। তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁর বাধানো দাঁত। বরফ চিবিয়ে খেতে পারবেন না। সেখানকার নিরাপত্তারক্ষীরা বলেছিল, ‘এটা তোমার সমস্যা।’
৩৩ বছর ধরে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার ইস্ট বে এলাকায় থাকাকালীন একটিও অপরাধের অভিযোগ নেই ৭১ বছরের এই বৃদ্ধার বিরুদ্ধে। ৮ সেপ্টেম্বর সান ফ্রান্সিসকোর ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের কর্তারা তাঁকে তাঁর পরিচয়ের নথিপত্র জমা দিতে ডেকে আটক করে। ২০১২ সালে আমেরিকায় আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছিলেন হরজিৎ কউর। কিন্তু সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে মার্কিন সরকার।
হরজিতের আটক করা নিয়ে সরব হয়েছে ইস্ট বে-র প্রবাসী ভারতীয়রা। পাশাপাশি মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য জন গারামেন্ডি, ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য অ্যালেক্স লিও-সহ বহু মার্কিন জনতা প্রতিবাদ জানান। ২০ বছরের বেশি সময় ধরে বার্কলেতে সেলাইয়ের কাজ করতেন হরজিত। তিনি সকলের কাছে তাঁদের প্রিয় ‘পাঞ্জাবি দাদি’।
দেখুন আরও খবর-