হাওড়া: প্রয়াত গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Pulok Banerjee House Durga Puja) বাড়ির পুজো আজও অনন্য। তাঁর কথা ও সুরে বহু এখনও বাঙালি মনে দোলা দিয়ে যায়। সেই বিখ্যাত গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Pulok Banerjee) বাড়িতে আজও মহা ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয়। উত্তর হাওড়ার শালিখা হাউসের পুজো। যা গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির পুজো নামেই পরিচিত। ২৮১ বছর ধরে বংশপরম্পরায় এই পুজো হয়ে আসছে। তৎকালীন জমিদার রাধারমণ বন্দ্যোপাধ্যায় এই পুজোর সূচনা করেন। এই বাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে আছে নস্টালজিয়া। কারণ এই বাড়ির সদস্য ছিলেন গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। এখানে বসেই তিনি সৃষ্টি করেছেন কালজয়ী বহু গান। বিশেষ করে সেইসময় পুজোর জন্য লেখা সব এলবামের গান ছিল হিট। ও কেনো এত সুন্দরী হল,সে আমার ছোটো বোন,জড়োয়ার ঝুঁমকো থেকে একটা মতি খসে পড়েছে..এরকম বহু গান এখানে বসে তিনি লিখেছেন।
ভালোবাসার রাজপ্রাসাদের ‘বাবুদের বাড়ি’ নামে পরিচিতি।প্রায় তিনশ বছর আগে এখানে আসেন জমিদার রাধামোহন বন্দ্যোপাধ্যায়। পরবর্তীকালে বাবুডাঙ্গা নামে পরিচিত হয়। এই বাড়িতেই জন্ম পুলক বাবুর। ১৯৩১ সালে। এই বাড়িতেই লেখা হয়েছে বাংলার কত কালজয়ী গান। তাঁর লেখা গান আজও বাঙালির মনের মণিকোঠায়৷ সেই পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির দুর্গাপুজোরও রয়েছে অত্যন্ত সমৃদ্ধ ইতিহাস। শিল্পীর আত্মহত্যার পর থেকেই জৌলুশ কমেছে। ভাইপোরা ছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যরা চলে গিয়েছেন বাড়ি ছেড়ে। সেই কবেই তো লিখে গেলেন, ‘মুকুট টা তো পড়ে আছে…রাজাই শুধু নেই’। তখন জানতেন, তাঁর ভালবাসার রাজপ্রাসাদেও একসময় নিশুতি রাত গুমরে মরবে?
পুলক বাবুর আমলে এই বাড়ির দুর্গাপুজো অন্যমাত্রা নেয়। পুজোর কটা দিন বসতো জমজমাট গান বাজনার আসর।আসতেন মান্না দে,বাপি লাহিড়ী,আরতি মুখোপাধ্যায়ের মতো নামী শিল্পীরা। বর্তমানে এই পুজোর জৌলুষ কমেছে। তবে কমেনি ঐতিহ্য। পুরানো রীতিনীতি মেনে নিষ্ঠা ভরে হচ্ছে দেবীর আরাধনা। বাড়ির ঠাকুর দালানে তৈরি হয় এক চালার প্রতিমা। মহালয়ের পর থেকেই ঘট পুজো শুরু হয়ে যায়। নিজস্ব ঠাকুর ঘরে হয় চন্ডীপাঠ।
আরও পড়ুন: বালুরঘাটের মোহরার বাড়িতে দুর্গা প্রতিমার গহনা তৈরি! দিশা দেখাচ্ছে বিকল্প কর্মসংস্থান
ষষ্ঠীর দিন সন্ধ্যায় বেল বরণ দিয়ে পূজো শুরু হয়। সপ্তমীর সকালে গঙ্গায় নিজেদের ঘাটে হয় কলা বউ স্নান।অষ্টমীতে কুমারী পুজো ও বিশেষ আরতি ও পুষ্পাঞ্জলি হয়। নবনীতে ফল ও সবজি বলি হয়। আগে নবমীতে মোষ বলি হলেও এখন ফল বলি হয়। সপ্তমী থেকে নবমী দেবীর জন্য হয় ভোগ।খিচুড়ি,কুমড়োর ছক্কা, পাঁচ রকম ভাজা, ফ্রায়েড রাইস ও মাছের পদ থাকে। তবে এই পুজোর একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ঠাকুরকে বাসি ভোগ দেওয়া হয়। দশমীতে দেবীকে বাসি ভোগ দেওয়ার রীতিই অন্যান্য পুজোর থেকে একে আলাদা করে দিয়েছে। দশমীর দিন বিশেষ ভোগ খেয়ে উমা পাড়ি দেন শশুরবাড়ি। বর্তমানে ঐতিহ্য রক্ষার পাশাপাশি শান্ত ভঙ্গিতে পুজো পালন করা হচ্ছে। যদিও জৌলুশ কিছুটা কমেছে, তবে নিষ্ঠা ও ভক্তি এখনও অটুট। পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতি, ঐতিহ্য ও শালিখা হাউসের দুর্গাপুজোর এই বিশেষ অনুষ্ঠান যেন বয়ে চলে সমাজে সংস্কৃতি ও ইতিহাসের মহিমা।
অন্য খবর দেখুন