হলদিয়া: প্রতিপদ থেকেই শুরু হয়ে গেল মহিষাদল রাজবাড়ির প্রায় ২৫১ বছরের দুর্গাপুজো (Mahishadal Rajbari Durga Puja)। রাজবাড়ির জৌলুস কমলেও রীতি মেনেই পুজিত হবেন মা। আগে কার সেই জৌলুশ আড়ম্বর আজকে অনেকটাই কমে গিয়েছে। কিন্তু নিয়ম মেনেই প্রতিপদে ঘট স্থাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হল মহিষাদল রাজবাড়ির (Mahishadal Rajbari) দুর্গাপুজো। প্রায় ২৫১ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজো দেখতে আজও ভিড় জমান দূরদূরান্তের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রতিমা দর্শন করতে আসেন ভিন রাজ্য, ভিন জেলার দর্শনার্থীরাও।
মহালয়ার পরের দিন প্রতিপদ থেকে শুরু হয় রাজবাড়ির প্রায় ২৫১ বছরের প্রাচীন দুর্গাপুজো। প্রায় ১৭৭৪ সালে মহিষাদলের রানি জানকীর আমলে রাজবাড়ির দুর্গাপুজো শুরু হয়। সেই সময় থেকেই মহিষাদল রাজবাড়ির ঠাকুরদালানে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। রাজত্ব চলে যাওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর জৌলুস কমেছে। কিন্তু, নিয়ম-আচারে ছেদ পড়েনি। তাই প্রথা অনুযায়ী মহালয়ার পরদিন অর্থাৎ প্রতিপদের দিন ঘটস্থাপন করে মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর সূচনা হয়। এ প্রসঙ্গে এই রাজবাড়ির বর্তমান প্রজন্মের সদস্যরা বলেন, ‘মহালয়ার পরের দিন রাজবাড়ির দুর্গামণ্ডপ লাগোয়া অশ্বত্থ গাছের তলায় ঘট ওঠে। আজ থেকে প্রতিদিনই ঘটপুজো হবে। সপ্তমী থেকে মূর্তি পুজো হবে। প্রতিমার একপাশে ঘট, অন্যপাশে ধান রাখা হয়। এই দুর্গাপুজো করার পরই গ্রামে ধান ফলেছিল। তাই ভালো ফসলের আশায় আজও দেবীর পাশে ধান রাখা হয়।
আরও পড়ুন: মহানগরের মহাপুজোয় হিন্দুস্তান পার্ক
পুজোয় ১০৮টি নীল পদ্ম দেওয়ার চল ছিল। এখন তা আর হয় না সাদা পদ্ম দিয়ে পুজো হয়। আগে মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয় যাত্রাপালা, ভোগ বিতরণ, কামান দেগে সন্ধিপুজো, বিসর্জনের শোভাযাত্রা সবই হত। পুজোর দিনগুলিতে ঠাকুরদালানেই যাত্রা হত। রাজবাড়ির মহিলারা পর্দার আড়াল থেকে যাত্রা দেখতেন। ইতিহাস বিজড়িত পুজোকে ঘিরে রয়েছে নানান রূপকথার গল্প। রাজবাড়ির কূলদেবতা যেহেতু মদন গোপাল জিউ। তাই বৈষ্ণব মতে হয় দুর্গাপুজো। আগে সন্ধিপুজোর সময় কামান দেগে এলাকার মানুষজনদের জানান দেওয়া হত, রাজবাড়ির সন্ধিপুজো শুরু হতে চলেছে। পুজোর দিন অনুযায়ী ভোগ রান্না হত। যেমন, ষষ্ঠীতে ছয় মন, সপ্তমীতে সাত মন, অষ্টমীতে আট মন, নবমীতে নয় মন চালের প্রসাদ তৈরি করে বিতরণ করা হত। এখন তা আর সম্ভব হয় না। আগে কামান দেগে রাজবাড়ি সহ আশপাশের এলাকার পুজোমণ্ডপে সন্ধিপুজো শুরু হত। এখন আর তা হয় না।আগে চিকের আড়াল বসে রাজ বাড়ির মহিলারা অনুষ্ঠান দেখতো। এখন সেই প্রথা ছেড়ে রাজ পরিবারের মহিলারা প্রকাশ্যে এসে বাড়ির পুজোতে মেতে উঠেন।
অন্য খবর দেখুন