কলকাতা: কলকাতা মেট্রোর (Kolkata Metro) সমস্যার জালে নিত্যযাত্রীরা বিপর্যস্ত। কবি সুভাষ স্টেশনের একটা অংশে ভাঙনের ঘটনায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে পরিষেবা ব্যাহত। কলকাতা মেট্রোর গ্রিন লাইন ও পার্পল লাইনের সম্প্রসারণ এবং ইয়েলো লাইনের উদ্বোধনের পর থেকে ব্লু–লাইনে দেরিতে ট্রেন চলা এবং দমদম, এসপ্ল্যানেড, রবীন্দ্র সদন, কালীঘাট বা টালিগঞ্জের মতো ব্যস্ত স্টেশনগুলোই নয়, প্রায় প্রতিটা স্টেশনে অস্বাভাবিক ভিড় যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়িয়েছে। মেট্রোর ব্লু লাইনে (Kolkata Metro Blue Line) প্রতিদিন গড়ে সাড়ে পাঁচ লাখের বেশি যাত্রী যাতায়াত করছেন। এসপ্ল্যানেড–শিয়ালদহ অংশটি জুড়ে যাওয়ার ফলে গ্রিন লাইনের দৈনিক যাত্রীর সংখ্যাও দু’লক্ষ ছাড়িয়েছে। পরিষেবা ভয়াবহ স্তরে নামতে শুরু করেছে কলকাতা মেট্রোর ব্লু–লাইনের। মেট্রোর দৈনিক যাত্রীর সংখ্যা প্রায় আট লক্ষ হয়ে যাওয়ায় এই চাপ সামলাতে নাজেহাল হতে হচ্ছে কর্তাদের।
কলকাতা হাইকোর্টে শেষ মেট্রোর সময় বাড়ানোর জন্য একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। বহু অফিসযাত্রীই বেশ খানিক রাতে ফেরেন এবং তাদের নিত্যদিন ভোগান্তি শিকার হতে হয়। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম জানিয়েছিলেন, রাতের মেট্রো বাড়ালে সাধারণ মানুষের সুবিধা হয়। তারপরেই গত বছরের জুন মাসেই ব্লু লাইনে রাতে (Night Metro Service Blue Line) বিশেষ মেট্রো পরিষেবার ঘোষণা করা হয়েছিল। যাত্রীদের একাংশ এই সিদ্ধান্তে স্বভাবই খুশির হয়েছিলেন। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই এই পরিষেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল মেট্রো কর্তৃপতক্ষ। বুধবার ৩ সেপ্টেম্বর থেকে আর রাত ১০.৪০ মিনিটে দমদম বা শহীদ ক্ষুদিরাম স্টেশন থেকে মিলবে না মেট্রো। এই মেট্রো বন্ধের কারণ অবশ্য পরিকাঠামোগত সমস্যা। মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে রেক ও মোটরম্যানের সঙ্কটে জেরেই এই পরিষেবা বন্ধ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: তদন্তে অসন্তুষ্টি! খেজুরি মামলায় ‘কেস ডাইরি’ তলব হাইকোর্টের
কবি সুভাষ স্টেশনের একটা অংশে ভাঙনের ঘটনায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে পরিষেবা ব্যাহত। যার খেসারত দিতে হচ্ছে নিত্যযাত্রীদের। দমদম এবং শহিদ ক্ষুদিরামের মধ্যে রাত্রিকালীন পরিষেবা এ বার পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা মেট্রো। শুধু তাই নয়, আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইয়েলো লাইন পরিষেবা, অর্থাৎ বিমানবন্দর থেকে নোয়াপাড়া পর্যন্ত এবং ব্লু লাইন পরিষেবা, অর্থাৎ নোয়াপাড়া থেকে শহীদ ক্ষুদিরাম পর্যন্ত, আলাদা করা হয়েছে। যাতে কলকাতার ব্লু লাইন, ইয়েলো লাইনের পরিষেবা থেকে ঠিক একইভাবে বিচ্ছিন্ন থাকে যেভাবে গ্রিন লাইন এবং ব্লু লাইন পরিষেবাগুলিকে একে অপরের ক্যাসকেডিং প্রভাব থেকে পৃথক করা হয়।
কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশন বন্ধের কারণে খালি রেকগুলো প্রথমে কবি সুভাষ ডাউন প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যাওয়া হয়, রিভার্সাল শেষে আপ লাইন ধরে শহিদ ক্ষুদিরাম স্টেশনেই ফের রেলপথে চালু করা হচ্ছে, ফলে রেক রিভার্সালের সময় বেড়েছে। ব্যস্ত সময়ের যাতায়াত সংক্রান্ত চাহিদা মেটাতে, কিছু ডাউন ট্রেন মহানায়ক উত্তম কুমার স্টেশনে শর্ট-টার্মিনেট করে আপ লাইন ধরে দক্ষিণেশ্বরের পথে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে এই ব্যবস্থায় কবি নজরুল থেকে আসা আপ ট্রেন এবং রবীন্দ্র সরোবর থেকে আসা ডাউন ট্রেন মহানায়ক উত্তম কুমার স্টেশনে ঢোকানো সম্ভব হচ্ছে না। যা সার্বিকভাবে সিস্টেমে আরও জটিলতা তৈরি করছে।
আরও পড়ুন: বাদ অযোগ্যরা, একধাক্কায় কমে গেল SSC-র আবেদনকারীর সংখ্যা
ব্যস্ত সময় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের। নিত্যদিন মেট্রো দেরি মেলায় অফিস টাইমে যাত্রীদের ভিড় বাড়ছে প্রতিটি স্টেশনে। যার জেরে কোনও কোনও সময় হয় মেট্রোর এসি ভালো করে কাজ করছে না, তো আবার কোনও কোনও দিন ভিড়ের চাপে মেট্রোর দরজাও বন্ধ হচ্ছে। যার জেরে প্ল্যাটফর্মে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে পড়ছে মেট্রো। ভিড়ের চাপে নিত্যযাত্রীদের নাভিশ্বাস উঠছে। কর্তৃবক্ষের দাবি, কবি সুভাষ স্টেশন বন্ধের জেরে যে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তা কমাতে ব্লু লাইনের পরিষেবার সংখ্যাও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। মেট্রো ট্রেনের কার্যক্রম সহজ করার জন্য টালিগঞ্জ কারশেড ফের চালু করা হচ্ছে, যা উৎসবের মরশুম পুরোদমে শুরুর আগেই কার্যকরী হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
সূত্রের খবর, মেট্রোয় মোটরম্যানের অনুমোদিত পদ ৫০৯। কিন্তু মোটরম্যান রয়েছেন ২৬০ জন। অর্থাৎ প্রায় ৫০ শতাংশ শূন্যপদ শুধু মোটরম্যানের ক্ষেত্রেই। শুধু গ্রিন লাইনেই মোটরম্যানের পদ রয়েছে ৬০টি। কর্মী রয়েছেন ৪৫ জন।’ মেট্রোর সমস্যা শুধু মোটরম্যান পদে বিপুল সংখ্যক কর্মীর অভাব এমনটাই নয়। ইউনিয়ন জানাচ্ছে, ট্রাফিক বিভাগে অর্থাৎ স্টেশন পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট বিভাগে ৬০০–র বেশি পদ খালি রয়েছে। পর পর লাইন চালু হতে শুরু করল এবং রেকের সংখ্যা বাড়ল, তখনই সমস্যা প্রবল আকার নিল।’গত কয়েক বছর ধরে ব্লু–লাইনের পরিষেবা এতটাই অবহেলিত এবং অপরিকল্পিত যে একটা সময়ে যে কর্মীর অভাব ভয়াবহ আকার নেবে, সেটাই বুঝতে পারেননি মেট্রোর কর্তারা।
অন্য খবর দেখুন