জলপাইগুড়ি: রাজাও নেই, রাজ্যপাটও নেই! তবে প্রাচীন নিয়মগুলি আজও রয়ে গিয়েছে। এ বছর জলপাইগুড়ি বৈকুন্ঠপুর রাজপরিবারের দুর্গাপুজো ৫১৬ তম বর্ষে পদার্পন করল। প্রাচীন এই দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে এখন উৎসাহ উদ্দিপনা তুঙ্গে। জানা গিয়েছে, আগে নরবলি হলেও এখন নরবলির বদলে চালের গুঁড়ো দিয়ে নর বানিয়ে বলি দেওয়া হয়। একইসঙ্গে এখনও পায়রা, পাঁঠা বলির প্রচলন রয়েছে।
রাজবাড়ির দুর্গা মূর্তি সোনার তৈরি। সোনার দুর্গা মূর্তি নিত্যদিন পুজো হলেও প্রতিপদ থেকে কালী মন্দিরে পুজো হয়। সপ্তমীর দিন থেকে সোনার দুর্গা মায়ের মন্দিরের দুর্গা ঠাকুরের সঙ্গেই পুজিত হন। রাজবাড়ির দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে মণ্ডপে ভিড় জমান দুরদুরান্ত থেকে আসা দর্শানার্থীরা। জলপাইগুড়ি বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়ির পাঁচ শতাধিক বছরের প্রাচীন পুজোকে ঘিরে আজও শহরবাসীর আবেগ জড়িয়ে একই রয়েছে।
জলপাইগুড়ি বৈকুন্ঠপুর রাজপরিবারের পুরোহিত শিবু ঘোষাল বলেন, “কালিকাপুরান মতেই পুজো হয়ে থাকে। চাল দিয়ে মানুষের মত মণ্ড বানিয়ে কুশ দিয়ে বলি দেওয়া হয়। রাজবাড়ির প্রতিমা তপ্ত কাঞ্চন বর্না। মা দুর্গাকে প্রতিদিনই আমিষ ভোগ দেওয়া হয়। ভোগের থালায় কোনওদিন ইলিশ মাছ, কোনওদিন চিতল মাছ, কোনওদিন ইলিশের মাথা দিয়ে কচু শাক থাকে। আর বিজয় দশমীর দিন মাকে পান্তা ভাত আর পুটি মাছ নিবেদন করা হয়।”
আরও পড়ুন: মহানগরের মহাপুজো, ৬৬ পল্লী
নন্দৎসব ও কাঁদাখেলার মধ্যে দিয়েই জলপাইগুড়ির রাজ পরিবারের দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। জন্মাষ্টমীর দিন নন্দৎসবের মধ্যে দিয়েই ৫১৬ তম বর্ষের জলপাইগুড়ি বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর কাঠামো তৈরীর কাজ শুরু হয়েছে। বৈকুণ্ঠপুর রাজপরিবারের বিগ্রহ বৈকুন্ঠনাথ। তাই শ্রীকৃষ্ণের পুজো করেই কাঠামো পুজো হয়। জন্মাষ্টমীর দিন কাঁদাখেলা হয়। কাঁদা খেলার পর সেখানকার মাটি দিয়েই দুর্গা প্রতিমা বানানো শুরু হয়।
রাজ পরিবারের সদস্যা লিন্ডা বসু বলেন, উত্তরবঙ্গের প্রাচীন পুজো হিসেবেই পরিচিত রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। রাজবাড়ির পুজো মানেই জলপাইগুড়ি শহরের সবার পুজো। এই পুজোকে কেন্দ্র করে প্রচুর মানুষের ভিড় জমে। মেলাও বসে। আজও প্রাচীন ঐতিহ্য মেনেই পুজো হয়ে থাকে। আমরা এই কয়েকটা দিন প্রচুর মানুষের সঙ্গে দেখা করি, আনন্দ উপভোগ করি।
দেখুন অন্য খবর