ওয়েব ডেস্ক: শীতের (Winter) হাওয়া বইতে না বইতেই গ্রাম বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছে একটা মিষ্টি গন্ধ, সেটা হল নলেন গুড়ের (Nalen Gur)। খেজুর গাছের রস থেকে গুড় তৈরির জন্য রাজ্যে বিখ্যাত লালমাটির জেলা বাঁকুড়া (Bankura)। আর বাংলার প্রাচীন এই স্বাদে আহ্লাদিত হয়েই হাড়কাঁপানো শীতকে স্বাগত জানায় বাঁকুড়াবাসী। এবছর সবে নেমেছে পারদ। সেই সঙ্গে কোমর বেঁধে নলেন গুড় তৈরি করতে লেগে পড়েছেন বাঁকুড়ার নতুনগ্রাম ও বদড়া গ্রামের মহলদাররা।
আসলে যাঁরা খেজুর গাছের ছাল তুলে সেখান থেকে মিষ্টি রস সংগ্রহ করে নলেন গুড় তৈরি করেন, তাঁরা প্রাচীনকাল থেকেই মহলদার নামেই পরিচিত। প্রবল শীতে ভোরের কুয়াশা ভেদ করে খেজুর গাছে উঠে হাঁড়ি বাঁধার সময় থেকেই শুরু হয় তাঁদের কর্মযজ্ঞ। গাছ থেকে সদ্য নামানো খেজুর রস প্রথমে ছেঁকে নেওয়া হয় বিশেষ ছাঁকনিতে, তারপর তা ঢালা হয় একটি বিশাল পাত্রে। কাঠের আগুনে ফুটতে ফুটতে সেই রস পরিণত হয় সোনালি নলেন গুড়ে, যার স্বাদ প্রতি বাঙালির বেশ প্রিয়।
আরও পড়ুন: ১৮০ বছরের ঐতিহ্য! যমরাজের পুজোয় আজও মেতে ওঠে এই শহর
এই পুরো প্রক্রিয়াটি ঘটে এক বিশেষ জায়গায়, যেটিকে স্থানীয়রা বলেন ‘মহল’। খড় ও মাটি দিয়ে তৈরি এই মহলেই চলে গুড় তৈরি ও সংরক্ষণ। শীতকাল জুড়ে, প্রায় দুই থেকে চার মাস ধরে, এখানেই থাকে গুড় প্রস্তুতকারকেরা। রাতভর তারা গাছে উঠে হাঁড়ি বেঁধে আসেন, আবার রস নষ্ট না হয় তা দেখভাল করেন নিবিড়ভাবে।
বাঁকুড়ার এই ঐতিহ্যবাহী গুড় শুধু জেলার সীমায় আবদ্ধ নয়। কলকাতা, দুর্গাপুর, আসানসোল থেকে শুরু করে বিদেশেও রফতানি হয় বাঁকুড়ার নলেন গুড়।
এখন বাঁকুড়ার গ্রামীণ এলাকার সকালটা ভরে উঠছে নলেন গুড়ের মিষ্টি গন্ধে। পুকুরপাড়ে সারি সারি খেজুর গাছ যেন সাক্ষী হয়ে আছে এক অনন্ত ঐতিহ্যের, যা আজও শীতের সকালে ফিরিয়ে দেয় পুরানো দিনের নস্টালজিয়া।
দেখুন আরও খবর:







