Wednesday, September 17, 2025
বাঙালি কাউন্টডাউন
HomeScrollAajke | কেন শাঁখা, নোয়া, পলা খুলেই বিবাহিত মহিলাদের ঢুকতে হবে পরীক্ষা...
Aajke

Aajke | কেন শাঁখা, নোয়া, পলা খুলেই বিবাহিত মহিলাদের ঢুকতে হবে পরীক্ষা হলে?

একজন বিবাহিতা নারীকে কেন সধবার বা বিধবার চিহ্ন বয়ে নিয়ে চলতেই হবে?

পরীক্ষার হলে ঢোকার আগেই কড়াকড়ি চলছিল, তো সেই সময় নাকি শাঁখা, নোয়া খুলে হলে ঢোকার নির্দেশ ছিল। কেন রে ভাই? শাঁখা নোয়া পলা পরীক্ষার হলে কোন বিঘ্ন ডেকে আনত? তাই দিয়ে কীভাবে পরীক্ষাকেন্দ্রের পবিত্রতা ভঙ্গ হত? কেউ কি জানেন? আমি তো জানি না, সম্ভবত যিনি এই নিয়ম করেছেন তিনিও জানেন না। এরকম উজবুকে নিয়ম অবশ্য আমাদের দেশে কেন, সব জায়গাতেই আছে। বিভিন্ন ক্লাবে ঢোকার আগে আপনি ফর্মাল পোশাক পরে আছেন কি না, মানে জুতো, প্যান্ট, গোঁজা শার্ট, টাই ইত্যাদি, না হলে ঢুকতেই দেওয়া হবে না। এখন, ব্রিটিশরা এই নিয়ম চালু করতেই পারেন, উদ্দেশ্য তো এক্কেবারে পরিষ্কার, ধুতি পাঞ্জাবি পরে নেটিভ ড্রেসে যেন কেউ ঢুকে সাহেবি ব্যবস্থাকে ছিন্নভিন্ন না করতে পারে। কিন্তু এখনও সে নিয়ম আছে কেন? কারণ কেউ জানে না, ভেতরে ঢুকে দেখেছি হাত দিয়ে ফিশ ফ্রাই খাচ্ছে, কিন্তু পোশাক সাহেবি। সেরকম এক নিয়ম হল শাঁখা পলা পরে পরীক্ষা হলে ঢোকা যাবে না। সবাই দেখল, সবাই জানল, মায় শিক্ষামন্ত্রীও নিশ্চয়ই জানেন, কিন্তু শাঁখা পলা খুলে হলে ঢোকার নিয়ম জারি রইল। ব্রাহ্মণ ছেলেরা পৈতে পরেই ঢুকেছে, পাঁচ আঙুলে গ্রহরাজ সামালানোর যাবতীয় পাথর আংটি পরে সব্বাই ঢুকেছে, তাগা কবজ, পাগড়ি, কৃপাণ, পৈতে, টিকি সব অ্যালাউড, সবার ছাড় আছে পরীক্ষা হলে কিন্তু কোনও এক না জানা কারণে এই শাঁখা পলা বা নোয়া পরা যাবে না। এমনিতে এই নিয়ম নিয়ে হাজার একটা প্রশ্ন তো তোলাই যায়, কিন্তু এখানে সে প্রশ্ন ওঠেইনি, কেন একজন বিবাহিত মহিলার গর্ব, তাঁর বিবাহিত হওয়ার চিহ্ন শাঁখা নোয়া খোলা হয়েছে? সেটা এক বিরাট প্রশ্ন হয়ে ঘুরছে সমাজ মাধ্যমে, বিভিন্ন মহলে আলোচনায়। সেটাই বিষয় আজকে, ২০২৫-এও শাঁখা, নোয়া, পলা বিবাহিত মহিলাদের গর্ব? বিবাহের চিহ্ন।

প্রথমে জানাই ওই সনাতন সনাতন বলে হেঁদিয়ে যাওয়া বিজেপি আর তার অন্ধভক্তরা জেনে রাখুন, শাঁখা পলা নোয়া কোনওটাই আর্যরা এদেশে নিয়ে আসেনি, অর্থাৎ সেই উপনিষদ বেদ ইত্যাদির সময়ে বিবাহিত মহিলাদের সিঁদুর শাঁখা নোয়া পলা পরার কোনও রীতিই ছিল না, এমনকী সিঁদুর শব্দটাই সংস্কৃত নয়। যা বলে দেয় যে সিঁদুর পরার প্রথাটা আর্যদের নয়। হিন্দুদের বিবাহের সমস্ত পদ্ধতি কিন্তু সপ্তপদীতেই শেষ। যে কারণেই সিঁদুরদান ইত্যাদি কেবল এক অনুষ্ঠান, যার কোনও মন্ত্র নেই। শাঁখা–পলা পরানোরও মন্ত্র নেই। ন’হাজার বছরের পুরোনো শাঁখা হরপ্পায় সিন্ধু সভ্যতার যে অবশেষ সেখানে পাওয়া গেছে, পাওয়া গেছে এক মহিলার মূর্তি, যার সিঁথির জায়গায় গভীর একটা খাঁজ করে দেওয়া ছিল। সেটা থেকে প্রত্নতত্ত্ববিদদের অনেকে মনে করেন, সেই আমলে অর্থাৎ অনার্য সিন্ধু সভ্যতার যুগেও সিঁথিতে সিঁদুর পরার প্রচলন ছিল।

আরও পড়ুন: Aajke | বিপ্লবী কিঞ্জল নন্দ, অ্যাডভোকেট বিকাশ ভট্টাচার্য, রাত দখলের সেরা বাঙালিরা কোথায়?

মানে অনায়াসে শুভেন্দু দিলীপ সুকান্তদের জানিয়ে দিতেই পারেন যে সিঁদুর শাঁখা নোয়ার এই রীতিনীতি সনাতন নয়, হিন্দুরা এই রীতি শিখেছে বিভিন্ন উপজাতি আদিবাসীদের কাছ থেকে। কিন্তু আপাতত মোদি এবং ইতিহাসের কিছু গণ্ডমূর্খদের প্রচারের কারণে সিঁদুর হয়ে উঠেছে হিন্দু রমণীর সতীত্বের চিহ্ন, শাঁখা নোয়াও সধবা হিন্দু নারীর চিহ্ন, যদিও তা হিন্দু রীতিনীতির কোথাও ছিল না। তার কারণ আর্য জনজীবনের শুরুর দিকে মহিলারা ছিলেন স্বাধীন, স্বামী বেছে নেওয়ার অধিকার তাঁদের ছিল, স্বামী ত্যাগ করার অধিকারও তাঁদের ছিল, কাজেই সধবা হওয়ার কোনও চিহ্ন তাঁদের বইতে হয়নি, ছিল না সিঁদুর শাঁখা পলা নোয়া। কিন্তু গোষ্ঠীপতি চালিত সমাজে নারীরা পুরুষের কাছে এক কাম্য বস্তু হিসেবেই ছিল, যে কারণে সে যে বিবাহিত, তার চিহ্ন তাকে বয়ে নিয়ে বেড়াতে হতো। যা খুব দ্রুত হিন্দু সমাজেরও নিয়ম হয়ে পড়ে, মধ্যযুগে এক অন্ধকারের সূচনায় বংশানুক্রমিক চতুর্বর্ণের মতো এমন অনেক কিছুই চালু হয়। মহিলারা স্ত্রী-ধন, গরু ইত্যাদি পশু গো-ধন হিসেবে গণ্য হতে শুরু করে। পরে অবশ্য সেই স্ত্রী-ধনের অন্য কিছু মানেও এসেছে। সে যাই হোক আমি এক পুরুষের কাছে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ তা বোঝানোর জন্য মহিলাদের কিছু চিহ্ন ধারণ করার রীতি শুরু হল, যদিও পুরুষদের এমন কোনও চিহ্ন ছিল না। আজ এতদিন পরে ২০২৫-এ এক শিক্ষক হতে চাওয়া পরীক্ষার্থীদের অন্তত একজন তো জানিয়েই দিলেন যে শাঁখা নোয়া খুলে পরীক্ষা দেব না, তিনি পরীক্ষা হল ছেড়েই চলে গেছেন বলে শুনেছি। তিনি পরীক্ষা দেননি, বাঁচা গেছে, এমন এক বিশ্বাস মাথায় নিয়ে এক মহিলা কী করে শিক্ষিকা হয়ে বসতেন সেটাও তো এক বড় প্রশ্ন, কিন্তু অনেকেই বলেছেন যে যাঁরা শাঁখা নোয়া খুলে ঢুকেছেন, তাঁদের অনেকেই কেবল চাকরি তাই একটা কম্প্রোমাইজ, সমঝোতা করেছেন, তাঁরাও মন থেকেই এই সধবা চিহ্নকে বহন করারই পক্ষপাতী। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, একজন বিবাহিত পুরুষকে তিনি বিবাহিত বা বিপত্নীক তা বোঝাতে তো কোনও শাঁখা পলা নোয়া সিঁদুর পরা বা ছাড়ার কথা ভাবতে হয় না, তাহলে একজন বিবাহিতা নারীকে কেন সধবার বা বিধবার চিহ্ন বয়ে নিয়ে চলতেই হবে? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।

শাঁখার সবচেয়ে পুরনো ব্যবহার পাওয়া গেছে সুদূর বালোচিস্তানে, সেখানেই পাওয়া গেছে সবথেকে পুরনো শাঁখা। অথচ সেই বালোচ ভূমি থেকে এই বাংলাতে এসে থিতু হয়ে বসার আগে আর কোথাও সেই শাঁখার চিহ্নমাত্র নেই, নেই পঞ্জাব, হরিয়ানা, গুজরাট, রাজস্থান, উত্তর ভারতে। আবার আমাদের পশ্চিম উপকূল ধরে বাংলা সমেত বাকি রাজ্যতে শাঁখার জমজমাট ব্যবসা। কে যে কোনখান থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে তা কেউ জানে না। নোয়া নাকি লোহার বেড়ির অবশিষ্ট চিহ্ন, হতেই পারে, কিন্তু সেই নোয়া আজও এ বাংলাতে এতটাই পবিত্র যা এক পরিক্ষার্থীকে পরীক্ষা না দিয়ে ঘরে ফেরার প্রেরণা দেয়, হ্যাঁ আজও, এই ২০২৫-এ নোয়া পলা শাঁখা সিঁদুর থেকে গেছে মাথায়।

Read More

Latest News