Saturday, November 15, 2025
HomeScrollAajke | ঠিক যে কারণে নীতীশ জিতলেন, সেই কারণেই আগামী নির্বাচনে বাংলাতে...
Aajke

Aajke | ঠিক যে কারণে নীতীশ জিতলেন, সেই কারণেই আগামী নির্বাচনে বাংলাতে মমতা জিতবেন

বিজেপি হিন্দু মেরুকরণের দিকে যত ঝুঁকবে, তত সংখ্যালঘু ভোটের মেরুকরণ হবে!

Written By
অনিকেত চট্টোপাধ্যায়

২০২৫ বিহার বিধানসভা নির্বাচনে, শুধুমাত্র শতাংশের দিক থেকেই নয়, পরম সংখ্যার Absolute Numbers-এর দিক থেকেও মহিলারা পুরুষদের তুলনায় প্রায় চার থেকে পাঁচ লক্ষ বেশি ভোট দিয়েছেন। যদিও এবারে এসআইআর-এর পর এক বিরাট সংখ্যক মহিলা ভোটারের নাম কাটা পড়েছিল, তারপরেও মহিলাদের এই ভোট বাড়াটা কেবল গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটা অন্যতম এক্স ফ্যাক্টর। ভোটগ্রহণের প্রাথমিক হারে মহিলারা পুরুষদের চেয়ে অন্তত ৪.৩৪ লক্ষ ভোটে এগিয়ে। বিষয়টা চমকে দেওয়ার মতো। কারণ বিশেষ নিবিড় সংশোধনীর পর ভোটার রোলে নথিভুক্ত মহিলা নির্বাচকের সংখ্যা পুরুষদের চেয়ে ৪২ লক্ষ কম ছিল। এই হু-হু করে মহিলা ভোট বাড়ার পেছনে বিহার সরকারের মহিলা-কেন্দ্রিক বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্প, যেমন সাইকেল, পোশাক বা নগদ টাকা দেওয়া, কিছুটা হলেও সাধারণ আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি, আর স্থানীয় পঞ্চায়েত বা মিউনিসিপালিটি নির্বাচনে সংরক্ষণ থাকায় মহিলাদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বেড়েছে। এগুলোই প্রধান কারণ। বিহারের নির্বাচনে মহিলারা এক নির্ণায়ক ভোট-গোষ্ঠী বা ‘Decisive Vote-Bloc’ হিসেবে উঠে এসেছেন। ২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মহিলারা পুরুষদের তুলনায় ৮.৮ শতাংশ বেশি ভোট দিয়েছেন, যা এক নতুন রেকর্ড। আর সেই বিরাট মহিলাদের ভোটের এক বড়, বেশ বড় অংশ গেছে নীতীশ কুমারের দিকে। মহিলারা ভোট দিয়ে বাইরে এসে বলেছেন, “ওনার স্বাস্থ্য যাই হোক, উনি যে দলেই যান, উনি আমাদের জন্য করেছেন, আমরা ওনাকেই ভোট দেব।” আসলে আমরা চাই বা না চাই, মধ্যযুগের চাপিয়ে দেওয়া লিঙ্গ অসাম্য, পুরুষ ডমিনেশন, পুরুষ আধিপত্য কিন্তু কমছে। মহিলারা নিজেদের স্বাধীন কন্ঠস্বর নিয়ে সামনে আসছেন। হ্যাঁ, বিহারেও। আর সেই শেকল ভাঙার প্রাথমিক পর্যায়ে তাঁরা তাঁদের সঙ্গে নীতীশ কুমারকে পেয়েছেন, আর তাঁর ঋণ শোধ করলেন এই নির্বাচনে। হ্যাঁ, এটাই সারা ভারতে হবে, আগামী বাংলার নির্বাচনেও আমরা এটাই দেখব। সেটাই বিষয় আজকে।

বাংলাতেও ভোটের সমস্ত একুয়েশন এক্কেবারে বিহারের মতো। কেবল কুশীলবরা আলাদা। এখানে তৃণমূল সেই শাসকদল, যার কাছে আছে এক বিরাট মহিলা সমর্থন, যা ‘রক সলিড’, ক্রমশ বাড়ছে। তার সঙ্গে আছে সংখ্যালঘুদের ঢালাও সমর্থন। বিজেপি হিন্দু মেরুকরণের দিকে যত ঝুঁকবে, ততটাই সংখ্যালঘু ভোটের মেরুকরণ হবে। আর বিহারে এসআইআর ইস্যুটা কেবল ভোট চুরির মধ্যেই আটকে ছিল, কেবল গরীব কিছু মানুষের নাম বাদ দেওয়া মধ্যে আটকে ছিল, যে অভিযোগ কেবল কংগ্রেস করেনি, বিজেপি বা জেডিইউ-এর নেতা কর্মীরাও করেছেন। খেয়াল করে দেখুন, খুঁটিয়ে খবর পড়লে বোঝা যাবে পরিস্কার যে, বিহারের এনডিএ কিন্তু এই এসআইআর-কে তাদের জোটের কর্মসূচি বলে ঘোষণা করেনি যা এখানকার বিজেপি করেছে। বঙ্গ বিজেপির নেতারা এসআইআর-এর সমস্ত দায় আগে থেকেই নিজেদের মাথায় নিয়ে ফেলেছেন। কাজেই এসআইআর নিয়ে আলোড়ন তোলার পরে বিহারে হঠাৎই ভ্যানিশ হয়ে গেলেন রাহুল গান্ধী, উবে গেল সেই সমর্থন আর উন্মাদনা। এখানে, মানে বাংলায় কিন্তু তা হবে না। ক্রমশ মৃত্যু-তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে, কিছুদিন পরে বাদ যাওয়ার তালিকা সামনে এলেই আরও কেলো! যাঁদের নাম বাদ যাবে, তাঁদের এলাকা, তাঁদের পরিচিত ভোটারেরা তৃণমূলের দিকে ঝুঁকবেন।

আরও পড়ুন: Aajke | CAA আবেদনকারীদের নাগরিকত্ব ও ভোটাধিকার অন্ধকারে, দায় নেবে বিজেপি?

সব মিলিয়ে (১) মহিলাদের ভোট, যারা সরাসরি সরকারের সুযোগ সুবিধে পাচ্ছেন, (২) মুসলমান ভোটের চূড়ান্ত মেরুকরণ, (৩) এসআইআর-এর জন্য তৈরি হওয়া নতুন আবেগ – এগুলো সবকটাই কাজ করবে তৃণমূলের দিকে। অন্যদিকে বিজেপির সঙ্গে কেউ নেই, তারা একলা, তাদের কোর ভোট বড় জোর ২০ শতাংশ, বাকিটা বামেদের ভোট যা এসেছিল, খুব কম হলেও তা ফিরছে। অন্য কোনও নতুন ভোট ব্যাঙ্কের হদিশ তাদের কাছে নেই। আর বামেরা ঐ প্রশান্ত কিশোরের ভূমিকাতে – যদি কিছুটাও বেশি ভোট কাটেন, তাহলে বিজেপির ক্ষতি, মানে তৃণমূলের লাভ, অথচ তাঁরা যে নিজেরা বড় কিছু করতে পারবেন, তাও নয়। মানে এক্কেবারে বিহারের ভোটের স্টাইলে এখনই বাংলাতে ভোট হলে বিজেপি হারবে। বিহারের সঙ্গে তফাৎ একটাই – আরজেডি তবুও মুখরক্ষা করতে পেরেছে, বিজেপি তাও পারবে না। আর বামেরা যদি তাঁদের ৭ থেকে ৮ শতাংশ ভোট বিজেপির বাক্স থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন, তাহলে আগামী নির্বাচনের আগে বিজেপি আবার ‘পুনর্মুষিক ভব’, সেই ৮ থেকে ১০ শতাংশ ফিরে যাবে, রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে যাবে। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, মহিলাদের ভোট গোটা দেশেই এক নির্ণায়ক চেহারা নিচ্ছে। এ রাজ্যের মহিলারা সরকারের কাছ থেকে সরাসরি অনেক সাহায্য, ডাইরেক্ট ক্যাশ ট্রান্সফার ইত্যাদি পাচ্ছেন বিভিন্ন স্কিমের মাধ্যমে, সেই মহিলা ভোটই কি আগামী বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবচেয়ে বড় অস্ত্র?

ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দলের মধ্যে মহিলাদের পার্টিসিপেশন বাড়িয়েছেন মমতা, মন্ত্রিসভায়, বিভিন্ন জেলায়, মিউনিসিপ্যালিটি, পঞ্চায়েত, বিধায়ক, সাংসদ, সব জায়গাতেই বেড়েছে মহিলাদের অ্যাকটিভ পার্টিসিপেশন। দেখার মত এক ব্যাপার। এটা বাম জামানাতেও আমরা দেখিনি। আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মহিলাদের জন্য নানান প্রকল্প, মহিলা ক্ষমতায়ণের এক পরিকল্পনাই আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রক সলিড ভোট ব্যাঙ্ক। হ্যাঁ, এই ভোট ব্যাঙ্কই বিহারে জিতিয়েছে নীতীশ কুমারকে, বাংলাতে জেতাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

দেখুন ভিডিও:

Read More

Latest News